জুবায়ের জামিল, রাবি

  ২৫ মে, ২০২৪

রাবিতে গবেষণায় অনীহা ফেরত যাচ্ছে বরাদ্দ

গবেষণায় অনীহা তৈরি হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি)। এমনকি গবেষণার জন্য বরাদ্দ করা অর্থের বড় অংশই ফেরত যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে। কমে যাচ্ছে গবেষণার সংখ্যা। প্রকল্প পাওয়ার পর গবেষণার বিল উত্তোলন নিয়ে তৈরি হচ্ছে জটিলতা। এ কারণে গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন শিক্ষকরা। রাবি প্রশাসন স্বতন্ত্র গবেষণা সেল চালু করলে এ সমস্যা অনেকটাই কমে আসতে পারে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১০ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত ৫ অর্থবছরের মধ্যে শুধু ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা বরাদ্দের তুলনায় বেশি অর্থ ব্যয় করেছিল। এছাড়া বাকি চার অর্থবছরেই ৪০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ অব্যয়িত ছিল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বরাদ্দ ছিল ৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়টি ব্যয় করেছিল ১ কোটি ২৫ লাখ ৮৭ হাজার এবং অব্যয়িত ছিল প্রায় ৭০.৩৮ শতাংশ অর্থ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং প্রকৃত ব্যয় ছিল ১ কোটি ৯৯ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। অব্যয়িত ছিল ৫৭.৫২ শতাংশ অর্থ। ২০২০-২১ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৫ কোটি টাকা এবং প্রকৃত ব্যয় ছিল ২ কোটি ৭২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। ব্যয় করতে পারেনি ৪৫.৫৯ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৮ কোটি এবং প্রকৃত ব্যয় ছিল ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। ব্যয় হয়নি ৪১.৯০ শতাংশ অর্থ। শিক্ষকদের অভিযোগ, গবেষণার বিল উত্তোলনে বিভিন্ন জটিলতা, গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার সরঞ্জাম সরবরাহের প্রশাসনের ব্যর্থতায় প্রকল্প হাতে নিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ শিক্ষক গবেষণা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

গবেষণার প্রক্রিয়া আরো অনেক সহজ হওয়া উচিত জানিয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, যারা প্রকল্পের জন্য আবেদন করেন, তাদের চিন্তা থাকে গবেষণায়, সুতরাং পেপার ওয়ার্ক করার সঙ্গে সব ডকুমেন্টস প্রস্তুত রাখা এক ধরনের জটিলতা। কত শতাংশ ভ্যাট, ট্যাক্স কত টাকার ওপরে গেলে টেন্ডারে যেতে হবে, কত কমে গেলে টেন্ডারে যেতে হবে না, কোনো আইটেম রিচার্স গ্রেন্টের মাঝে থাকতে পারে, কোনটায় পারে না এসব ব্যাপারে পরিষ্কার একটা নির্দেশনা থাকা দরকার। তিনি আরো বলেন, একটা সুনির্দিষ্ট পরামর্শ হলো, এখানে আরেকটা পক্ষ দরকার স্টোর কিপার যারা আমার পরামর্শ অনুযায়ী চলবে তারাই কাগজপত্র প্রস্তুত করবে, আমি যখন প্রজেক্ট সাবমিট করব তখন ওই কাগজগুলোর সঙ্গে এটাও সাবমিট করব। তখন স্বচ্ছতাও নিশ্চিত থাকে। তাহলেই গবেষণায় গতি আসে, যিনি গবেষণা করবেন তাকে এসব বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে না। প্রক্রিয়াটা তাহলে অনেক সহজ হয়ে যাবে, আমাদের গবেষণায়ও আগ্রহ বাড়বে।

অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ড. মো. ইলিয়াস হোসাইন বলেন, ‘গবেষণা খাতে খরচের হিসাবগুলো মেলানো একটি সাধারণ সমস্যা। এ খাত-সে খাত নানা হিসাব-নিকাশেও জটিলতা হচ্ছে। এছাড়া গবেষণায় বরাদ্দের তুলনায় খরচ বেশি হচ্ছে। একজন রিচার্স ডিরেক্টর দরকার, যে এগুলোর দায়িত্বে থাকবেন।’ প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. খালেদ হোসাইন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘মূলত আমাদের গবেষণার আগ্রহ কমছে। বিল ভাউচারেও ঝামেলা হচ্ছে অস্বীকার করা যাবে না। এটা মাইনোর সমস্যা, এতে আলাদা একটা বিভাগ কাজ করলে প্রক্রিয়াটা সহজ হয়ে যেত।’ একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, ‘আমাদের খেয়াল রাখতে হবেÑ গবেষণায় বরাদ্দ করা টাকা ফেরত যাচ্ছে কেন? আমাদের গবেষণার আগ্রহ কমছে কেন? তবে আলাদা আলাদা খাতে হিসাব মেলাতেও সমস্যা হচ্ছে বিল-ভাউচারের স্বচ্ছতাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এখানে আলাদাভাবে লোক রাখা উচিত। যারা অফিসিয়াল কাজগুলো করবে আর গবেষকরা গবেষণায় সময় দেবে।’

শিক্ষকদের দাবি গবেষণার বিল উত্তোলনের কাজগুলো সম্পন্ন করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা সেল বা অফিস থাকা দরকার। গবেষণা সেল চালু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি। গবেষকরা প্রস্তাব করছেন, গবেষণা প্রকল্পের কাজগুলো একজন প্রফেসরের অধীনে সব কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে। গবেষকরা অনুমোদন পেলে সহজেই এ সেলের মাধ্যমে গবেষকের একাউন্টে টাকা চলে যাবে। ফলে শিক্ষকরা গবেষণায় সময় দিতে পারবেন। এতে স্বচ্ছতাও নিশ্চিত হবে বলে জানান তারা। গবেষণা সেল তৈরি ও প্রকল্পের বিল উত্তোলনের সমস্যা উত্তরণে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিবি অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, সমস্যাগুলো সমাধানে প্রয়োজনে ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা পরামর্শ করে নেব। যতটুকু সম্ভব সহজীকরণের চেষ্টা করব। তিনি আরো বলেন, শিক্ষকের কাজ দুটিÑ শিক্ষাদান এবং গবেষণা। গবেষণার বিকল্প নেই কিন্তু প্রতিনিয়তই শিক্ষকদের গবেষণায় আগ্রহ কমছে এটি আশঙ্কাজনক। গবেষণার পাশাপাশি দক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থাপনার সামর্থ্য থাকতে হবে, কখনো হাল ছাড়া যাবে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close