আশরাফুল আলম, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ)

  ২৭ মে, ২০২৪

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ

সওজের জমি দখল করে বিপুল টাকার বাণিজ্য

* দখলের পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালীদের হাত * প্রতি ঘরে অগ্রিম ৫০ হাজার টাকা, মাসে ভাড়া ৫-৭ হাজার * মুদিদোকান ও ফল-মিষ্টি সেলুনের কারবার

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের মেঘনাঘাটে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সওজের জায়গা দখল করে মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন স্বার্থান্বেষীরা। এসব দখলের আড়ালে রয়েছে স্থানীয় প্রতাপেরচর ও ঝাউচর এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশে মেঘনা শিল্পনগরী এলাকায় বেপারীবাজার থেকে শুরু করে পুরাতন ফেরিঘাট পর্যন্ত সরকারি জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা ও দোকানপাট নির্মাণ করে বেআইনি টাকা কামানোয় লিপ্ত রয়েছেন একাধিক সওজ কর্মচারী। এ ছাড়া প্রতাপেরচর ও ঝাউচর এলাকার সরকার দলীয় নেতাকর্মীরাও এ কাজের সঙ্গে যুক্ত।

সওজের জায়গা দখলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত রয়েছেন একাধিক সওজ কর্মচারী ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীসহ স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগে কর্মরত সাহাবদ্দিন নামে এক কর্মচারী নিজেই সওজর জায়গা দখল করে পাঁচটি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে মাসিক তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া আদায় করেন। এছাড়া সওজর জায়গা দখলে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন আরিফ হোসেন, আনিসুর রহমান, শাহ আলী, আল আমিন, মিন্টু মিয়া, আলম, খোকন, আবদুল আজিজ, আসাবুদ্দিন, আবুল হাসেম, সালাউদ্দিন, আবু হানিফ, মুসুন বেপারী, বিল্লাল হোসেন, নজরুল ইসলাম ও জাকির হোসেন। স্থানীয়রা বলেছেন, এই দখলকারীরা ক্ষমতাসীন দল ও বিভিন্ন সামাজিক দলের সঙ্গে জড়িত। তারা এলাকায় প্রভাবশালী।

মেঘনাঘাট এলাকায় অবস্থানরত সওজ কর্মচারী সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাকর্মীদের মধ্যস্থতায় সরকারি জায়গা দখল করে মুদিদোকান, হোটেল রেস্তোরাঁ, ফলের দোকান, মিষ্টির দোকান, চায়ের দোকান, ভাঙারি দোকান ও সেলুনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া আদায় করে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজের অভিযোগ, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা মাঝে মধ্যে লোকদেখানো অভিযান চালিয়ে মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেন। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কিছুদিন যেতে না যেতেই পুনরায় সওজর জায়গায় দোকানপাট নির্মাণ করেন সরকারদলীয় সমর্থক স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাকর্মীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি ও দোকান মালিকরা জানিয়েছেন, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী অল্প কিছু টাকা খরচ করে সওজর জায়গায় অবৈধ এসব স্থাপনা গড়ে তুলে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারি না থাকায় একটি স্বার্থান্বেষী মহল ভাড়া আদায়ের নামে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চা দোকানি বলেন, মেঘনা এলাকায় যেকোনো স্থানে সওজর জায়গায় দোকান দিতে হলে প্রথমে নেতাকর্মীদের ম সওজের জমি দখল ম্যানেজ করতে হয়। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও দলীয় নেতাকর্মীর একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা মিলে সওজর জায়গায় পৃথকভাবে একেকজন ৫/৭টি করে দোকান বসিয়ে প্রতি মাসে বিপুল অঙ্কের টাকা ভাড়া আদায় করছে। আমি একজন ক্ষুদ্র চা দোকানি সরকারি জায়গায় দোকান বসাতে নেতাদের অগ্রিম ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। তারপর প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিলসহ দোকান ভাড়া পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয়। আমার মতো অন্যান্য যেকোনো দোকান মালিককে প্রতি মাসে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। নতুবা মেঘনাঘাট এলাকায় ব্যবসা করা যাবে না। আমরা বাধ্য হয়েই নেতাকর্মীদের দোকান ভাড়া দিতে হচ্ছে।

সওজর জায়গায় একাধিক দোকানের মালিক সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ হোসেন বলেন, সওজর জায়গায় কিছু নেতাকর্মীর হয়তো একাধিক দোকানপাট থাকতে পারে। আমার শুধু একটি হোটেল রেস্তোরাঁ রয়েছে। সরকার চাইলে যেকোনো সময় উচ্ছেদ করতে পারে।

নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী লিয়ন আল রাজি জানান, কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি সওজর জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া আদায় করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা নিয়মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ পরিচালনা করে থাকি। অচিরেই আবার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close