প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৪ জুন, ২০২২

মহারাষ্ট্রে শিবসেনার পতন!

সরকার গড়ার সুযোগ খুঁজছে বিজেপি

ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে শিবসেনার সরকার পতনের মুখে পড়েছে। রাজ্যটিতে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যেই বিরোধ দেখা দিয়েছে। বিরোধের জের ধরে জোট সরকারের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী একনাথ শিন্ড বিদ্রোহ করেছেন। তার দাবি, ক্ষমতাসীন দল শিব সেনার ৪০ থেকে ৫৬ জন আইনপ্রণেতার সমর্থন রয়েছে তার পক্ষে। এরপরই মুম্বাইয়ের মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন ছেড়েছেন উদ্ধব ঠাকরে। তিনি বুধবার বান্দ্রায় শিবসেনা প্রতিষ্ঠাতা বাল ঠাকরের বাসভবনে উঠেছেন। দলটিতে ভাঙন ধরানোর পেছনে বিজেপির হাত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। একনাথ শিন্ডকে হাত করে সরকার গঠনের পথে রয়েছে বিজেপি। খবর এনডিটিভির।

মহারাষ্ট্রে দীর্ঘদিনের মিত্রতার পর ২০১৯ সালের রাজ্য নির্বাচনের আগে ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে টানাপড়েনে শিব সেনা ও বিজেপির মধ্যে ভাঙন ধরে। ওই নির্বাচনে রাজ্যের বিধানসভার ২৮৮ আসনের মধ্যে বিজেপি ১০৬ আসনে জয়লাভ করে একক বৃহত্তম দল হয়। কিন্তু শিবসেনা আঞ্চলিক ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি), ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস, আরো কয়েকটি ছোট দল ও স্বতন্ত্রদের সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করে।

তবে শেষপর্যন্ত দলীয় বিরোধের জেরে সংকটের মধ্য পড়ে গেল মহারাষ্ট্রে শিবসেনার জোট সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে শিবসেনার আরো কয়েকজন বিধায়ক গিয়ে উঠেছেন আসাম গুয়াহাটির র‌্যাডিসন ব্লু হোটেলে। এর ফলে মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের সমর্থনে থাকা বিধায়কদের সংখ্যা আরো কমল। এই হোটেলে আছেন শিবসেনা নেতা বিদ্রোহী একনাথ শিন্ড। তার সঙ্গে শিবসেনা ও স্বতন্ত্র কয়েকজন সদস্য আছেন।

এ দিকে সকালে গুয়াহাটির র‌্যাডিসন ব্লু হোটেলের সামনে বিক্ষোভ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এর আগে কর্ণাটকে এবং মধ্য প্রদেশে বিদ্রোহ করিয়ে সরকার গঠন করেছিল বিজেপি। এবার মহরাষ্ট্রে এমনটাই ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

উদ্ধব ঠাকরে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন। এরই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন তিনি। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এভাবে আসলে বিক্ষুব্ধদের একটা বার্তা দিতে চাইছেন তিনি। বুঝিয়ে দিতে চাইছেন, বালসাহেব ঠাকরের ব্যাটন তার হাতেই। ছেলে হিসেবে তার নীতি মেনে চলার দায়িত্বও নিজের কাঁধেই তুলে নিতে চান।

গতকাল সকালে আসাম পৌঁছান শিবসেনার আরো কয়েক বিধায়ক। মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের বিরোধিতাকারী একনাথ শিন্ডের দল ক্রমেই ভারী হচ্ছে। ওই তিন বিধায়কের কারণে উদ্ধব ঠাকরের সমর্থনে থাকা বিধায়কদের সংখ্যা আরো কমল। পাশাপাশি আরো শক্তিশালী হলো শিন্ডের পক্ষ।

বিদ্রোহী শিবসেনা বিধায়কদের নেতৃত্বে থাকা একনাথ শিন্ডের দাবি, শিবসেনার ৫৫ জন বিধায়কের মধ্যে ৪২ জনের সমর্থন আছে তার দিকে। আর মাত্র একজনের সমর্থন পেলেই সরকার গঠনের মতো অবস্থায় যাবেন তারা। বিজেপির ১০৫ বিধায়ক ও শিন্ডের ৪২ হলে সরকার গঠন সম্ভব।

বিজেপির কাছে বর্তমানে ১০৫ জন বিধায়ক আছে। ২৮৭ আসনের মহারাষ্ট্র বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য দরকার ১৪৫ আসন। শিন্ডের দাবি, তার সঙ্গে বর্তমানে অন্তত ৪২ জন বিধায়ক আছেন। এর মধ্যে শিবসেনার ৩৪ জন আছেন।

মহারাষ্ট্র বিধানসভায় বর্তমানে বিজেপির ১০৫, শিবসেনা ৫৬, ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) ৫৪, কংগ্রেস ৪৪ আসন আছে। বাকিরা অন্য দল ও স্বতন্ত্র সদস্য। এখন সেখানে শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেসের জোট সরকার রয়েছে।

এদিকে একনাথ শিন্ডেকে উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বিজেপি। আড়াই বছর আগে এই একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল এনসিপির অজিত পাওয়ারকেও। নতুন সরকার গঠন হলে শিন্ডের পক্ষকে ৯টি মন্ত্রণালয় দিতে পারে বিজেপি। আগেরবার অজিত পাওয়ারকেও এই একই সংখ্যক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল।

এদিকে আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, মহারাষ্ট্র সরকারের মন্ত্রী গুলাবরাও পাতিল বুধবার গভীর রাতে ‘বিজেপির ব্যবস্থাপনায়’ গুয়াহাটির রিসোর্টে এসে পৌঁছেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি বলেছেন, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে উদ্ধব ঠাকরেকে সরানো তাদের উদ্দেশ্য নয়। বরং উদ্ধবের নেতৃত্বে সে রাজ্যে শিবসেনা-বিজেপি জোটের সরকার গড়ার লক্ষ্যেই একজোট হয়েছেন তারা। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু চাই, এনসিপি এবং কংগ্রেসের সঙ্গ ছেড়ে শিবসেনা ফের বিজেপির সহযোগী হোক।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close