reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ মে, ২০২২

নবীনদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন

প্রায় সব শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন থাকে উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে পদার্পণ করার। কিন্তু ভর্তিযুদ্ধের বৈতরণী পার হয়ে কিছু শিক্ষার্থীর স্বপ্ন বাস্তব হয়ে ধরা দিলেও অধিকাংশের স্বপ্নই থেকে যায় অধরা। আর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার জন্য শুধু ভর্তিযুদ্ধেই নামতে হয়নি, লড়াই করতে হয়েছে করোনার সঙ্গেও। দুই লড়াইয়ে জয়ী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও ক্যাম্পাসে পদার্পণের আগেই আবার হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়। তারপর সব আঁধার ঘুচিয়ে চালু হয় বিশ্ববিদ্যালয়। নবীনদের পদচারণায় মুখরিত হয় ক্যাম্পাস। এমন গুটিকয়েক তরুণের ক্যাম্পাস জীবনের অনুভূতি তুলে ধরেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মিনহাজুল ইসলাম

বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও নিয়মিত পড়তে হবে

স্বদেশের অন্যতম শীর্ষ বিদ্যাপীঠে অধ্যয়নের সুযোগ পেয়ে আমি সত্যিই আবেগাপ্লুত। এজন্য আমি প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমার সৃষ্টিকর্তার সমীপে। অতঃপর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমার গর্ভধারিণী মা এবং শিক্ষকদের প্রতি, যাদের অবদান অনস্বীকার্য। মানবিক বিভাগে আসার পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার স্বপ্ন লালন করে আসছিলাম। সত্যি বলতে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা ভাবলে আমার কষ্ট হতো। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাকে নিরাশ করেননি।

কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন প্রসঙ্গে আমি আরেকটি ভাবনা তুলে ধরতে চাই। সেটা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া মানে বিশাল কিছু, ভবিষ্যৎ অনেকটাই নিশ্চিত। অতটা পড়ালেখা করতে হয় না- এমন কিছু কথাও শুনেছিলাম। অপ্রিয় হলেও সত্য, ভর্তির পর সেসব কথাকে বাস্তবতার নিরিখে মিলিয়ে অনেকটাই উল্টো মনে হচ্ছে। মানছি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারা জীবনের বড় একটি প্রাপ্তি, কিন্তু এটিই জীবনের সব না। জীবনটা বৃহৎ। আর ভালো ফলাফলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও নিয়মিত পড়তে হবে।

আঁখি আলম নিপা

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

মুক্ত জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিটি মানুষের জন্য একটা স্বপ্নের জায়গা। স্কুল ও কলেজের সীমাবদ্ধ গ-ি থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সাহায্য করে মুক্তচিন্তা করতে। উচ্চমাধ্যমিক শেষে হাজার হাজার শিক্ষার্থী পদার্পণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মুক্ত জ্ঞানচর্চা কেন্দ্রে। আমি এইচএসসি-২০২০ এর পরীক্ষার্থী। আমিসহ আমার ব্যাচের সব ছাত্রছাত্রী ছিল একটি অনাকাক্সিক্ষত সময়ের সম্মুখীন, যেখানে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের কঠিন সময় পার করতে হয়েছে। করোনা মহামারির এই সময় আমাদের জন্য মোটেই আনন্দপূর্ণ ছিল না। অনেকটা সময় ধৈর্যধারণের মাধ্যমে আল্লাহর রহমতে দেশের সেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটিতে নিজের আসন নিশ্চিত করতে পেরেছি। এটি আমার একটি অনেক বড় পাওয়া। অনেক বাধার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেকে পৌঁছাতে পারা এক অন্যরকম অনুভূতি। নতুন ক্যাম্পাস, নতুন পরিবেশ, সব মিলিয়ে এক নতুন পথচলা শুরু হলো আমার। জীবনের অন্যরকম এই ধাপে পদার্পণে রয়েছে কিছুটা ভয় ও উত্তেজনা, কিন্তু এই ভয়ই অন্যরকম আনন্দের অনুভূতি সৃষ্টি করে। কারণ আমি এখন একজন জাবিয়ান হিসাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারছি। ‘জাবি’ আমাকে দেশ ও দশের কল্যাণে স্বপ্ন দেখায় ও প্রেরণা দেয়। আমার প্রাণের ক্যাম্পাস জাবির সঙ্গে থেকেই আস্কু আমার ও আমার মতো হাজারো শিক্ষার্থীর সাফল্য।

