নরসিংদী প্রতিনিধি

  ২৪ মে, ২০২৪

নরসিংদীতে দুপক্ষের সংঘর্ষ গুলি-টেঁটাবিদ্ধ ৭

নরসিংদীর সদর উপজেলায় সরকারি প্রকল্পের বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে গুলি ও টেঁটাবিদ্ধ হয়ে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার আলোকবালীর ইউনিয়নের খোদাদিলায় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সদর মডেল থানার ওসি তানভীর আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আলোকবালীর ইউনিয়ন যুবলীগকর্মী জাকির হোসেন এবং ইউনিয়ন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদিন পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। আহতদের মধ্যে তিনজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- কুতুব উদ্দিন (৩৫), হক আবদুল্লাহ (১৬), তৈয়ব মিয়া (১৮)। তাদের মধ্যে কুতুব উদ্দিন হচ্ছেন বিএনপি নেতা জয়নালের সমর্থক এবং তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে মেঘনা নদী ও তার শাখা নদীর নাব্য বৃদ্ধিতে দুই মাস আগে নদী থেকে বালু উত্তোলন শুরু হয়। প্রকল্প অনুযায়ী, এসব বালু নদীর পাশে রাখার কথা হলেও প্রভাব বিস্তার করে আলোকবালী ইউনিয়নের সাতপড়া ও খোদাদিলাসহ বিভিন্ন গ্রামের ফসলি জমি, পুকুর, ডোবাসহ বিভিন্ন স্থান ভরাট করা হচ্ছে। এসব ভরাট করা বালুর জন্য প্রতি শতাংশ জমি ভরাটের জন্য জয়নাল আবেদিন ও ইউপি চেয়ারম্যান পক্ষকে ১০-১৫ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। ফলে জাকির পক্ষ তাদের ভাগ না পাওয়া ও পূর্ব আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘ দিনের বিরোধ থেকে এ সংঘর্ষের হয়। আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আসাদ উল্লাহ বলেন, যুবলীগ কর্মী জাকিরসহ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীকে বিএনপির ইউনিয়ন শাখার সদস্য সচিব কাইয়ুম ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদিনের লোকজন অত্যাচার ও নির্যাতন করে চার বছর ধরে বাড়িঘর ছাড়া করে রেখেছে। তারা জোরপূর্বক নিরীহ মানুষের বাড়িতে সরকারি প্রকল্পের বালু দিয়ে ভরাট করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। মূলত এলাকার নিরীহ মানুষ তাদের অত্যাচারের প্রতিবাদ থেকে এ সংঘর্ষের খবর পেয়েছি। তবে, এ ঘটনায় আমার সংশ্লিষ্টতা নেই। এখানে চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দীপুর লোকজন ও বিএনপির লোকজন দ্বন্দ্ব জড়িয়েছে।

ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দীপু বলেন, ‘পেশাদার ডাকাত জাকির ও তার লোকজন পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও ভাঙচুরসহ লোকজনকে আহত করেছে।’ একই কথা জানান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফজলুর রহমান ফাহিম। ইউনিয়ন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদিন বলেন, জাকির ডাকাতের নির্দেশে ও খোদাদিলা গ্রামের মালেক মেম্বারের ছেলে আল আমিনের অর্থায়নে নিরীহ এলাকাবাসীর ওপর হামলা করেছে। আমরা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে আমাদের লোকজনকে গুলি করা হয়। সরকারি বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে নেই, সরকারের লোকজনই নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের ওপর মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করার ধান্ধা। এটা রাজনৈতিক কোনো দ্বন্দ্ব নয়।

ওসি তানভীর বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ দিনের বিরোধ রয়েছে। জাকির পক্ষ এলাকায় প্রবেশ করতে চাইলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। তিনি বলেন, খবর পেয়ে ভোর থেকে আমরা ঘটনাস্থলে রয়েছি। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) মোহাম্মদ মাহমুদুল কবির বাশার বলেন, গুলি ও টেঁটাবিদ্ধ অবস্থায় সাতজনকে আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close