মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ

  ১৫ আগস্ট, ২০২২

তারুণ্যের পথপ্রদর্শক বঙ্গবন্ধু

স্বাধীনতাবিরোধীরা এখনো সক্রিয়; তারা চুপ করে বসে নেই। তারা সুযোগ পেলেই অতীতের মতো ইতিহাস বিকৃত করবে। বঙ্গবন্ধুক এখনো তারা ভীষণ ভয় পায়। তারা সদাসর্বদা চেষ্টা করবে বঙ্গবন্ধুর কীর্তিকে ম্লান করতে অথচ বঙ্গবন্ধুর কীর্তিই বাঙালি জাতিকে সারা বিশ্বে মর্যাদার আসনে আসীন করেছে এবং তার কীর্তিই আমাদের একটি স্বাধীন দেশ দিয়েছে, বুক ফুলিয়ে কথা বলার অধিকার দিয়েছে, শির উঁচু করে চলার সুযোগ করে দিয়েছে।

শেখ মুজিবুর রহমান। এটি শুধু একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস। বাংলাদেশের ইতিহাস। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই জাতিকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র দিয়ে গেছেন। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া ‘রাখাল বালক’ অকুতোভয় শেখ মুজিব অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে জীবনের মূল্যবান সময় জেলহাজতে থেকে, পরিবার-পরিজনের মায়া-মমতা থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন কাটিয়ে শত দুঃখণ্ডদুর্দশার মধ্যেও পাকিস্তানি শাসক-শোষকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বাঙালিদের জন্য ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি দেশ এনে দিয়েছেন।

২৫ মার্চ থেকে শুরু করে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হলো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের স্বাধীনতা। শেখ মুজিব হয়ে উঠলেন স্বাধীন বাংলাদেশের পিতা। মহান এ পুরুষকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন, তার আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করা, প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে তার নীতি-আদর্শ সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়া বর্তমান প্রজন্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশ ও স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্য ও আত্মী-পরিজনসহ হত্যা করা হয়। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ইতিহাস মানে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস। তার জীবন ইতিহাসের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাস জড়িত। এই মহান মানুষটি জীবনে যা-ই করেছেন, তার সবই দেশের জন্য করেছেন। দেশের স্বার্থেই ছিল তার প্রতিটি পদক্ষেপ। তার জন্ম না হলে আজ আমরা স্বাধীনতা পেতাম না।

বাংলাদেশের বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে এক সুমহান আদর্শের নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বর্তমান প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর অসীম সাহসিকতা, অসাধারণ নেতৃত্বের গুণাবলি, প্রজ্ঞা আর দূরদর্শিতায় দীক্ষিত। তারুণ্যের কাছে তিনি গৌরব ও অহংকারের। বঙ্গবন্ধুর কর্ম, জীবন ও আদর্শ তরুণদের অনুপ্রাণিত করছে। জাতির পিতার আদর্শ, দর্শন ও কর্মচিন্তা আমাদের চলার পথের পাথেয়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নই সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।

বঙ্গবন্ধুর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, তার বাগ্মিতা, মানুষের প্রতি স্বার্থহীন ভালোবাসা, সাহসিকতা প্রভৃতি গুণাবলি তরুণদের সহজেই আকৃষ্ট করে। তরুণদের সঙ্গে একটা অন্তরের সম্পর্ক ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। তিনি তাদের সংগ্রামের বাণী দিতেন, রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সক্রিয়তায় উৎসাহিত করতেন, শিক্ষা এবং শিক্ষার আদর্শগুলো নিজেদের জীবনে ধারণ করার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। তার কীর্তি আর মহত্ত্ব প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে, তরুণ মনে সাহস জোগাবে, তারই প্রতিষ্ঠিত দেশকে উন্নয়নের ছোঁয়ায় বিশ্বপরিমণ্ডলে সম্মানজনক আসনে অধিষ্ঠিত করবে।

প্রতিপক্ষের শত ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচক অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে সামগ্রিকতায় আজ ইতিবাচক অগ্রগতির দিকে ধাবমান হবে। তরুণদের ভাবনায় সারাক্ষণ যার বিচরণ তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন বাংলার প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ে।

বর্তমান তরুণ সমাজ বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে প্রেরণা নিতে পারে যে, যতই বাধা আসুক, নিয়ত যদি হয় সৎ এবং উদ্দেশ্য হয় যদি মহৎ, তাহলে সফলতা অর্জন করা অসম্ভব নয়।

বঙ্গবন্ধু তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে লিখেছেন-

‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এ নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’

তরুণদের সঙ্গে একটা অন্তরের সম্পর্ক ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। তিনি তাদের সংগ্রামের বাণী দিতেন, রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সক্রিয়তায় উৎসাহিত করতেন, শিক্ষা এবং শিক্ষার আদর্শগুলো নিজেদের জীবনে ধারণ করার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। তরুণদের তিনি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে, অসত্য, অর্ধসত্যকে প্রত্যাখ্যান করতে, বঞ্চনা-অনাচার এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে উদ্দীপনা জোগাতেন। তিনি চাইতেন বাঙালি তরুণ যুগের আদর্শগুলো ধরে রেখে বিশ্বমানব হোক।

বর্তমান তরুণদের মনে রাখা দরকার, বঙ্গবন্ধু ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা থেকে শুরু করে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পূর্বদিন পর্যন্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধু চেয়েছেন বাংলার মানুষ একতাবদ্ধ থাকবে। সুন্দরভাবে হাসি-খুশিতে জীবনযাপন করবে। বর্তমান প্রজন্ম চেষ্টা করবে জাতির পিতার এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে। বঙ্গবন্ধু নিজেও বিশ্বাস করতেন তরুণরাই দেশের মূল চালক।

তাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য নিয়ে বর্তমান প্রজন্মকে এক হতে হবে এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। তবেই বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসা সার্থক হবে। শোকাবহ আগস্ট। পেছন ফিরে বঙ্গবন্ধুকে দেখি আর তার অমর বাণী শুনি। তার কথাগুলো এখন তরুণরা শুনছে, পড়ছে। তারা অনুপ্রাণিত হচ্ছে। তারা যে বাংলাদেশ চায়, বঙ্গবন্ধুও সেই দেশটি চেয়েছিলেন এবং তার একটি বর্ণনা তিনি দিয়েছিলেন, ‘সোনার বাংলা।’

তরুণরাই দেশের মূল চালিকাশক্তি। তরুণ সমাজের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনুপ্রেরণার নাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তরুণ প্রজন্মের কাছে মহান আদর্শ ব্যক্তিত্ব। তরুণদের কাছে তিনি একাধারে একজন উদার ব্যক্তিত্ব, সফল রাজনীতিবিদ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মূর্ত প্রতীক। তারুণ্যের শক্তির প্রতি আস্থা রাখতেন তিনি। তরুণ প্রজন্মকেই শপথ নিতে হবে এই মহান নেতার নীতি ও আদর্শ ধারণ করে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার।

সময় এসেছে ইতিহাসের উজ্জ্বল মহিমা থেকে নতুন প্রজন্মের শিক্ষা নেওয়ার। বঙ্গবন্ধু তরুণদের সংগ্রামের বাণী শেখাতেন, রাজনীতি ও সাহিত্যর প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন, অন্যায়ের কাছে আপসহীন হতে শিখিয়েছেন, শিক্ষা ও শিক্ষার আদর্শগুলো জীবনে ধারণ কর?তে বলেছেন। তিনি তারুণ্যের চোখে অপ্রতিরোধ্য শক্তি ও অনুপ্রেরণার বাতিঘর। অমিত আত্মবিশ্বাস, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, প্রগতিশীল নেতৃত্ব, লালিত স্বপ্নের প্রতি অবিচল আস্থা বঙ্গবন্ধু তরুণ প্রজন্মের ভাবনায় অবিসংবাদিত এক নেতা।

তরুণদের কাছে বঙ্গবন্ধু একাধারে জীবন সংগ্রামের, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতীক। তার সংগ্রামমুখর কর্মময় জীবন ও আদর্শ থেকে প্রতিনিয়ত শিক্ষা নিচ্ছে তরুণসমাজ। অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচায় বঙ্গবন্ধু তারুণ্যের প্রতি বিশ্বাস এবং তার নিজের তরুণ জীবনের সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরেছেন।

বঙ্গবন্ধুর পথচলা তরুণদের অসাম্প্রদায়িকতা ও দুর্নীতিমুক্ত মানুষ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে উৎসাহিত করে। তিনি চাইতেন বাঙালি তরুণ যুগের আদর্শগুলো ধরে রেখে বিশ্বমানব হোক। তার অসাধারণ বাগ্মিতা, মানবিকতা, মানুষের প্রতি সহমর্মিতার গুণেই তিনি চির অমলিন। তার ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের শিহরিত করে, অনুপ্রাণিত করে। তার উদার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও শোষণহীন সমাজ গড়ার প্রত্যয় আমাদের উজ্জীবিত করে। অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়া, ভ্রাতৃত্ববোধের মর্মবাণী, দেশরক্ষার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার শিক্ষা আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকেই পাই। বঙ্গবন্ধুর পথচলা তরুণদের উৎসাহিত করে অসাম্প্রদায়িকতা ও দুর্নীতিমুক্ত মানুষ হিসেবে নিজেদের গড়তে।

বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ- এ কথাটি তরুণ প্রজন্মের মনে গেঁথে দিতে হবে; তাদের জানাতে হবে বঙ্গবন্ধু কেন একটি স্বাধীন দেশ চেয়েছিলেন, কেন তিনি জীবনের সব সুখভোগ বিসর্জন দিয়ে শুধু একটি পতাকার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন, কেন তিনি জল্লাদদের কারাগারে থাকা অবস্থায় মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও স্বাধীন বাংলাদেশের ব্যাপারে আপস করেননি, কেন তিনি সব বাঙালির জন্য অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে স্বাধীনতার পথে পা বাড়িয়েছিলেন এবং সব ধরনের শোষণের বিরুদ্ধে বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলেছিলেন। তরুণদের জানাতে হবে সঠিক ইতিহাস, সঠিক তথ্য।

স্বাধীনতাবিরোধীরা এখনো সক্রিয়; তারা চুপ করে বসে নেই। তারা সুযোগ পেলেই অতীতের মতো ইতিহাস বিকৃত করবে। বঙ্গবন্ধুকে এখনো তারা ভীষণ ভয় পায়। তারা সদাসর্বদা চেষ্টা করবে বঙ্গবন্ধুর কীর্তিকে ম্লান করতে অথচ বঙ্গবন্ধুর কীর্তিই বাঙালি জাতিকে সারা বিশ্বে মর্যাদার আসনে আসীন করেছে এবং তার কীর্তিই আমাদের একটি স্বাধীন দেশ দিয়েছে, বুক ফুলিয়ে কথা বলার অধিকার দিয়েছে, শির উঁচু করে চলার সুযোগ করে দিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন পালন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আর দেশের মানুষকে স্বাধীনতার অপশক্তি থেকে রক্ষা করতে তরুণ প্রজন্মকেই জ্বলে উঠতে হবে।

লেখক : কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close