শরিফা আহম্মেদ তন্বী

সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

প্রথম পদার্পণ ছিল অন্যরকম এক অনুভূতি

একজন শিশুর শিক্ষাজীবন শুরু হয় প্রাথমিক শিক্ষার মধ্য দিয়ে। তখন স্কুলে যাওয়ার অনুভূতি ছিল অব্যক্ত। কেননা তখন আমি নিতান্তই ছোট ছিলাম। তখন অনুভূতি বোঝার মতো ক্ষমতা ততটা হয়ে উঠেনি। প্রাথমিক শেষ করে মাধ্যমিকে পদার্পণ করি। তখন অনুভূতি বুঝতে শিখি। মাধ্যমিকে পড়ার সময় আমার প্রিয় শিক্ষকের মুখে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা শুনি। তখন থেকে আমার কৌতূহল বেড়ে যায়। মাধ্যমিক পাস করে রঙিন স্বপ্ন নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পদার্পণ করি। তারপর থেকে পড়ালেখার প্রতি আমার আগ্রহ অনেকটা বেড়ে যায়। আমার কলেজের শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আগ্রহ বাড়িয়ে দেন। এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতি নিতাম। কিন্তু হঠাৎ হানা দেয় করোনা মহামারি। তখন হতাশা কাজ করতে শুরু করে। এইচএসসি পরীায় অটোপাস নিয়ে শুরু বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধের প্রস্তুতি। অনেক কষ্টের পর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে চান্স পেলাম স্বপ্নের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে প্রথম পা রাখা ছিল স্বপ্নের মতো। যে অনুভূতি লিখে প্রকাশ করা হয় তো অসম্ভব।

মো. মেহেদী হাসান লিমন

ইতিহাস বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

নতুন অধ্যায়ের সূচনা

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পদার্পণ আমার জীবনের নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা। প্রথম দিন যখন ক্যাম্পাসে যাই সিনিয়র আপু ভাইয়াদের আদব শেখানো দেখে মন কিছুটা খারাপ হলেও এই অচেনা মানুষগুলোই দুই দিন পার হতে না হতেই হয়ে যায় সবচেয়ে আপন। ক্লাস নোট থেকে শুরু করে টিউশনি পাইয়ে দেওয়া পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই সিনিয়ররা অনেক সাহায্য করেন। যেগুলা স্কুল বা কলেজ জীবনে আমি কখনো পাইনি।

ছোটবেলার সব বন্ধুবান্ধব ছেড়ে ক্যাম্পাসের নতুন নতুন সব বন্ধুবান্ধব, ক্লাসের ফাঁকে ক্যাম্পাসে সবার সঙ্গে আড্ডা, পুরান ঢাকার অলিগলি ঘুরে বেড়ানো, সবাই মিলে টিএসসিতে চা খেতে যাওয়ার ছোট ছোট মুহূর্তগুলো আসলে সারা জীবন স্মৃতির পাতায় অম্লান হয়ে থাকবে। খুব সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে সবাই একসঙ্গে পুরো রাস্তা হাসি কৌতুক বা গান করতে করতে যাওয়া, বিকালে সবাই একসঙ্গে আড্ডা দেওয়া, ভাইয়া আপুদের সঙ্গে খুনসুটি করা এগুলোর অনুভূতি আসলে অন্যরকম। আবার দিন শেষে বাসায় ফিরলে যখন পরিবার-পরিজন ও এলাকার বন্ধুদের কথা যখন মনে পড়ে চোখের কোণে পানি জমে, তখন মন বলে ওঠে ‘কবে বাড়ি যাব’।

মোশতাক আহমেদ তাহসিন

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close