তুহিন আহমদ, সিলেট

  ২৫ মে, ২০২৪

সিলেটের নতুন গ্যাসে স্বস্তি মিলবে

ভূতাত্ত্বিক কারণে খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ সিলেট। তার মধ্যে গ্যাস-তেল অন্যতম। গ্যাস ও তেল অনুসন্ধানের জন্য নেওয়া হয়েছে ত্রিমাত্রিক জরিপের পরিকল্পনাও। এসব জরিপে পাওয়া যাচ্ছে ইতিবাচক ফল। আর এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটিড অনুসন্ধানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় অনুসন্ধানে সিলেটের আরেকটি কূপে গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। খনন কাজ শেষে সিলেটের কৈলাশটিলা গ্যাস ক্ষেত্রের ৮ নম্বর কূপে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড। গ্যাস অনুসন্ধানের সঙ্গে যুক্ত একটি কারিগরি সূত্র জানায়, এতে দেশে এ সংকটের সময় অর্থনীতিতে অনেকটা স্বস্তি দেবে। কৈলাশটিলার ৮ নম্বর কূপের ৩ হাজার ৪৪০ থেকে ৫৫ হাজার ফুট গভীরতায় গ্যাস পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান। সিলেট গ্যাস ফিল্ড সূত্রে জানা যায়, তিন মাসের মধ্যে এ গ্যাস কূপ থেকে পূর্ণাঙ্গরূপে গ্যাস উত্তোলনের আশা রয়েছে। বর্তমানে দৈনিক ২১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পরীক্ষামূলকভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে কৈলাশটিলার ৮ নম্বর কূপ থেকে খনন কাজ শুরু করে বাপেক্স। এ কূপ খননে খরচ হয় প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।

সিলেট গ্যাস ফিল্ড সূত্রে আরো জানা গেছে, উৎপাদনে থাকা কূপগুলো থেকে প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। চলতি বছরের মধ্যে আরো কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শেষে সেই উৎপাদন ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে বাড়ার আশা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। আর সরকারের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে পারলে শুধু এ কোম্পানি থেকেই প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে ২৫০ মিলিয়ন গ্যাস যুক্ত করা সম্ভব।

সিলেট গ্যাসফিল্ডস সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ ডিসেম্বর সিলেটের হরিপুর এলাকায় ১০ নম্বর কূপ থেকে চার স্তরের তেল গ্যাস পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। চার স্তরের মধ্যে একটি স্তরে সম্পূর্ণ তেলের খনি রয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তার ঠিক পাশেই টুপিটিলায় আরো গ্যাস ও তেল পাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানা গেছে। টুপিটিলায় তেল ও গ্যাস দুটোই অনুসন্ধানের জন্য কূপ খনন করা হবে শীঘ্রই।

সিলেট গ্যাসফিল্ডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, গ্যাস ও তেল অনুসন্ধানের জন্য সিলেটের ১ হাজার ৬৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ত্রিমাত্রিক জরিপের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ৯০০ বর্গমিটার এলাকায় জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। এ জরিপের রিপোর্ট ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। নতুন এ কূপ থেকে প্রচুর পরিমাণে তেল ও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

এদিকে, কৈলাশটিলার ৮ নম্বর কূপ নিয়ে গত ৭ মাসের মধ্যে সিলেটে ৪টি কূপে গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। গত ২৭ জানুয়ারি রশিদপুরের ২ নম্বর কূপে গ্যাসের নতুন স্তরের সন্ধান পাওয়া যায়। যার পরিমাণ প্রায় ১৫৭ মিলিয়ন ঘনফুট। এর আগে গত ২৬ নভেম্বর দেশের সবচেয়ে পুরোনো গ্যাসক্ষেত্র হরিপুরের ১০ নম্বর কূপে গ্যাসের সন্ধান মেলে। এর আগে ২২ নভেম্বর সিলেটের কৈলাশটিলায় পরিত্যক্ত ২ নম্বর কূপ থেকে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ শুরু হয়। এখান থেকে দৈনিক ৭০ লাখ ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে।

সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান এ ব্যাপারে বলেন, গ্যাস ও তেলে সিলেটে উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আমরা কৈলাশটিলার ৮ নম্বর কূপে গ্যাসের সন্ধান পেয়েছি। বর্তমানে সেখানে আরো পরীক্ষা চলছে। আশা করি আমরা ভবিষ্যতে জাতীয় গ্রিডে আরো বেশি গ্যাস সরবরাহ করতে পারব। জ্বালানি আমদানির কারণে দেশের অর্থনীতি যখন চাপে আছে , সে সময় এ গ্যাসপ্রাপ্তি দেশের মানুষকে স্বস্তি দেবে বলে আশা করছি। শিল্পখাতে গ্যাসের সাপ্লাই বড়বে। বাসাবাড়িতেও গ্যাসের চুলার চাপ বাড়বে।

সিলেটের হরিপুরে প্রথম গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায় ১৯৫৫ সালে। এরপর আবিষ্কার হতে থাকে একের পর এক গ্যাসক্ষেত্র। বর্তমানে সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের আওতায় পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। সেগুলো হলো হরিপুর গ্যাসফিল্ড, রশীদপুর গ্যাসফিল্ড, ছাতক গ্যাসফিল্ড, কৈলাশটিলা গ্যাসফিল্ড ও বিয়ানীবাজার গ্যাসফিল্ড। এর মধ্যে ছাতক গ্যাসফিল্ড পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। বাকিগুলোর মধ্যে ১৪টি কূপ থেকে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ১০৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close