নির্বাচন হতে হবে সব ধরনের প্রভাবমুক্ত
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আসছে বছরের শুরুতেই অর্থাৎ ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নতুন বছরে নতুন সূর্যোদয়ের মতো দেশ পাবে একটি নতুন সরকার। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ভোটগ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। সবারই প্রত্যাশা একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে দেশে। নির্বাচন কমিশনও সেটি করতে বদ্ধপরিকর।
বলা বাহুল্য, নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে অপরাধ জগতের সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য। কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে তারা সর্বত্র তৈরি করছে অরাজকতা। দেশের বিভিন্ন নির্বাচনকালীন সময়ে ‘আন্ডারওয়ার্ল্ডের’ এসব অপরাধীর কদর বেড়ে যায়। ভাড়াটে হিসেবে তারা কোনো না কোনো প্রার্থীর পক্ষে অপরাধমূলক তৎপরতা চালায়। ফলে এ সময় অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারও বেড়ে যায়। এ ছাড়া সারা বছরই চলে চাঁদাবাজি, আর তাদের নেতৃত্বেই পরিচালিত হয় মাদক ব্যবসা। তবে সেই আন্ডারওয়ার্ল্ড এখন আর আগের মতো নেই। না থাকার কারণ বর্তমান সরকারের নানা কঠোর পদক্ষেপ। প্রকাশ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অবস্থান দেখা না গেলেও, তাদের নামণ্ডডাক ছড়িয়ে আছে। অনুসারী সন্ত্রাসীরা তাদের নাম ব্যবহার করে ভয় দেখিয়ে, অস্ত্র প্রদর্শনের পর চাঁদা আদায়ের কাজটি অব্যাহত রেখেছে।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে নির্বাচনী এলাকার সন্ত্রাসী, ক্ষমতার দাপট বিস্তার করে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি এবং উঠতি মাস্তানদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করতে এবং নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূলে রাখতে এলাকার এসব চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও মাস্তানদের তালিকা করে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে পাঠানো চিঠিতে বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন থেকে বিরত থাকা এবং বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়। কমিশনের লক্ষ্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা।
ইসির নির্দেশনায় বলা হয়, সব শ্রেণির ভোটার যাতে তাদের ভোটাধিকার অবাধ ও নির্ভয়ে প্রয়োগ করতে পারেন, তার নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও স্থানীয় আস্থাভাজন কর্মীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আইন ও বিধিগত দিক উল্লেখপূর্বক সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করতে হবে। কারো অভিযোগ থাকলে তা অবিলম্বে তদন্ত-পূর্বক প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ভোটকেন্দ্র এবং ভোটকক্ষের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাসহ সব বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার পরিচালনা জোরদার করতে হবে। চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের তালিকা প্রণয়নপূর্বক চাঁদাবাজ, মাস্তান ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করতে হবে। পর্যাপ্ত সংখ্যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভোটকেন্দ্রে মোতায়েনসহ চিহ্নিত গোলযোগপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে বেশি সংখ্যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের ব্যবস্থা করতে হবে।
হাবিবুল আউয়াল কমিশনের অধীনে এটাই প্রথম জাতীয় নির্বাচন। সে হিসেবে এই নির্বাচন বেশ চ্যালেঞ্জিং। এর আগে ‘ট্রায়াল’ হিসেবে কয়েকটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করেছে। সেই পরীক্ষা ভালোভাবে উতরে গেছে ইসি। জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি পর্বে কমিশন এখন পর্যন্ত বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে চলেছে সেটা বলা যায়। আমরা আশা করব, চাঁদাবাজ, মাস্তান ও সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করে নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের সফল আয়োজন করতে পারবে। একই সঙ্গে ভোটাররা নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে যাবে এবং ভোট দিতে পারবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
"