জলবায়ুর অভিঘাত
ক্ষতিগ্রস্ত দেশের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন
বর্তমান বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন একটি নৈমিত্তিক ঘটনা। এই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বৈশিক উষ্ণতা নামে অধিক পরিচিত। জলবায়ুর পরিবর্তন সমীক্ষা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত যে পৃথিবীর জলবায়ু পদ্ধতির পরিবর্তনে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর অবদান রয়েছে। কার্বন-ডাইঅক্সাইডের ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ, পৃথিবীর তাপমাত্রার চড়াই-উতরাইয়ে অতীতে যেমন মুখ্য নিয়ামক ছিল কার্বন-ডাইঅক্সাইড, ভবিষ্যতেও তেমন থাকবে। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন, জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের কার্যকলাপের ফল, যা বিশ্বে অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটাতে পারে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২১৬ মিলিয়ন লোককে বাস্তুচ্যুত করতে পারে, এর মধ্যে ৪০ মিলিয়ন এককভাবে দক্ষিণ এশিয়ার। বাংলাদেশে আমাদের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ উপকূলীয় অঞ্চলে বাস করে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ, ঘন ঘন বন্যা এবং প্রবল ঘূর্ণিঝড় তাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। এ ধরনের স্থানচ্যুতি আমরা যা ভাবি, তার চেয়ে দ্রুত গতিতে ঘটছে। জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত জাতিসংঘের আন্তসরকার প্যানেল (আইপিসিসি) তাদের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলেছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এখনই কমানো না গেলে শিগগিরই বিশ্ববাসীকে গুরুতর পরিণতি ভোগ করতে হবে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে বিশ্বে খরা, বন্যা ও তাপপ্রবাহের মতো বিপর্যয় বাড়তেই থাকবে।
এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু বাস্তুচ্যুতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ মানব-সংকটের মুখোমুখি হওয়া থেকে তাদের রক্ষায় মানব গতিশীলতার পাঁচটি বিষয়ের ওপর নজর দেওয়া দরকার। বেশির ভাগ জলবায়ু স্থানচ্যুতি জাতীয় সীমানার মধ্যে এবং কিছু ভয়ানক পরিস্থিতিতে সীমান্তের ওপারে ঘটে। এ ধরনের পরিস্থিতি যাতে মানবিক সংকটে পরিণত না হয়, সেজন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা ও সংহতি প্রয়োজন।’
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষের চলাফেরায় যে প্রভাব পড়ছে, তা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছেন। এগুলো হচ্ছে- প্রথমত, আমাদের নিরাপদ, সুশৃঙ্খল এবং নিয়মিত অভিবাসনের জন্য গ্লোবাল কমপ্যাক্টের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অধিকারভিত্তিক পদ্ধতিতে মানব গতিশীলতার ওপর জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, জলবায়ু অভিবাসীদের অভিঘাত এবং ক্ষতির প্রসঙ্গে নির্দিষ্ট সমাধান খুঁজে বের করার জন্য জলবায়ু ন্যায্যতার আলোকে আমাদের পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে। তৃতীয়ত, অভিবাসনকে জলবায়ু অভিযোজন কৌশল হিসেবে দেখার জন্য আমাদের স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে প্রস্তুত হতে হবে, যেখানে এটি সর্বোত্তম সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে প্রমাণিত হবে। চতুর্থত, জলবায়ু অভিবাসী, বিশেষ করে নারী, শিশু এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের বিদ্যমান আন্তর্জাতিক সুরক্ষা মান পর্যালোচনা করতে হবে। পঞ্চমত, সংকীর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে এটির জন্য একটি গঠনমূলক অবস্থান তৈরিতে মানব গতিশীলতার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিষয়ে আমাদের উন্নত গবেষণা ডেটা এবং প্রমাণের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করা উচিত।
বাংলাদেশের জলবায়ুর পরিবর্তন ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য সর্বস্তরের জনগোষ্ঠীকে সচেতন করা একান্ত প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী যে পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছেন সেগুলোকে বাস্তবায়ন করা গেলে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া যাবে। এজন্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তায় আন্তর্জাতিক মহলকে এগিয়ে আসতে হবে।
"