দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

  ২৭ নভেম্বর, ২০২২

মুক্তমত

হার মানবে না বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গত রবিবার সারা দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৫০টি শিল্প ইউনিট, প্রকল্প ও অবকাঠামোর উদ্বোধন করেছেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে আবাদি জমি রক্ষায় পরিকল্পিত শিল্পায়নের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, যত্রতত্র কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যাবে না। আবাদি ও তিন ফসলি জমির ক্ষতি করা যাবে না। শিল্পায়নের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও ৫০টি শিল্প ইউনিট ও অবকাঠামোর উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারাকে তিনি আনন্দের ঘটনা বলে অভিহিত করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের চারটি, সিটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের দুটি, মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাতটি ও শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলের একটি মোট ১৪টি কারখানার বাণিজ্যিক উৎপাদনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থনৈতিক অঞ্চলের সড়ক, ভবন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোও উদ্বোধন করেন তিনি। এছাড়া দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলে নির্মাণাধীন ২৯টি কারখানারও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন সরকারপ্রধান। বিশ্বমন্দার মধ্যেও ১৪টি কারখানার বাণিজ্যিক উৎপাদন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর উদ্বোধন বাংলাদেশের হার না মানা মনোভাবের প্রতিফলন ঘটিয়েছে। বাঙালির হার না মানা মনোভাবই মুক্তিযুদ্ধে মহাশক্তিধর প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিজয় নিশ্চিত করে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাংলাদেশ ফিনিক্স পাখির মতো উড়াল দিতে সক্ষম হয়েছে। করোনাভাইরাসের মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশ যে সাফল্য দেখিয়েছে তা দুনিয়ার অগ্রসর দেশগুলোর জন্যও ঈর্ষণীয়। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ও খাদ্যাভ্যাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ যে হেরে যাবে না, তা অর্থনীতি সচল করার পদক্ষেপেই অনুভূত হচ্ছে।

একসময় বৈদেশিক সহায়তা ছাড়া চলতে না পারা বাংলাদেশ এখন নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এছাড়া মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, এক্সপ্রেসওয়ের মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নেও বাংলাদেশ তার সক্ষমতা প্রমাণ করছে। বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসছে আমূল পরিবর্তন।

বহুল প্রত্যাশিত মেট্রোরেল যাত্রী পরিবহন শুরু করবে এ বছরের ডিসেম্বর মাসে। মেট্রোরেল চালু হলে রাজধানীর মানুষের দীর্ঘদিনের যানজট ভোগান্তি থেকে রেহাই মিলবে। দ্রুত সময়ে মানুষ নিজের কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারবে। মানুষের কর্মঘণ্টা বাড়বে। মেট্রোরেলের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হলে রাজধানীর বাইরে থেকে অফিস-আদালতে মানুষের সংখ্যাও বাড়বে। এতে রাজধানীর ওপর চাপ কমবে। পাবলিক গণপরিবহনের নৌরাজ্য কমে আসবে। অর্থাৎ মেট্রোরেল রাজধানীর মানুষের জীবনযাত্রাকে আমূল পাল্টে দেবে।

সরকারের জন্য অনেক বেশি গর্ব করার মতো প্রকল্প হচ্ছে কর্ণফুলী নদীর নিচের সুড়ঙ্গপথ বঙ্গবন্ধু টানেল। এ ধরনের পথ দেশের ইতিহাসে প্রথম। পানির তলার সুড়ঙ্গপথটি কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রামের দূরত্ব কমাবে। এই বঙ্গবন্ধু টানেল কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে। কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের গাড়ি চট্টগ্রাম শহরকে এড়িয়ে সুড়ঙ্গপথ দিয়েই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে চলাচল করতে পারবে। তাহলে চট্টগ্রাম নগরীর যানজটও অনেকাংশে কমে যাবে। এটি ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাধ্যমে মাতারবাড়ী পাওয়ার হাব, মহেশখালী গভীর সমুদ্র বন্দর ও টেকনাফ স্থলবন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে। কর্ণফুলী টানেল হয়ে যে সড়ক কক্সবাজার যাবে তা কোনো একসময় মিয়ানমার হয়ে প্রসারিত হবে চীনের কুনমিং সিটি পর্যন্ত।

এদিকে টানেল উদ্বোধনের আগেই এটিকে কেন্দ্র করে ইকোনমিক জোন, কেইপিজেড, কাফকো, সিইউএফএল, বন্দর কার্যক্রম সম্প্রসারণসহ বিশাল অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ চলছে দক্ষিণ চট্টগ্রামে। ফলে এই টানেলকে ঘিরে বদলে যাচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা। একই সঙ্গে টানেলের সংযোগমুখে নির্মিত হচ্ছে চার লেনের সড়ক। এই সড়কটিরও আশপাশের এলাকার মানুষের জীবনের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে।

একসময়ের ক্ষুধা, দরিদ্রতম জাতির দুর্নাম ঘুচিয়ে খাদ্যেও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নের রোল মডেল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত এক যুগ অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষত বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে সাফল্য দেখিয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছে। জনগণ এর সুফল ভোগ করছে। ঢাকাবাসী এরই মধ্যে মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচল দেখেছে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এরই মধ্যে কয়েকটি অঞ্চলে উৎপাদন শুরুও হয়েছে। উদ্বোধন করা হয়েছে পায়রা বন্দর সেতু, যা দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।

স্বাধীনতার ৫১ বছরে বাংলাদেশ যে হারে এগিয়েছে সেটা সত্যিই অনেকের জন্যই ঈর্ষণীয়। অর্থনীতির অনেক ক্ষেত্রেই আমরা দারুণ সাফল্য অর্জন করেছি। পৃথিবীর অনেক দেশই আমাদের অনুসরণ করছে। এখন আমরা বাংলাদেশকে নিয়ে গর্ব করে বলতে পারি সেই তলাবিহীন ঝুড়ি আজ বিশ্বের বিস্ময়, উন্নয়নের রোল মডেল।

লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড।

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close