reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩

উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রয়োজনীয় যন্ত্র রাখা হোক

দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে, এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে বিগত কয়েক বছরে। দেশেই এখন আধুনিক পদ্ধতির উন্নত চিকিৎসাসেবা পাওয়া যাচ্ছে, যা রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিদেশ গমনের হার কমিয়েছে। বিশ্বের সেরা প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে রোগীদের উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে দেশের অনেক হাসপাতাল। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এসব চিকিৎসা কেবল নির্দিষ্ট কিছু হাসপাতালেই পাওয়া যায়। তাও ঢাকা কেন্দ্রিক হাসপাতালগুলোতে। দুঃখজনক যে, এই উন্নত চিকিৎসাসেবা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাধারণের নাগালের বাইরেই থেকে যায়।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেশির ভাগ জনগোষ্ঠীকে এখনো সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হতে দেখা যায়। যাদের সামর্থ্য আছে তারা হয়তো রাজধানী কেন্দ্রিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসতে পারেন। আর যারা নিম্নআয়ের মানুষ তাদের ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা জেলা হাসপাতাল। কিন্তু উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে চিকিৎসা ব্যবস্থার যে চিত্র মাঝে মধ্যেই সংবাদমাধ্যমে খবরে ওঠে আসে তা উদ্বেগজনক। সেই সূত্র ধরে বলা যায়, এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা সন্তোষজনক নয়। গত মঙ্গলবার প্রতিদিনের সংবাদে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের ৫৯ শতাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের এক্স-রে করা হয় না। কারণ, সেখানে হয় এক্স-রে যন্ত্র নেই অথবা যন্ত্র থাকলেও তা নষ্ট। ৪১ শতাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রক্ত পরিসঞ্চালন করা হয় না। সেইসঙ্গে ৬৩ শতাংশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই চিত্র পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পাবলিক হেলথ ও ইনফরমেটিকস বিভাগের একদল গবেষক। তারা ৯টি জেলা হাসপাতাল ও ১৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওপর একটি গবেষণা করেছেন। সেই গবেষণার তথ্য সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বিএসএমএমইউতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। জরিপে দেখা গেছে, ১১ শতাংশ জেলা হাসপাতালে এক্স-রে ও ইসিজি পরিষেবা নেই। ৭৩ শতাংশ উপজেলা হাসপাতালে ইসিজি হয় না। অবকাঠামোগত সমস্যার মধ্যে আছে সেবাকক্ষ প্রয়োজনের তুলনায় কম, আয়তনে ছোট, পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ। নোংরা ও ব্যবহার অনুপযোগী টয়লেট। পাশাপাশি নিরাপদ পানির অভাবের কথাও জরিপে ওঠে এসেছে।

চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের মতে, এক্স-রে বা ইসিজি হলো রোগ নির্ণয়ের প্রাথমিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা। একজন মানুষ অসুস্থ হয়ে প্রথমে উপজেলা বা জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে গেলে এই পরীক্ষাগুলোর প্রয়োজন পড়তে পারে। কিন্তু সেটিই যদি না করতে পারা যায় তাহলে ওই রোগীর দুর্ভোগের আর শেষ থাকে না। এ জন্য উন্নত চিকিৎসার জন্য মানুষ ছুটে আসে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে। ফলে এসব হাসপাতালে চাপ পড়ে যায়। চিকিৎসকরাও চিকিৎসা দিতে হিমশিম খান। যারা সামর্থ্যবান তারা ছুটে যান বিদেশে।

বাংলাদেশের বড় সংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্যসেবার জন্য জেলা ও উপজেলা হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। এসব প্রতিষ্ঠানে সেবা দেওয়ার সময় চিকিৎসকরা বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ বা সমস্যার মুখোমুখি হন, যা স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দেখা দেয়। তাই উপজেলা, জেলা বা বিভাগীয় পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা ব্যবস্থা আরো উন্নত করা প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা ওষুধপত্রের জন্য সাধারণ মানুষকে রাজধানী বা দেশের বাইরে ছুটতে না হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অতি দ্রুত সেদিকে নজর দেবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close