বেড়া-সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি

  ২৫ মে, ২০২৪

‘যমুনা ১০ বার আমার ঘরবাড়ি গিলে খাইছে’

১৫ দিনে নদীর বুকে বিলীন অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি ও অর্ধশত বিঘা ফসলি জমি

‘প্রতি বছরই বর্ষাকালে আমাগেরে চরের মানুষ নদীভাঙনে বাড়িঘর জমি হারায়। এবার এই অসময়ে নদীতে ভাঙন শুরু হইছে। কয়দিন আগে আমার দুই বিঘা বোরো ধান ও এক বিঘা তিল খেত নদীদে গেছে। এই জীবনে ১০ বার যমুনা আমার ঘরবাড়ি গিলে খাইছে। আমাকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে সর্বনাশা যমুনা। বর্ষার পর নতুন বাড়ি করেছি, এক সপ্তাহ এই ভাঙন থাকলে এটাও হয়তো নদীতে চলে যাবে। সরকারের কাছে আকুল আবেদন, নদীতে যেন জিওব্যাগ ফেলে আমাদের রক্ষা করে।’ কথাগুলো বলেন হাটাইল চরের কৃষক জয়নাল মোল্লা। শুধু তিনি নন, অসময়ে যমুনার তীব্র ভাঙনে গত পনের দিনে অর্ধশত বিঘা ফসলি জমি ও অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে ফসলি জমি, বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কবরস্থান ও মসজিদ। এমন ঘটনা পাবনার বেড়া উপজেলায়। ভাঙনে আবাদি জমি ও বসতভিটা হারানোর শঙ্কায় অনেকে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। নদীভাঙন থেকে রক্ষা পেতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন গ্রামবাসী। নদীভাঙন রোধে এবারও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। নতুন করে ভাঙনের মুখে পড়েছে উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের চর নাগদাহ, হাটাইল আরালিয়া চর সাড়াসি গ্রামসহ নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের লেওলাই পাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। চরসাড়াসি ও চরনাগদাহ গ্রামের ভাঙনকবলিত অসহায় মানুষগুলো অন্যথায় চলে যাচ্ছেন। অনেকেই আত্মীয় বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। অসময়ে এখানে দেখা দিয়েছে যমুনা নদীভাঙন। এরই মধ্যে ১৫ দিনে প্রায় লেওলাইপাড়া গ্রামে অর্ধশত বিঘা ফসলি জমি ও চড়সাড়াসি গ্রামের ২০টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বসবাসের শেষ সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে অনেকেই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নতুন ভারেঙ্গার লেওলাইপাড়া গ্রামের নদীপাড়ের ফসলি জমি ভেঙে বিলীন হচ্ছে নদীতে। আর সে দৃশ্য দেখে বাসিন্দাদের চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা শুধু খোঁজখবর নেয়। কিন্তু কোনো কাজ শুরু করেননি। এবার ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে এখানকার বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনা, কমিউনিটি ক্লিনিক বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে গ্রামবাসীর দিন কাটছে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠায়। তাই ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

চরনাগদাহ গ্রামের কৃষক ইমদাদুল হক বলেন, ‘নদীভাঙনে আমি পাঁচবার বসতভিটাসহ প্রায় ১০ বিঘা জমি হারিয়েছি। সপ্তাহ খানেক আগে আবারও বসতভিটা হারিয়েছি। তিনি বলেন, ‘আমার এ দুর্দিনে কেউ পাশে এসে দাঁড়ায়নি। কারো কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমাদের গ্রামের একটি পাড়া নদীতে চলে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভাঙন আরো ভয়াবহ আকার ধারন করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।’

নতুন ভারেঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আবু দাউদ জানান, ‘গত দুই সপ্তাহ ধরে আমার ইউনিয়নের লেওলাইপাড়া গ্রামে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। গত কয়েক দিনে প্রায় অর্ধশতাধিক ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নিজ হাতে মাটি ফেলে উদ্বোধন করা মুজিব বাঁধ নামের প্রধান বাঁধসহ সরকারি স্কুল, কবরস্থান, মসজিদ, মাদরাসাসহ ঘনবসতি দুই-তিনটি গ্রামের কয়েক হাজার বসতবাড়ি। ভাঙন রোধে দ্রুত জিওব্যাগ না ফেললে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতম কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে তিনি জানান।’

বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোরশেদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি খোঁজখবর নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, ‘এরই মধ্যে বেড়ার যমুনা নদীর ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছি। আমরাও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। অতি দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close