আফরিন সুলতানা মীম

  ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

মুক্তমত

নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে

নারী নামটা শুনলেই সবার মনের ধারণা আসে গুরুত্বহীন অবহেলিত, সমাজের ও পরিবারের বোঝা। সে পৃথিবীতে আসার সংবাদে খুশি হওয়ার বদলে দাদি-নানিরা কপাল কুঁচকায়। যার জন্মেতেও কারো মুখের হাসি ফুটাতে পারে না, সে পৃথিবীতে থাকা অবস্থাতেই বা কারো মুখে কীভাবে হাসি ফুটাবে? জন্মের পর থেকেই শুরু হয় হাজারো বৈষম্যের শিকার। নারী যখন চার দেয়ালে আবদ্ধ থাকে, তখন তাকে বলে অযোগ্য, অসামাজিক। যখন সে ঘরের চৌকাঠ পেরোয় তখন তাকে অসভ্য, চরিত্রহীনা অপবাদ পেতে হয়। নারীকে প্রতিটি মুহূর্তে আতঙ্ক, অনিরাপত্তা নিয়ে চলতে হয়। কোনো অঘটন ঘটলেও সে দায়ভার নারীকেই নিতে হয়। তখন বলে সে কেন ঘর থেকে বের হলো। প্রতিটি নারীর জীবনের পেছনের গল্পটা হাজারো সংগ্রামের। যে সংগ্রামের সঙ্গী কেউ হতে চায় না। অথচ সে সংগ্রামের পথে বাধা দেওয়ার জন্য সবাই প্রস্তুত।

নারী নির্যাতন মানেই আমাদের ধারণা, শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন। আসলে মেয়েরা বাবার বাড়িতেও নির্যাতিত হয়। সেটা শারীরিক না হলেও মানসিক। ছোট থেকে চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে মাধ্যমিক গণ্ডি পার না হতেই সমাজের কটুকথা, পরিবারের চাপে সে স্বপ্নকে ভেঙে পরিবারের ইচ্ছাপূরণ করতে মেয়েদের ঘর বাঁধতে হয় টাকার সঙ্গে। কারণ আমাদের সমাজ ভালো জীবনসঙ্গী থেকে বেশি টাকাওয়ালা সঙ্গীর প্রাধান্য বেশি দেয়।

তারপর সবাই বলে, পরিবারের পছন্দে বিয়ে করলে সুখী হওয়া যায়, টাকা ছাড়া সুখ হয় না। সবার কথা ভেবে, যখন ঘর বাঁধে সুখের নীড়ের জন্য, সেখানে যখন অসুখী হয়, তখন শুনতে হয়, তোমার ভাগ্য খারাপ। মেয়েদের সবকিছু সহ্য করে মেনে নিতে হয়। এটি মানতে গিয়ে আমাদের নারীদের শুনতে হয় তোমাদের নিজের বাড়ি নেই। অথচ এই নারীকে ছাড়াই বাবার বাড়ি, শ্বশুরবাড়ি অসম্পূর্ণ। তারপর শুরু হয় জীবনযুদ্ধ। সবার মন রক্ষার্থে সে ভোরে উনুন জ্বালানো থেকে শুরু করে, রাতে সবার খাবার শেষে এঁটো খাবার নিয়ে বসে থাকা, সেই নারীকে ও শুনতে হয়, সারা দিন কী করেছো, তোমাকে নিয়ে আর থাকা যাচ্ছে না, জন্ম দেওয়া সন্তান থেকেও শুনতে হয় তোমাকে নিয়ে কীভাবে বন্ধুদের সামনে মুখ দেখাব!

নারীরা শুধু চায় একটু সম্মান, একটু ভরসা। তাকে সবাই তার মতো করে বুঝুক। যেগুলো মূল্য দিয়ে কিনতে হয় না, কিন্তু এই সামান্য জিনিসগুলোও তাদের ভাগ্যে জুটে না। শুধু তা-ই নয়, আজকাল শুধু অশিক্ষিত পরিবার থেকেই নয়, শিক্ষিত নামক সেই উঁচু দালানের মনুষ্যত্বহীন পরিবার থেকেও শুনতে হয় যৌতুক আনতে হবে, ছেলেসন্তান জন্ম দিতে হবে। কিন্তু আমাদের ভাবা দরকার, ছেলেদের যেমন লালনপালন করতে কষ্ট হয়েছে, তেমনি মেয়েটাকে লালনপালনে তদ্রূপ কষ্ট করতে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের ঘরে ছেলের বউ হয়ে আসা মেয়েটাকেও একইভাবে লালনপালন করে বড় করে, বিনা টাকায় আমার ঘরে পাঠিয়েছে। যেখানে আমার টাকা দিয়ে বউ আনার কথা ছিল, সেখানে বাবাকে কেন মেয়েকে টাকা দিয়ে মেয়ে বিক্রি করতে হবে?

ছেলেসন্তান ছাড়া বংশের বাতি জ্বলে না। এটাও ভাবা দরকার মেয়েসন্তানের জন্ম না হলে সে ছেলেকে কেন জন্ম দেবে। যেখানে ছেলেসন্তান নাকি মেয়েসন্তান হবে সবটা নির্ভর করে বাবার ওপর। সেখানে আমাদের সমাজে মেয়েসন্তান জন্ম দেওয়ার কারণে মাকে সহ্য করতে হয় অসহ্য লাঞ্ছনা। এমনি মেয়েসন্তান হবে বলে, সেখানে অনেক সময় তাকে পৃথিবীর আলোই দেখানো হয় না। কেন আমাদের এত নোংরা মনুষ্যত্ব? যেখানে সৃষ্টিকর্তাই বলেছেন, কন্যাসন্তান জন্ম দিলে তাকে মানুষের মতো মানুষ করতে পারলে জান্নাত লাভ করা যায়। সেখানে কেন নারী আজও এত অবহেলিত, কেন তাদের আজও শারীরিক, মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়? নারীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো দরকার। না হয় আমাদের এই সুন্দর জীবন জীবনভর অসুন্দর থেকে যাবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close