শাহ্ আলম খান, চাঁদপুর

  ২৫ মে, ২০২৪

নিষিদ্ধ জালে ধ্বংস হচ্ছে রেণু পোনা

চাঁদপুরের মতলব (উত্তর) উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চর ভৈরবী পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার পদ্মা-মেঘনা নদীর সীমানা। এসব এলাকায় প্রায় ৪৪ হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এ ছাড়া অনিবন্ধিত জেলেও আছে অনেক। এসব জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ছোট ফাঁদের নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ ধরছে। এতে ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছের রেণু পোনা।

সম্প্রতি সময়ে নদী উপকূলীয় এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ছোট মাছ (রেণু পোনা) ধরার চিত্র। আর এসব রেণু পোনা ধরে অবাধে বিক্রি হচ্ছে জেলা শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মতলব (উত্তর), চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার উপকূলীয় এলাকার জেলেরা নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, চরঘেরা জাল, চায়না দোয়াইর চাঁই, পাঙাশ ধরার বড় সাইজের চাঁই, চিংড়ি পোনা নিধনকারী পুশ নেট, বাঁধা জাল ও গচি জাল ব্যবহার করে ছোট মাছ ও রেণু পোনা ধরছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মৎস্য বিভাগ ও কোস্টগার্ড চাঁদপুর যৌথ অভিযান করে মুন্সীগঞ্জ থেকে হিজলা পাচারের সময় ৬৫ লাখ মিটার নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল জব্দ করে। এ ছাড়া জাটকা সংরক্ষণ অভিযানের দুই মাস ও মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের অভিযান ছাড়া নিষিদ্ধ জাল বছর জুড়ে জব্দ হচ্ছে। নিষিদ্ধ জাল মাছের পোনা নিধন হয় এমন সংবাদের ভিত্তিতে সম্প্রতি অভিযান পলিচালনা করে মতলব উত্তর ও হাইমচর উপজেরা মৎস্য বিভাগ। হাইমচর উপজেলা মৎস্য বিভাগ গত ১৭ মে ছোট প্রজাতির মাছ ধ্বংসকারী নিষিদ্ধ ৪০ হাজার মিটার চরঘেরা জাল, ২০টি চায়না দোয়াইর চাঁই ও ৫টি চিংড়ি পোনা নিধনকারী পুশ জাল জব্দ করে আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করে।

মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য বিভাগ গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অভিযান চালিয়ে ১৫টি পাঙাশ মাছের পোনা ধরার চাঁই, ১০ হাজার মিটার নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, ৩০টি চায়না দুয়াইর রিং চাই জব্দ করে জনসমুক্ষে পোড়ানো হয়। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস এই অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, পোনা মাছ রক্ষায় আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

হাইমচর মেঘনা নদীতে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা নিধন করছে অসাধু জেলেরা। প্রতিদিন নিধন করা হয় কয়েক কোটি মাছের পোনা। বাঁধা জাল, গচি জাল ও চায়না জালসহ নিষিদ্ধ জালগুলো নদীতে পেলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা নিধন করে চর ভৈরবী ইউনিয়নের বিভিন্ন বাজারে এবং মাছের আড়তে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হয়।

চর ভৈরবী মাছের আড়তদার নজরুল ফকির বলেন, আমার আড়তে গচি জালের মাছ বিক্রি হয়। কিন্তু বাঁধা জাল কিংবা চায়না জালের মাছ বিক্রি হয় না। অন্যরা বিক্রি করে কি না জানি না।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ইউসুফ জুবায়ের শিমুল জানান, আমাদের চর ভৈরবী আড়তে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে নিধন করা মাছের পোনা বিক্রির বিষয় জানতে পেরেছি। আমি জেলেদের মাছের পোনা ধরা ও বিক্রি না করার জন্য নিষেধ করেছি। তারা আমার কথা না মানলে তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হবে।

চাঁদপুর সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. তানজিমুল ইসলাম বলেন, নিষিদ্ধ জালে মাছ ধরার বছর জুড়েই নিষিদ্ধ থাকে। মৎস্য বিভাগ কখনোই এসব জালের অনুমোদন দেয় না। জেলেরা যাতে করে সুতার জাল ব্যবহার করে সে জন্য উৎসাহ দিতে বিনামূল্যে জালও দেওয়া হচ্ছে। তারপরও এক শ্রেণির জেলে নদীতে নেমে ছোট পোনা মাছ ধরছে। নদীর মৎস্য সম্পদ রক্ষায় আমাদের জেলা জুড়ে অভিযান অব্যাহত আছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close