প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৮ মার্চ, ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘকে পাত্তা দিচ্ছে না ইসরায়েল

গাজায় দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনে দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। ইসরায়েলি ট্যাংক এবং সাঁজোয়া যান খান ইউনিসের একটি হাসপাতালকে ঘিরে রেখেছে। ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের কারণে আরো একটি হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হলেও গোঁড়ামি করে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। বর্বর এই জাতির মুহুর্মুহু হামলায় গাজাবাসী এখন শুধু একটু বেঁচে থাকার স্বপ্নই দেখেন। হামলার মুখে তীব্র খাবার সংকটে ধুঁকতে থাকা ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ওপর পবিত্র রমজান মাসেও ক্ষুধার্ত হায়েনার মতো হামলা চালাচ্ছে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সেনারা। এক সময় ইসরায়েলিদের পক্ষে কথা বলা দেশগুলোও এখন নিন্দা জানাচ্ছে গাজা হামলার। বিশেষ করে রমজানে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার কারণে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হচ্ছে ইসরায়েল।

জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রবার্ট উড বলেন, গাজায় নাটকীয়ভাবে মানবিক ত্রাণ পৌঁছে দিতে কাজ করছে ওয়াশিংটন ডিসি। সেখানে সাধারণ মানুষের যতটুকু প্রয়োজন সেই পরিমাণ সহায়তা পৌঁছানো যাচ্ছে না। বাস্তবতা হলো মানবিক ত্রাণ সহায়তা না পৌঁছানোর কারণে শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে। গাজার শিশুদের অপুষ্টিতে মারা যাওয়া উচিত নয়। গাজার শতভাগ মানুষ ভয়াবহ খাদ্যসংকটে ভুগছেন।

যদিও যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘের কোনো কথাই কানে নিচ্ছে না ইসরায়েলিরা। গাজার রাফায় ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে নেতানিয়াহুর সৈন্যরা। তাদের দাবি— চলতি মাসে বিমান হামলায় হামাস কমান্ডার মারওয়ান ইসাকে হত্যা করেছে তারা। তবে হামাসের একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, এই মৃত্যুর পক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই। শত্রুরা মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। ওদিকে দু’তিন দিন ধরেই খান ইউনুসে একটি হাসপাতালে ঘিরে রেখেছে ইসরায়েলি ট্যাংক ও সাজোয়া যান।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। সেখানে হামাসকে নির্মূলের অজুহাতে প্রতিদিন শত শত ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। বাদ পড়ছে না ছোট ছোট শিশরাও।

হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৩২ হাজার ৪১৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ৭৪ হাজার ৭৮৭ জন। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী এবং শিশু। এর আগে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় জরুরিভিত্তিতে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হয়। সোমবার (২৫ মার্চ) পাস হওয়া এই প্রস্তাবে গাজায় যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির শর্ত রাখা হয়েছে।

এই প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত ছিল ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। তবে নিরাপত্তা পরিষদের বাকি ১৪টি দেশ প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয়। এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত প্রস্তাব পাস হয়েছে। এই প্রস্তাব অবশ্যই বাস্তবায়ন হতে হবে। যদি কোনো পক্ষ এই যুদ্ধবিরতি ও এর শর্তগুলো বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়, তাহলে তা হবে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধের শামিল।

গত শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির খসড়া প্রস্তাব দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু রাশিয়া ও চীনের ভেটোর কারণে প্রস্তাবটি পাস হয়নি। সেদিন মস্কোর অভিযোগ ছিল, ওয়াশিংটনের দ্বিমুখী নীতি ইসরায়েলের ওপর কোনো চাপ তৈরি করছে না। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তোলা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১১ দেশ। বিপক্ষে দেয় তিন দেশ। আর ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে একটি দেশ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close