মো. উজ্জ্বল মিয়া

  ৩০ নভেম্বর, ২০২৩

মুক্তমত

জিপিএ ৫ ছাড়াও স্বপ্ন ছোঁয়া যাবে

প্রতি বছর পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর শোনা যায় জিপিএ ৫ না পাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী হীনমন্যতায় ও আত্মগ্লানিতে আত্মহননের পথে পা বাড়ায়। ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায় হাজার হাজার শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে। এই আনন্দ তারা নেচে-গেয়ে উদযাপন করে। দীর্ঘদিনের কঠোর পরিশ্রম আর প্রস্তুতির পর এমন সাফল্য তাদের অভিভাবকদের মুখে হাসি ফুটায়। মিষ্টি বিতরণ হয় বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের বাসায়। গলায় তৃপ্তির ঢেকুর ওঠে আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের। মুদ্রার ওপিঠে যারা কঠোর পরিশ্রম ও প্রাণপণ চেষ্টা করেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল জিপিএ ৫ অর্জন করতে পারেনি। ভাগ্য যাদের সহায় হয়নি হতাশা, অনুশোচনা ও গ্লানি তাদের আঁকড়ে ধরে। ফলে অনেকেই নিজের অজান্তে নীরবে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।

শিক্ষার্থীরা মনে করে জিপিএ ৫ না পাওয়া মানেই জীবন ব্যর্থ। যারা ভালো ফলাফল করেছে তাদের সঙ্গে তাদের তুলনা করা এই শিক্ষার্থীদের হীনমন্যতা আরো তীব্র করে। তাদের বোঝানো হয় যারা জিপিএ ৫ পেয়েছে তারা সফল। তুমি সফল হতে পারোনি। অর্থাৎ ব্যর্থ হয়েছো। অভিভাবক থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সবাই তাদের নিয়ে কটূক্তি করে। অথচ জিপিএ ৫ জীবনে সফলতার একমাত্র মানদ- নয়। অভিভাবকদের উচিত ছেলেমেয়েকে অন্যের সঙ্গে তুলনা না করে উৎসাহ প্রদান করা। তাদের মনোবল শক্ত করার পরামর্শ প্রদান করা। হতাশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের প্রতি বিরূপ আচরণ এবং উদাসীনতা তাদের আত্মহননের পথে প্ররোচিত করে।

গত বছর জিপিএ ৫ প্রাপ্ত প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে আসন পায়নি। কারণ দেশের শীর্ষস্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ মিলিয়ে আসন রয়েছে ৮০ হাজারের মতো, যা জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের তুলনায় অনেক কম। জিপিএ ৫ না পেয়েও হাজার হাজার শিক্ষার্থী শীর্ষস্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয় তাদের পরিশ্রম, মেধা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদে অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে, যাদের এসএসসি বা এইচএসসি অথবা কোনো পরীক্ষাতেই জিপিএ ৫ ছিল না। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজেও এমন উদাহরণ পাওয়া যাবে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক, বিসিএস ক্যাডার, আমলা ও সফল ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা সব পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পায়নি।

অনেকেই হয়তো অবগত যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য জিপিএ ৫ পাওয়া বাধ্যতামূলক নয়। ন্যূনতম জিপিএ হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন ফর্ম পূরণ করা যায়। গত বছরের তথ্যানুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার জন্য এসএসসি ও এইচএসসি ০২ পরীক্ষা মিলে কলা অনুষদের (মানবিক বিভাগ) জন্য ৭.০০, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের জন্য ৭.৫০, বিজ্ঞান অনুষদের জন্য ৮.০০ এবং চারুকলা অনুষদের জন্য ৬.৫০ জিপিএ প্রয়োজন হয়। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য জিপিএ ৯.০০ এবং এককভাবে কোনো পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৫০ বা এর বেশি প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ও অনুষদভেদে ৬.৫০ থেকে তদূর্ধ্ব জিপিএ হলেই আবেদন করা যায়।

সামনে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা রয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না পেলেও জীবনে সফল হওয়া যাবে। জীবনের সফলতাই প্রকৃত সফলতা। এজন্য চাই কঠোর ও পরিকল্পনামাফিক পরিশ্রম ও একাগ্রতা। স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের আসন নিশ্চিত করতে পারলে এইচএসসি পরীক্ষার ব্যর্থতা অনেকটাই লাঘব হয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য নিয়মিত পড়াশোনা, পরীক্ষা দেওয়া, ঘাটতিগুলো খোঁজে বের করা এবং সেখানে গুরুত্ব দেওয়া সেই স্বপ্নের সিঁড়িতে পা রাখতে সহায়তা করবে। সর্বোপরি দৃঢ় মনোবল নিয়ে পরিশ্রম করতে থাকলে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হবেই।

লেখক : সাবেক শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close