রমজানে স্থিতিশীল থাকুক নিত্যপণ্যের দাম
রমজানে ছোলা, খেজুর, চিনি ও ভোজ্যতেলের সঙ্গে মাংস ও ডিমের মতো অতি প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর চাহিদা তুলনামূলক বেশি থাকে। এই সুযোগে একটা সংঘবদ্ধ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বিভিন্ন দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। রোজা শুরু হতে আর বেশি দিন বাকি নেই। এরই মধ্যে অনেক পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
বলা বাহুল্য, নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় কিছুটা স্থিতিশীল হলেও নতুন সরকার দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই বাড়তে শুরু করে বাজারের উত্তাপ। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে চাল, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম, তেল, পেঁয়াজের মতো ভোগ্যপণ্যের দাম। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ঠুনকো অজুহাতে দফায় দফায় বাড়ায় জিনিসপত্রের দাম। এতে বিপাকে পড়ে সাধারণ মানুষ। বিগত কয়েক বছরের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, প্রতি বছর রমজান এলেই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। এমনকি কিছু পণ্যের দাম ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যায়। অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন ওঁৎ পেতে থাকে এ মাসের জন্য। প্রশাসনও নড়েচড়ে বসে। সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় নানা পদক্ষেপ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব পদক্ষেপ-প্রতিশ্রুতি থেকে যায় কাগজে-কলমে। বাস্তবে কার্যকর হয় না। তবে সরকার এবার খড়গহস্ত। আগেভাগেই বাজার নিয়ন্ত্রণের তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। আসন্ন রমজান মাসে পণ্যের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষকে যেন দুর্ভোগে না ফেলেন, সেজন্য নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের পর ইশতেহারের ঘোষণা অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন বাজারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের ওপর। সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি।
যেকোনো মূল্যে মূল্যস্ফীতি কমানোর তাগিদ দিয়েছেন সরকারপ্রধান। প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনা পেয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলো। রমজান মাস সামনে রেখে নিত্যপণ্যের বাজারে লাগাম টানতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে তারা। এসবের মধ্যে রয়েছে পণ্য আমদানি, অবৈধ মজুদদার ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান এবং আমদানি পণ্যের কর ও শুল্ক কমানো। এরই মধ্যে চাল, চিনি ও খেজুরের ওপর শুল্ক কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সেই সঙ্গে ভোজ্যতেলের মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার এনবিআর আলাদা আলাদা প্রজ্ঞাপনে চাল, তেল, চিনি ও খেজুরের শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিয়েছে।
প্রয়োজনে জরুরি আইন প্রয়োগ করে বাজারে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ হস্তশিল্প প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বাংলাক্রাফট) সভাপতির নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এবার একটু আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। আগে যেভাবে সরকারের পক্ষ থেকে বলার পরও দাম কমেনি, সেটা আর হবে না।’ বাজার নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় সাধুবাদ জানিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, সরকারের যে সদিচ্ছা, তা বাস্তবায়নের জন্য সমন্বিত বাজার তদারকির কাজ করতে হবে। তবেই সরকার সফল হবে, নিয়ন্ত্রণে আসবে মূল্যস্ফীতিও। প্রতি বছরই চলে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং। এরপরও বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় না। যথারীতি পণ্যের দাম বেড়েছেই। দৃশ্যমান শাস্তির ব্যবস্থা না নিলে এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। প্রতিমন্ত্রী এবার আস্থা রাখার কথা বলেছেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমরাও সেই আস্থা রাখছি। সরকার এবার বাজার নিয়ন্ত্রণে আগের চেয়ে কঠোর হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
"