বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

  ২১ নভেম্বর, ২০২২

সোনালী ব্যাংক বেনাপোল শাখা

শুল্ক পরিশোধ ছাড়াই পণ্যছাড় ব্যাংক ব্যবস্থাপক প্রত্যাহার

১ কোটি ৬০ লাখ টাকা শুল্ক পরিশোধ না করে সোনালী ব্যাংক বেনাপোল শাখা থেকে আমদানিকারকের অনুকূলে ছাড়পত্র দেওয়ার ঘটনায় শাখা ব্যবস্থাপককে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরে আসার পর এ ব্যবস্থা নিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। শুল্ক পরিশোধ না করে শুল্কের চালান ছাড়পত্র নেওয়ার ঘটনায় কাস্টম হাউস ও সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খালিদ এন্টারপ্রাইজ সম্প্রতি একাধিক এলসির মাধ্যমে ভারত থেকে কয়েক কোটি টাকার ফল আমদানি করে। এই পণ্য চালানগুলো খালাস নিতে আমদানিকারকের পক্ষে কাস্টম হাউসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেন বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আলেয়া এন্টারপ্রাইজের পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. শান্ত। কিন্তু তারা আমদানি পণ্যের বিপরীতে আসা ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা শুল্ক পরিশোধ না করেই সোনালী ব্যাংক বেনাপোল শাখার ছাড়পত্র (রিলিজ অর্ডার) নিয়ে আমদানি করা মালামাল খালাস করে নিয়ে যায়। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে এলে তাদের একটি টিম গত সপ্তাহে বেনাপোল সোনালী ব্যাংকে আকস্মিক অভিযান চালায়। এ সময় শুল্ক পরিশোধ না করে ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হলে আমদানিকারকের পরবর্তী পণ্য চালানের বিপরীতে জমা দেওয়া শুল্কের টাকা বকেয়ার সঙ্গে সমন্বয় করেন। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিষয়টি সোনালী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়।

কয়েকজন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোলের কয়েকজন শুল্ক ফাঁকির হোতা সিন্ডিকেট করে আমদানি করা প্রতিটি ফলের শুল্কের চালানের বিপরীতে সোনালী ব্যাংকের বেনাপোল শাখার কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের এ সুযোগ দিয়ে আসছিল। এ ঘটনায় প্রায় ২০ কোটি টাকা শুল্ক পরিশোধ না করে শুল্ক পরিশোধের চালান নিয়ে মাল খালাস করে নিয়ে যায়।

ঘটনাটি জানাজানির পর নড়েচড়ে বসে সোনালী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে ও চাপ প্রয়োগ করে কয়েকটি ছোট-বড় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কাছ থেকে ১০ কোটির বেশি টাকা আদায় করা হয়। এখনো বড় কয়েকটি এজেন্টের কাছে কিছু টাকা আদায় করা বাকি আছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নিজেদের দোষ ঢাকতে তা প্রকাশ করছে না। এসব সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সরকারি শুল্কের টাকা জমা না দিয়ে সেই টাকায় অল্পদিনে কোটি কোটি টাকার গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়ে গেছেন। জায়গা-জমি কিনে আলিশান বাড়ি বানিয়েছেন। কিনেছেন কোটি টাকার গাড়ি। দুর্নীতি দমন কমিশন এসব সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের বিরুদ্ধে সঠিকভাবে তদন্ত করলে বিষয়টির সত্যতা প্রকাশ পাবে বলে বলছেন অনেক সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী।

সোনালী ব্যাংক যশোর অঞ্চলের উপমহাব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমদানি করা পণ্যের শুল্ক পরিশোধ না করে চালানের কাগজপত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে একটি প্রতিষ্ঠান। পরে আমরা শুল্ক আদায় করেই ছাড়পত্র দিয়েছি। তবে শাখা ব্যবস্থাপক আক্তার ফারুককে যশোরে বদলি করা হয়েছে। আর কোনো টাকা বাকি আছে কি না- প্রশ্ন করলে তিনি তদন্ত ছাড়া এ বিষয়ে কিছুই বলা যাবে না বলে জানান।

সোনালী ব্যাংক বেনাপোল শাখার ব্যবস্থাপক আক্তার ফারুক জানান, খালিদ এন্টারপ্রাইজের কাছ থেকে টাকা বুঝে নিয়েই শুল্ক পরিশোধের চালানের কাগজ ছাড়া হয়েছে। সেখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। আমার যশোর শাখায় বদলিও হয়েছে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়।

বেনাপোল কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার সাফায়েত হোসেন জানান, সোনালী ব্যাংক বেনাপোল শাখায় ফলের শুল্ক পরিশোধ নিয়ে জটিলতা হয়েছে বলে জেনেছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close