reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৯ নভেম্বর, ২০২৩

রেমিট্যান্সপ্রবাহে গতি আনতে হবে

দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান দুটি খাত হচ্ছে তৈরি পোশাকশিল্প ও বৈদেশিক শ্রমবাজার। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব, পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপক ছন্দপতন ঘটিয়েছে। তার নেতিবাচক প্রভাব থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়। প্রথমদিকে কাঁচামালের অভাব ও কার্যাদেশ বাতিল হওয়ায় পোশাকশিল্পকে এর ধকল ব্যাপকভাবে সামাল দিতে হয়েছে। অন্যদিকে করোনার হানায় প্রবাসীরা কর্মহীন হয়ে পড়ায় রেমিট্যান্সপ্রবাহে সৃষ্টি হয় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি, যা রীতিমতো উদ্বেগের। এ অবস্থায় বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বিষয়ে সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি।

বলা সংগত, বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমছে। এর প্রভাবে ব্যাংকগুলোয় কমে গেছে ডলারের সরবরাহ; বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ হচ্ছে না ডলার। এতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে বেড়ে যাচ্ছে ডলারের দাম। ব্যাংক ও খোলাবাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে নগদ ডলার। এ পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে না পারলে অর্থনীতিতে বিদ্যমান সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।

জানা যায়, গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে বিদেশ গেছেন ৬ লাখ ১৫ হাজার কর্মী। চলতি বছরের একই সময়ে গেছেন ৬ লাখ ১৮ হাজার কর্মী। বর্তমানে বিদেশে কর্মরত প্রবাসীর সংখ্যা গত জুন পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪৯ লাখে। বিদেশে যাওয়া নতুন কর্মী এবং মোট প্রবাসীর সংখ্যা বাড়লেও রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে যাচ্ছে। রেমিট্যান্স কমায় রিজার্ভ বাড়ছে না।

এদিকে ডলারের দাম বৃদ্ধিতে বাড়ছে মূল্যস্ফীতির হার, যা পুরো অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। গতকাল প্রতিদিনের সংবাদে প্রকাশিত ‘রেমিট্যান্সপ্রবাহ নিম্নমুখী’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- চলতি বছর নভেম্বরের প্রথম ২৪ দিনে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৪৯ কোটি ২৯ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। দৈনিক গড়ে এসেছে ৬ কোটি ২২ লাখ মার্কিন ডলার। নভেম্বরের প্রথম ১০ দিনে প্রবাসীরা দৈনিক গড়ে ৭ কোটি ৯৪ লাখ মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন। এ হিসেবে রেমিট্যান্সপ্রবাহ নিম্নমুখী ধারায় চলছে। গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করে এ তথ্য জানা গেছে। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি মাসের ২৪ দিনে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৩৪ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১০ কোটি ৫২ লাখ ৪০ হাজার ডলার, একটি বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ কোটি ১৫ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪৫ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার।

দেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে ১০টি দেশ থেকে। এর মধ্যে প্রধান ছয়টি দেশ থেকে রেমিট্যান্স কমছে। জানা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্সপ্রবাহ হুন্ডির কারণে কমে গেলে তা বন্ধ করতে সরকারের একটি প্রতিনিধিদল দেশটিতে গিয়ে এর কারণ অনুসন্ধান করে এবং এর ভিত্তিতে ওই দেশের সঙ্গে আলোচনা করে হুন্ডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ফলে আমিরাত থেকে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়তে শুরু করে। বর্তমানে ইউরোপ থেকে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়লেও বহু দেশ থেকেই কমছে। এর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হলে আশা করা যায় রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়বে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close