নওগাঁ প্রতিনিধি

  ০৯ মে, ২০২৪

নওগাঁর আত্রাই নদী

শুকিয়ে গেছে আত্রাই নদী বোরো আবাদে ঝুঁকি

বন্ধ তিন শতাধিক সেচপাম্প * ৪৫ হাজার বিঘা বোরো আবাদে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা * নদীটি দ্রুত খনন করার দাবি কৃষক ও জেলেদের

পানিশূন্য হয়ে পড়েছে শস্যভাণ্ডারখ্যাত জেলা নওগাঁর আত্রাই নদী। সময়ের আগেই পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বোরো চাষাবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় চাষিদের। বর্তমানে এই নদীতে পানি না থাকায় এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে নদীকেন্দ্রিক ভাটি অংশের প্রায় ৩০০-এর বেশি সেচপাম্প। যার ফলে চরম ঝুঁকিতে পড়েছে এসব সেচ পাম্পের আওতায় চাষ হওয়া প্রায় ৪৫ হাজার বিঘা জমির বোরো ধানের আবাদ। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত কিংবা নদীতে পানি না এলে মৌসুমের বোরো আবাদে ফলন বিপর্যয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

আত্রাই নদীর পানি দিয়েই মাঠের জমিতে চাষ হয় বোরো, আমন ও আউশ ধান। এছাড়া দুপাড়ের শত শত হেক্টর জমিতে ধান, আলু, গম, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করেন কৃষকরা। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে রবি মৌসুমের শুরুতেই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে নদীর পানি, যার ফলে চরম দুশ্চিন্তায় পড়তে হচ্ছে চাষিদের। এছাড়া ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির অফুরন্ত মাছের উৎস ছিল এই নদী। যার কারণে নদীপাড়সংলগ্ন এলাকাগুলোয় গড়ে উঠেছিল অসংখ্য জেলে পরিবারের বসতি। কিন্তু নদীটি শুকিয়ে যাওয়ায় মাছের সেই উৎস এখন শুধুই অতীত। অপরিকল্পিতভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন এবং নদীপাড়ের মাটি কেটে নেওয়ার চলছে প্রতিযোগিতা। সেই সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার না করার ফলে নদীটির নাব্য হারানোর পাশাপাশি হারাচ্ছে স্বাভাবিক গতি। এর ফলে খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাচ্ছে নদীর পানি। ভরাট হয়ে যাওয়া এই নদী দ্রুত খনন না করা হলে অস্তিত্ব হারাবে বলেও ধারণা করছেন স্থানীয়রা।

মান্দা উপজেলার চকবালু গ্রামের জাহাঙ্গীর আলী বলেন, পানির অভাবে গত পাঁচ বছর ধরে কোনো আবাদ করতে পারিনি। বোরো মৌসুম শুরুর আগেই নদীর পানি শুকিয়ে যায়। পানির অভাবে ফসলের এমন অবস্থা হয় যে, ফসলের দিকে তাকালে চোখে পানি চলে আসে। একই গ্রামের মৎস্যজীবী সুমন বলেন, ছোটবেলায় দেখেছি- নদীতে সারা বছর পানি থাকত, যেখানে মাছ ধরে ভালোভাবে সংসার চালানো যেত। কিন্তু বর্তমানে বছরের অর্ধেক সময় নদীতে পানি থাকে না, যার ফলে আগের মতো আর মাছ পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হযে এখন অনেকে পেশা বদলাচ্ছেন। তাই দ্রুত নদীটি খনন না করলে দেশীয় মাছ আর পাওয়া যাবে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, সময়মতো ফসলি জমিতে সেচ দিতে না পারলে ফসল ভালো না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ফলন বিপর্যয়ের কথা চিন্তা করে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার্থে আত্রাইসহ শুকিয়ে যাওয়া নদীগুলো পুনরায় খনন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী ফইজুর রহমান বলেন, ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে দেশে যে ৬টি হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে, তার মধ্যে দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে নওগাঁর এই বরেন্দ্র অঞ্চল। এই অঞ্চলে ভূ-উপরিস্থ পানির সংকট নিরসনে ‘৬৪ জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন’ প্রকল্পের আওতায় আত্রাই নদীসহ ৪৮টি ছোট নদী ও খাল খনন করার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, নওগাঁ। এই প্রকল্পের আওতায় নদী খনন করা হলে নাব্য বৃদ্ধির পাশাপাশি নদীতে পর্যাপ্ত পানি থাকার ফলে কৃষকদের সেচের পানির অভাব পূরণ হবে। একই সঙ্গে নদীতে দেশি প্রজাতির মাছের প্রজনন বৃদ্ধি পাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close