reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

মাঝারি ভূমিকম্পে বড় সতর্কবার্তা

ফের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা। এর আগের কয়েকটি ভূমিকম্পের মতো গত শনিবারের ভূমিকম্পেরও উৎপত্তিস্থল ছিল দেশের ভেতরেই। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য অনুসারে, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় উৎপত্তিস্থলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬। এটিকে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প বলা হচ্ছে।

ভূমিকম্পের এই উৎপত্তিস্থলকে সাবডাকশন জোন (সিলেট থেকে কক্সবাজার অঞ্চল) হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এই জোনে যে বিপুল শক্তি প্রায় হাজার বছর ধরে সঞ্চিত হয়ে আছে, তাতে যেকোনো সময় ৮ দশমিক ২ থেকে ৮ দশমিক ৯ মাত্রা পর্যন্ত ভূমিকম্প হতে পারে। এক গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, সাবডাকশন জোন- সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ হাওর হয়ে মেঘনা নদী দিয়ে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে চলে গেছে। এই রেখা ভারতের প্লেট, যেটা পশ্চিমে অবস্থিত, সেটি পূর্বের যে পাহাড়ি অঞ্চল, তার নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। এই জোনে বিপুল শক্তি প্রায় হাজার বছর ধরে সঞ্চিত হয়ে আছে। এই জোনের মধ্যে আবার দুটি ভাগ আছে। একটা হলো লক জোন, যেটি আমাদেরই অংশ। সেখানে ভারত ও মিয়ানমার প্লেট আটকে আছে, একটির সঙ্গে আরেকটি। আর আরেকটি জোন হলো আমাদের পূর্বদিকের অঞ্চল যেটি মিয়ানমার ও মিজোরাম অঞ্চলে। এ অঞ্চলে প্রায়ই ভূমিকম্প হওয়ার খবর পত্রপত্রিকায় আসে। তবে আমাদের অঞ্চলটিতে সব সময় এমন ভূমিকম্প হয় না। কয়েক বছর ধরে দেখা গেছে, দেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প হচ্ছে। এটা বড় ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার পূর্বলক্ষণ। সাবডাকশন জোনে যে ভূমিকম্প হবেই তার কোনো বিকল্প নেই। কারণ যে পরিমাণ শক্তি জমা হয়ে আছে তা এক দিন না এক দিন বের হবেই। সেটি আজ হোক, কাল হোক বা ৭০ বছর পরে হোক। তা যদি হয় তবে তা হবে মারাত্মক ধরনের ভূমিকম্প। আর ক্ষয়ক্ষতি বেশি হবে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামের মতো জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোয়।

ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞদের হিসাবে, গত ২৫ বছরে দেশের ভেতরে সৃষ্টি হওয়া ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে শনিবারের ভূমিকম্পটি ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী। ১৯৯৮ সালের মে মাসে সিলেটের বড়লেখায় ৫ দশমিক ৮ মাত্রার একটি ভূকম্পন সৃষ্টি হয়েছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এ বছর দেশে এখন পর্যন্ত ৫ মাত্রার ওপরে ছয়টি ভূমিকম্প হয়েছে। এর আগে ২০২২ সালে মাঝারি মাত্রার বা রিখটার স্কেলে ৫-এর ওপরে তিনটি ভূমিকম্প হয়। অথচ ১৯৭২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে যে কটি ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়েছে, তার মধ্যে মাঝারি মাত্রার কম্পনের ঘটনা ঘটেছে প্রতি দুই থেকে চার বছরে একবার। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাঝারি মাত্রার কম্পন হঠাৎ বেড়ে গেছে।

কোনো কোনো ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞ বলছেন, জাপান, নেপাল বা আফগানিস্তানের মতো শক্তিশালী ভূমিকম্পের খুব বেশি আশঙ্কা বাংলাদেশে নেই। দেশের ভেতরে ৬ থেকে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার ঘটনাও খুব কম। দেশের বিশেষজ্ঞরা এ কথা অনেক দিন ধরে বলে আসছেন। অবশ্য রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলোর জন্য মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প বিপদ ডেকে আনতে পারে বলেও তারা মনে করছেন। যে মাত্রারই ভূমিকম্প হোক না কেন, দুর্যোগ মোকাবিলার একটা প্রস্তুতি আমাদের থাকা দরকার। সেদিকটাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর দেবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close