reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

জলবায়ু বিপর্যয় রুখতে সবাইকে একযোগে দাঁড়াতে হবে

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্ষতির প্রভাব দিন দিন বাড়ছে। কারণ পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে আবহাওয়া চরম ভাবাপন্ন হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও আগাম কিংবা বিলম্বে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, ভূমিকম্প, নদীভাঙন, জলাবদ্ধতা ও উপকূলীয় ফসলি জমিতে লবণাক্ততা এক দশকে বহুলাংশে বেড়েছে। এসবই অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে সম্পর্কিত ক্ষয়ক্ষতি এবং এর প্রতিরোধ, হ্রাস ও মোকাবিলায় যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। প্রাকৃতিক কারণে জলবায়ুতে স্বাভাবিকভাবেই কিছু পরিবর্তন হয়। কিন্তু যে মাত্রায় এখন তাপমাত্রা বাড়ছে, তার প্রভাব মানুষের কর্মকাণ্ডেরই ফল। জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে ও সুরক্ষায় পাঁচ দফা লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছেন পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা। তবে এর বিরুদ্ধে নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন উন্নত দেশগুলোর প্রতিনিধিরা। এ নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে এবারের জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৮) পাল্টাপাল্টি বিতর্ক শুরু হয়েছে। গত মঙ্গলবার এ জলবায়ু সম্মেলনে জোরালো বিতর্ক হয়। পাঁচ দফা লক্ষ্য বিষয়ে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। কার্বন নিঃসরণের পাশাপাশি এবার প্রথমবারের মতো স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে পৃথক তহবিল গঠন করা হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের এক্সপো-২০২০ সিটিতে চলমান জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৮) বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় তহবিল গঠনের অঙ্গীকার করেছেন বিশ্বনেতারা। জাতিসংঘ আয়োজিত এই সম্মেলনে অংশ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো জলবায়ু তহবিলের ন্যায্য বণ্টনের দাবি জানিয়েছে। সম্মেলনের প্রথম দিন থেকে শুরু করে ষষ্ঠ দিনেও গুরুত্ব পেয়েছে তহবিলের বিষয়টি। সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের এক ঘোষণায় নতুন আশার সঞ্চার করেছে। ১৩ দিনের এ সম্মেলনের গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের জন্য ৩০০ কোটি ডলার অনুদান ঘোষণা করেন, যা এ যাবৎকালে এই খাতে সবচেয়ে বড় অনুদান। কপ-২৮-এর সভাপতি ড. সুলতান আল জাবের বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য জ্বালানির সক্ষমতা বাড়ানোর অঙ্গীকার ঘোষণা করেন। বৈশ্বিক উষ্ণতা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ঘোষণায় গতকাল পর্যন্ত ১১৭টি দেশ অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। সুলতান আল জাবের একই সঙ্গে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামানোরও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, দুবাই জলবায়ু সম্মেলন শুরুই হয়েছে ‘তহবিল’ বার্তা দিয়ে। তহবিল অবশ্যই জরুরি কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বহু গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার ও দাবি তহবিলের আড়ালে চাপা পড়ে যেতে পারে। জলবায়ু প্রশ্নে এখন পৃথিবীর মানুষ ন্যায্যতার দাবি তুলেছে। তবে সম্মেলনের শুরু থেকে প্রতিদিনই জলবায়ু অর্থায়নের সারিতে যোগ হচ্ছে নতুন দেশ। আর এসব অর্থায়নের বেশির ভাগই আবার বিনিয়োগ হিসেবে দেওয়ার প্রস্তাবও রয়েছে। অথচ বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর দাবি ন্যায্যতার ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ।

প্রাকৃতিক কারণে জলবায়ুতে স্বাভাবিকভাবেই কিছু পরিবর্তন হয়। কিন্তু যে মাত্রায় এখন তাপমাত্রা বাড়ছে তা মানুষের কর্মকাণ্ডই প্রধানত দায়ী। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে হুমকির সম্মুখীন আজ বিশ্ব। এই হুমকি মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টার কোনো বিকল্প নেই, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্র, রাষ্ট্র থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, সবাইকে একযোগে দাঁড়াতে হবে বিপর্যয় রুখতে। আমাদের প্রত্যাশা, সবার মধ্যে সেই চেষ্টাটাই থাকবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close