মো. জহুরুল ইসলাম খোকন, সৈয়দপুর (নীলফামারী)
গুলবাণিজ্যে কর ফাঁকির অভিযোগ
নীলফামারীর সৈয়দপুরে চলছে গুলের অবাধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ। তামাকজাত পণ্য স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক হলেও সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই চলছে গুলের রমরমা বাণিজ্য। কয়েকজন গুল উৎপাদক প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে লাখ লাখ টাকা পকেটে ভরলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্ণধাররা থাকছেন নীরব।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সৈয়দপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় গুল তৈরির কারখানার প্রতিবেশী বাসিন্দারা এ অভিযোগ করেন। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তামাকজাত পণ্যের ব্যবসার অনুমতি নিতে প্রথমত প্রয়োজন হয় ট্রেড লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা, ফায়ার ব্রিগেডের কাছ থেকে নেওয়া লাইসেন্স ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে আরো একাধিক অনুমতিপত্র। কিন্তু সৈয়দপুর শহরে চারটি গুল ফ্যাক্টরি ছাড়া বাকিদের বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। এরপরও তারা দাপটের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছে গুলের উৎপাদন ও সরবরাহ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শহরের কোনো স্থানে করা হচ্ছে তামাকের গুড়া। কোনো স্থানে তামাকের সঙ্গে চুন ও রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে। আর এসব করছে কিশোর-কিশোরীরা। তামাকের গন্ধে কারখানার আশপাশ এলাকার পরিবেশ ভারী। স্বাভাবিকভাবে নেওয়া যায় না নিঃশ্বাস।
পরিবেশ ও বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়া প্রায় সব কাগজ সংগ্রহ করে গুল উৎপাদন ও বাজারজাত করছে তারিক গুল, খালেদ গুল, ওয়ান স্টার, টু স্টার ও সাকিব গুল এবং আরো দুটি গুল কারখানার মালিকরা। কিন্তু গুল যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক- এ নিয়ে কোনো সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করছেন না তারা। অনেকের অভিযোগ, গুল উৎপাদকরা জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে ফেলে কোটি কোটি টাকার মালিক হলেও মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সেইসঙ্গে নানা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন গুল ব্যবহারকারীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই শহরের পুলিশ লাইন এলাকার আতিক নামের এক ব্যক্তি জোড়া হাতি মার্কা মোড়কের গুল উৎপাদন করে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারে বাজারজাত করছেন।
এছাড়া নামি-দামি গুল নকল করে চলেছেন সাঈদ নামের একজন যুবক। ওই যুবকের বিরুদ্ধে খালেদ গুল নকল করার অভিযোগ পেয়ে অভিযানে নামেন খালেদ গুল ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী আলহাজ মিন্টু ও ডাক্তার রায়হানসহ বেশ কয়েকজন। এতে সত্যতা নিশ্চিত হয়ে গত মাসে নকল গুলসহ দুজনকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়। কিন্তু নকল গুল ব্যবসায়ী সাঈদকে আটক করা হয়নি। এর ফলে এখনো দাপটের সঙ্গে তিনি তার অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গুল ফ্যাক্টরির বৈধ কোনো কাগজপত্র আছে কি-না জানতে চাইলে আতিক ও সাঈদ জানান, কোনো কাগজের প্রয়োজন নেই তাদের। এ নিয়ে যদি সংবাদ প্রকাশ করতে চান, তাহলে করতে পারেন।
খালেদ গুল ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী আলহাজ মিন্টু ও ডাক্তার রায়হান বলেন, শুধু পরিবেশের লাইসেন্স নেই তাদের; বাকি সব কাগজ আছে। প্রতি মাসে তারা কয়েক লক্ষাধিক টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দিচ্ছেন। ভ্যাট ইন্সপেক্টর সোহেল জানান, সৈয়দপুর শহরে বছরে কতটা গুল উৎপাদন হয় এবং বাজারজাত করা হয় তা তিনি সঠিকভাবে বলতে পারবেন না। উৎপাদকরা যেভাবে ভ্যাট দেন, তাই তারা রাজস্ব খাতে জমা করেন। কিন্তু যারা নকল ও অবৈধভাবে গুল উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ করছেন, তাদের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা না বলে এরিয়ে যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ওয়াসিম বারি জয় বলেন, তামাকজাত দ্রব্য মানবদেহের জন্য হুমকিস্বরূপ। গুল ব্যবহারের ফলে মুখ ও গলায় ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে শতভাগ। ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টি কমে যেতে পারে। চিন্তাশক্তি ও লোপ পেতে পারে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফায়সাল রায়হান বলেন, যারা সরকারকে কর ও ভ্যাট প্রদান করে না, তারা দেশের শত্রু। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
"