নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

দেশের বিমানবন্দরগুলো দিয়ে রেকর্ড যাত্রীর যাতায়াত

দেশের বিমানবন্দরগুলো দিয়ে ২০২৩ সালে রেকর্ড ১ কোটি ৭৪ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেছেন। এটি আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৩.৪ শতাংশ বেশি। এদের অধিকাংশই আন্তর্জাতিক যাত্রী। আন্তর্জাতিক যাত্রীর সংখ্যা গত বছর প্রায় ২.৬৭ মিলিয়ন বেড়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ এবং কোভিড-পূর্ব সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৭ শতাংশ বেশি। রেকর্ড যাত্রী যাতায়াতের সুবাদে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রায় ২ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা আয় করেছে বলে উঠে এসেছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (ক্যাব) তথ্যে। শাহজালাল বিমানবন্দরের ২০২১-২২ ও ২০২০-২১ অর্থবছরের আয় ছিল যথাক্রমে ১ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা ও ৯৪২ কোটি টাকা।

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, বিমান ভ্রমণ করে বাংলাদেশ থেকে বাইরে যাওয়া ও দেশে আসা দুটোই বেড়েছে। শ্রম রপ্তানি, শিক্ষাগত অভিবাসন, দেশের বাইরে চিকিৎসাগ্রহণ, অবসর পর্যটন ও ব্যবসায়িক ভ্রমণ বৃদ্ধিই এর মূল কারণ।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের সিইও স্কোয়াড্রন লিডার লুৎফর রহমান বলেন, ২০২১ সালে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন পূর্বাভাস দিয়েছিল যে, বাংলাদেশ বিমানযাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে ২০২৪ সালের মধ্যে কোভিড-পূর্ব পর্যায়ে ফিরে যাবে। তবে বাংলাদেশ প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুত এই প্রক্ষেপণ পেরিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, এর কারণ হচ্ছে, আমাদের প্রধান যাত্রীরা উপার্জনকারী। অন্যান্য পর্যটক ও ব্যবসায়ী ভ্রমণকারীদের আগেই তারা বিদেশে ভ্রমণ শুরু করেছেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর ওমরাহ যাত্রীর সংখ্যাও বেড়েছে।

ক্যাবের তথ্য অনুসারে, সংস্থাটি ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ১ হাজার ৯১১ কোটি টাকা আয় করেছে। এর মধ্যে শুধু হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই আয় হয়েছে ১৫৯৭ কোটি টাকা। বাকি সাতটি বিমানবন্দর একত্রে মাত্র ৩১৪ কোটি টাকা আয় করেছে।

ঢাকা বিমানবন্দরের বর্তমান ধারণক্ষমতা বার্ষিক ৮০ লাখ যাত্রী। তবে ফ্লাইট ব্যবস্থাপনার অপ্টিমাইজেশনের মাধ্যমে গত বছর এ সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ক্যাব বলছে, তৃতীয় টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হওয়ার পর শাহজালাল বিমানবন্দর বছরে প্রায় ২২ মিলিয়ন যাত্রী ধারণ করতে পারবে।

বর্তমানে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৩৫টি এয়ারলাইনসের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে ২০২৩ সালের দুই নবাগত ইজিপ্টএয়ার ও ফ্লাইনাসও রয়েছে বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া এয়ার চায়না, এয়ার প্রিমিয়া, ফিটস এয়ার, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনস এবং রয়েল ব্রুনাই এয়ারলাইনসসহ বেশ কয়েকটি নতুন এয়ারলাইনস অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনা আরম্ভ করবে।

আন্তর্জাতিক যাত্রী বাড়ার কারণ : জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ গত বছর রেকর্ড ১.৩ মিলিয়ন প্রবাসী কর্মী বিদেশে পাঠিয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। এছাড়া ইউনেস্কোর তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ৫০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার জন্য বিদেশে যান।

বাংলাদেশে তিনটি আন্তর্জাতিক ও পাঁচটি স্থানীয় বিমানবন্দর রয়েছে। ২০২৩ সালে ঢাকা বিমানবন্দরে প্রায় ৯৪ লাখ ৮৯ হাজার আন্তর্জাতিক যাত্রী এসেছে- তার আগের বছর এ সংখ্যা ছিল প্রায় ৭৮ লাখ ২৮ হাজার। গত বছর আন্তর্জাতিক যাত্রীদের ৫২ শতাংশ এই বিমানবন্দর দিয়ে দেশের বাইরে গেছে। এছাড়া গত বছর এ বিমানবন্দরে প্রায় ২১ লাখ ৮৩ হাজার যাত্রী এসেছে, তার আগের বছর এ সংখ্যা ছিল প্রায় ২৩ লাখ ৩১ হাজার।

