প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৪ মে, ২০২৪

ডায়াবেটিসে আম খাওয়ার পরামর্শ

বাজারে গাছপাকা আম ওঠা শুরু হয়েছে। আম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, রাজশাহী বা চুয়াডাঙ্গার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুপরিচিত নানা জাতের আম সংগ্রহ শুরু হয়েছে। আম শুধু স্বাদের জন্য নয়, ফলটি বিশেষ পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। আমে প্রাকৃতিকভাবেই চিনির পরিমাণ বেশি থাকায় শরীরের সুগারের মাত্রা বেড়ে যায়। এ কারণে অনেকে বলে থাকেন, ডায়াবেটিস রোগীদের আম খাওয়া উচিত না।

একজন মানুষের দৈনিক কতটুকু আম খাওয়া উচিত, এটি আসলে প্রশ্নসাপেক্ষ একটি বিষয়। কারণ একজন মানুষের শারীরিক পরিস্থিতি কেমন, তার ওপর নির্ভর করবে যে, ওই ব্যক্তি কতটুকু আম খেতে পারবেন, কতটুকু পারবেন না। এ বিষয়ে ল্যাবএইড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম বলেন, একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ অনায়াসেই দৈনিক দুটো আম খেতে পারেন। সেক্ষেত্রে, ফজলি আম খাওয়াটা বেশি ভালো বলে জানান তিনি। কারণ ফজলি আমে ভিটামিন এ, পটাশিয়াম, বিটা ক্যারোটিনের পরিমাণ অনেক। তিনি জানান, কিডনি রোগীদের ডাক্তার ও পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে আম খাওয়া উচিত। কারণ আমে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে, যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া, যুক্তরাজ্যে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯ থেকে ৬৪ বছরের পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৪০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি প্রয়োজন। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত খাদ্যতালিকায় এটি ৬০ মিলিগ্রাম। এখন, যেহেতু এক কাপ আমে প্রায় ৬০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে, সেহেতু অন্য কোনো জটিলতা না থাকলে একজন সুস্থ মানুষ ওই পরিমাণ আম খেতেই পারেন।

তাসনিম জানান, প্রতি ১০০ গ্রাম আমে ৭৯ থেকে ৮২ গ্রাম ক্যালরি পাওয়া যায়। এছাড়া, একটি আমের ৭৫ থেকে ৮৫ শতাংশ পানি থাকে। তবে মজার বিষয় হলো, আমে কোনো ‘কোলেস্টেরল’ থাকে না। এমনকি এতে ক্ষতিকর লবণও নেই। আমে কোলেস্টেরল কম থাকলেও এতে শর্করা বেশি থাকায় এবং অন্যান্য খাবারের বাড়তি ক্যালরির জন্য এটি পরবর্তী সময়ে আমাদের শরীরে গিয়ে শর্করা ই ফ্যাট হিসেবে জমা হয়।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, আমে যেহেতু ক্যালরি অনেক, তাই বেশি আম খেলে ওজন বেড়ে যাবে। সেজন্য যার ওজন বেশি থাকবে, সে আরো কম আম খাবে। আর কেউ আম না হয় খেল, কিন্তু আম খেলে সে অন্য কিছু খাবে না। তাহলেই তো হলো। সকালে বা দুপুরে আম খেল, তার পরিবর্তে ভাত খেল না। তাহলে তো মোটা হবে না।

এ বিষয়ে তাসনিম বলেন, আমের ক্যালরি এবং শর্করা তুলনামূলক বেশি। তাই কেউ সারা দিনের মোট ক্যালরি চাহিদার বেশি আম খেলে সেটা আমাদের শরীরে গিয়ে ফ্যাট হিসেবে জমতে পারে। যার কারণে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। পরিমিত খেলে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা কম।

২০১৮ সালে প্রকাশিত ‘ম্যাংগো অ্যান্ড ডায়াবেটিস’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে দেখা গেছে যে, ডায়াবেটিস রোগীদের আম খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া উচিত না। তবে তাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আম খেতে হবে। এই গবেষণায় বলা হয়েছে, যদি সতর্কতার সঙ্গে আম খাওয়া হয়, তাহলে ডায়াবেটিসের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে না। তবে একসঙ্গে অনেকখানি না খেয়ে অল্প আম খাওয়া উচিত। যেমন, একজন ডায়াবেটিক রোগী দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম আম খেতে পারেন। অথবা দিনের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে তিনি ৫০ গ্রাম করে তিনবারও আম খেতে পারেন। তবে খাবার খাওয়ার পর এমনিতেও একজন মানুষের রক্তে সুগারের পরিমাণ কিছুটা বেশি থাকে। সেখানে আম খেলে এটি আরো বেশি পরিমাণে বাড়বে। সেই সঙ্গে অন্যান্য শর্করার সঙ্গে আম বেশি খেলেও ডায়াবেটিস বাড়তে পারে।

এ বিষয়ে তাসনিম পরামর্শ দেন, দুই বেলার মেইন খাবার খাওয়ার পরে আম খাওয়া ভালো। অথবা খাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা পর আম খাওয়া উচিত। আমের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স মাঝারি মাত্রার, ৬০ থেকে ৮৫। তাই বেশি আম খেলে রক্তে শর্করা বেড়ে যেতে পারে। একজন ডায়াবেটিস রোগী দৈনিক একটি ছোট আম বা অর্ধেক মাঝারি আম খেতে পারেন। এ বিষয়ে ডা. খানও বলেন, ‘আম বেশি খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অসুবিধা হবে। তাই যত এড়িয়ে চলবে, তত ভালো। কিন্তু এখন যেহেতু এটা মৌসুমি ফল, সেহেতু একবারে না খেলে কেমন হয়? কম খাক, তাহলেই হলো। এটা এ রকম না যে, একেবারেই খাবে না।

তিনি আরো বলেন, এক টুকরো আম খেলে যে সমস্যা হয়, তার চেয়ে বেশি হয় যদি কেউ দুই চামচ পরিমাণ চিনি খান। একটু আম খেলে কী হবে? আবার কমে যাবে।

সুতরাং, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চললে কোনোপ্রকার সমস্যা ছাড়াই ডায়াবেটিস রোগীরা পরিমিত পরিমাণ আম খেতে পারবেন। সূত্র : বিবিসি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close