reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৬ মার্চ, ২০২৩

সমুন্নত হোক মুক্তিযুদ্ধের চেতনা

পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জ্বলন্ত/ঘোষণার ধ্বনিপ্রতিধ্বনি তুলে,/নতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগবিদিক/এই বাংলায়/তোমাকেই আসতে হবে, হে স্বাধীনতা (শামসুর রাহমান)। সত্যিই এসেছে বাংলায় সেই স্বাধীনতা। আর এই স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য ভাসতে হয়েছে ‘রক্তগঙ্গায়’। এই স্বাধীনতা পাওয়ার জন্যই ‘সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো; সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল হরিদাসীর; শহরের বুকে জলপাইয়ের রঙের ট্যাঙ্ক এলো দানবের মতো চিৎকার করতে করতে; ছাত্রাবাস বস্তি উজাড় হলো; রিকয়েললেস রাইফেল আর মেশিনগান খই ফোটালো যত্রতত্র; ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম; অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিলো পিতামাতার লাশের উপর।’ আরো কত ত্যাগ-তিতিক্ষা করতে হয়েছে। আজ বাঙালির গৌরবদীপ্ত দিন- মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের বুকে বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানিরা শুরু করে গণহত্যা। সেদিন মধ্যরাতের পরপরই বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, ‘আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।’ কালরাতের ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বাঙালি এই দিন থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ স্বাধীন করার শপথ গ্রহণ করে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের সিঁড়ি বেয়ে ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে বাংলাদেশ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের স্ফূলিঙ্গে উজ্জীবিত সশস্ত্র জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের মুক্তির ইতিহাস-স্বাধীনতার ইতিহাস। রাষ্ট্রভাষার অধিকার আদায়ে জাতিকে প্রাণ দিতে হয় ৫২-তে। এরপর পাকিস্তানি শাসক চক্রের ক্রমাগত শোষণ-বঞ্চনা, বৈষম্য, অধিকার হরণ আমাদের ক্ষোভকে জমাটবদ্ধ করে। ১৯৬৬-এর ৬ দফা, ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান- এসবের ধারাবাহিকতায় আসে ৭০-এর নির্বাচন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে এবং সমগ্র পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। স্বৈরসামরিক চক্র গণতন্ত্রের রায় মেনে নিতে পারেনি। শুরু করে নানা টালবাহানা, ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত। সারা বাংলার মানুষের প্রাণের দাবি শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা পরিণত হয় এক দফায়। শুরু হয় অহিংস অসহযোগ আন্দোলন। ১৯৭১-এর ৭ মার্চ জাতির চাওয়া ভাষা পায় বঙ্গবন্ধুর একটি ভাষণে। যেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এরপর মুক্তিপাগল মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করে। ২৫ মার্চ ইয়াহিয়া-ভুট্টো ঢাকা ছাড়েন। তবে ইয়াহিয়া তার সেনাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে যান। ২৫ মার্চ রাতেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। আর সে রাতেই সশস্ত্র পাকিস্তানি বাহিনী হায়েনার মতো নেমে পড়ে গণহত্যায়। ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালি হত্যার উৎসব শুরু হয় ওই রাতে। কিন্তু তার আগে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করে যান। বঙ্গবন্ধুর ওই ঘোষণা রেডিওতে প্রচারিত হয়, তখন মধ্যরাত পেরিয়ে গেছে- ক্যালেন্ডারের হিসাবে তখন ২৬ মার্চ। সেই থেকে এ দিনটিই আমাদের স্বাধীনতা দিবস। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা, এই দিনে জাতি শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করছে বীর শহীদসহ মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনাদের। আমরাও জাতির সেই সব শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। স্বাধীনতা মানে শুধু পরাধীনতা থেকে মুক্তি নয়, স্বাধীনতা হলো স্বাধীন রাষ্ট্রে সার্বভৌম জাতি হিসেবে মাথা তুলে থাকার সব আয়োজন। তাই সব বাধাকে অতিক্রম করে আমরা অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, সাম্যমৈত্রীর বাংলাদেশ গড়ব- সমুন্নোত হোক মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আজ স্বাধীনতা দিবসে এ হোক আমাদের শপথ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close