ঢাকা বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘গত এক বছরে ট্রানজিটসহ সব বিভাগে যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। ঢাকা থেকে টরন্টো ও টোকিও পর্যন্ত বিমানের সরাসরি ফ্লাইটের যাত্রীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আসে। এছাড়া অন্যান্য এয়ারলাইনসের অনেক যাত্রী ঢাকা বিমানবন্দরের ট্রানজিট ব্যবহার করে।

শুধু নতুন এয়ারলাইনসগুলো ঢাকা থেকে ফ্লাইট শুরু করার কারণেই গত বছর ফ্লাইটসংখ্যা বাড়েনি, বরং বিদ্যমান এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইটের সংখ্যা বৃদ্ধিও এর অন্যতম কারণ।

কামরুল ইসলাম বলেন, ‘জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস নতুন রুট চালুর পাশাপাশি তাদের বিদ্যমান ফ্লাইটের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়িয়েছে। একইভাবে সৌদি আরবও তাদের ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি বাড়িয়েছে। ফ্লাইটের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানো অন্যদের মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়া, ভিস্তারা, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস ও এমিরেটসও রয়েছে।’

২০২৪ সালের অক্টোবরে শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালু এবং বিমানের বহর বৃদ্ধির মাধ্যমে যাত্রীর সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন কামরুল ইসলাম।

আন্তর্জাতিক যাত্রী আকৃষ্ট করতে বহরের আকার বাড়াচ্ছে স্থানীয় এয়ারলাইনসগুলো : সম্প্রতি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এয়ারবাস এ৩৩০-৩০০ ও বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমান দুটো যুক্ত করে বহর সম্প্রসারিত করেছে। এর মাধ্যমে বহরের আকারের দিক থেকে বাংলাদেশের বৃহত্তম এয়ারলাইন হয়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি।

নতুন দুটি বিমান নিয়ে ইউএস-বাংলার বহরে এখন বিমানের সংখ্যা দাঁড়াল ২৩টি। অন্যদিকে জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশের বহরে বিমানের সংখ্যা ২১টি। নতুন বিমানগুলো দুবাই, শারজাহ, মাস্কাট, দোহা ও কুয়ালালামপুর রুটে যাত্রীদের সেবা দেবে। ইউএস-বাংলা ভবিষ্যতে লন্ডন ও রোমের পাশাপাশি সৌদি আরবের জেদ্দা, রিয়াদ ও দাম্মাম রুটে এয়ারবাসের বিমান চালু করার পরিকল্পনা করছে।

জাতীয় পতাকাবাহী বিমান গত কয়েক মাস ধরে উড়োজাহাজ কেনার জন্য বোয়িং ও এয়ারবাস উভয় কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করছে। এছাড়া চলতি বছরের মার্চে ঢাকা থেকে রোমে সরাসরি ফ্লাইট চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান।

অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি : ক্যাব দাবি করছে, গত বছরের তুলনায় মোট অভ্যন্তরীণ যাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৬.১০ লাখ বেড়েছে। কিন্তু বিমানবন্দর সূত্র ও স্থানীয় এয়ারলাইনগুলো বিভিন্ন রুটে অভ্যন্তরীণ যাত্রীর সংখ্যা কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে পদ্মা সেতু যাত্রী চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যশোর ও বরিশাল বিমান রুটে যাত্রী পরিবহন উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। যেমন- যশোর বিমানবন্দর দিয়ে গত বছর ১.৯৭ লাখ যাত্রী পরিবহন করলেও ২০২০ সালে সংখ্যাটি ছিল ৩.২০ লাখ। একইভাবে ঢাকা বিমানবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রধান বিমানবন্দরে গত বছর প্রায় ১.৫০ লাখ অভ্যন্তরীণ যাত্রী কমেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এয়ারলাইনগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় পতাকাবাহী বিমান, ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ার। প্রত্যেক সংস্থারই প্রধান অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীসংখ্যা কমেছে।

অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের তথ্য সম্পর্কে ক্যাবের এয়ার ট্রান্সপোর্টেশনের পরিচালক এ কে এম ফয়জুল হক বলেন, বছরের প্রথম ছয় মাসে যশোর ও বরিশাল রুটে ফ্লাইট কমে যাওয়ায় অভ্যন্তরীণ যাত্রীর সংখ্যা কমেছে। তবে অন্যান্য রুটে মোট যাত্রীসংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে সৈয়দপুর রুটে এবার যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে এ বিমানবন্দর দিয়ে প্রায় ২ লাখ ৯১ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেছিল, যেখানে আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close