এম এ মাসুদ, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)

  ২৭ মে, ২০২৪

কর্মসংস্থান

বেকারত্ব ঘুচিয়েছে বাঁশ

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ

বাড়ির ভেতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে বাঁশের তৈরি নানা চিত্রকর্ম ও তৈজসপত্র। কোথাও কলমদানি, অফিশিয়াল কলমদানি, ফুলদানি, কানের দুল, চায়ের কেতলি, ওয়াইন গ্লাস, ওয়াইন কেতলি, খাবার পরিবেশন ট্র্রে, ওয়াল ফুলদানি, লবণদানি, ওয়াল ল্যাম্প, কাঁটাচামচ। কোথাও বাঁশের ভেতরে লাগানো অর্কিড গাছ, অ্যাশট্রে, রোদ ও বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়া কৃষকের মাথার ঝাঁপি। বাঁশের এসব তৈজসপত্র ও চিত্রকর্ম তৈরি করে দিনবদল করেছেন বেকার যুবক মহিদুল ইসলাম।

তিনি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে বামনডাঙ্গার রামধন গ্রামের বাসিন্দা। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ ছাড়াই তিনি বাঁশ ও কাঠের পণ্য তৈরি করে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

মহিদুল ইসলাম বলেন, কালীতলা বাজারে মোবাইল মেরামতের পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কাজ করতেন তিনি। করোনাকালে দোকান বন্ধ হয়ে গেলে তিনি বেকার হয়ে পড়েন। সংসারের খরচ জোগাতে উচ্চমাধ্যমিক পাস এই যুবক দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। পরে বাবার শখের কাজকেই নিজের পেশা হিসেবে বেছে নেন। এখন তৈরি করছেন বাঁশ দিয়ে নানা ধরনের নান্দনিক সব চিত্রকর্ম ও তৈজসপত্র। বাড়িতে গেলেই বোঝা যায় জীবিকার কারণে বাঁশকে পেশা হিসেবে নিলেও তিনি শৌখিন। তার কাজে যেন নান্দনিকতা ফুটে উঠেছে। বাড়ির গেটের দুই পাশে দুটো অপরাজিতা গাছের ফুলের গাছ। এই ফুল দিয়ে তৈরি চা খুবই সুস্বাদু। এই চা শুধু স্বাদে নয়, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগের উপশম করে। বাড়ির চারপাশে আম, লিচু, কাঁঠাল, তাল, নারিকেলসহ নানা ধরনের ফলের গাছ। গড়ে তুলেছেন হাজার খানেক চারার নারিকেল নার্সারি।

সরেজমিন দেখা গেছে, মেশিন ছাড়াই হাত দিয়েই তৈরি করছেন চমৎকার কারুকার্যময় বাঁশের মগ, সাধারণ কলমদানি, ফুলদানি, গহনা, চায়ের কেতলি, ওয়াইন গ্লাস, ওয়াইন কেতলি, খাবার পরিবেশনের ট্র্রে, ওয়াল ফুলদানি। এছাড়া খোদাই করা নেমপ্লেট ও বাঁশের ওপর ফুটিয়ে তোলা ছবি।

মহিদুলের কাজ দেখে অনেকেই এ পেশায় আসতে আগ্রহী হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন স্থানীয় শিক্ষক শাহারিয়ার আল মামুন। মহিদুল ইসলাম বলেন, বাঁশের তৈরি ট্রেসহ ছয়টি কাপ, একটি কেতলি, চিনির পাত্র, চা-পাতার পাত্র ও একটি মগের সেটের দাম ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। তিনি বলেন, তার বাবা বন বিভাগে চাকরি করতেন। তার বাবা বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র ও কাঠ কেটে বা খোদাই করে বিভিন্ন ছবি তৈরি করতেন। তিনি তার বাবাকে দেখেই এ কাজ শিখেছেন। এখন বাণিজ্যিকভিত্তিতে বাঁশের পণ্য তৈরি করে বাজারজাত করার কথা ভাবছেন তিনি। এ ব্যাপারে বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেকারত্ব ঘুচিয়েছে বাঁশ মো. আবদুল জব্বার বলেন, মহিদুলের তৈরি করা তৈজসপত্র খুব সুন্দর। তার পণ্য দেখতে সবারই পছন্দ হবে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মহিদুলসহ অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বিসিক, গাইবান্ধার সহকারী মহাব্যবস্থাপক রবীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ বলেন, মহিদুলের কুটিরশিল্পকে এগিয়ে নিতে তাকে বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ ব্যবসা আরো এগিয়ে নিতে তার জন্য জুলাই মাসে ঋণের ব্যবস্থা করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close