প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৪ নভেম্বর, ২০২১

তৃতীয় ধাপেও সহিংসতা

আগামী ২৮ নভেম্বরের তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচন ঘিরে যশোরের শার্শায় ও বেনাপোলে বাড়ছে সহিংসতা। বগুড়ার ধুনটে প্রার্থীর বৈঠকখানায় হামলা, নৌকায় অফিস ও তোরণে আগুন এবং সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান। অন্যদিকে, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় অগ্নিসংযোগ ও হামলার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট :

বেনাপোল (যশোর) : যশোরের বেনাপোল ও শার্শায় নির্বাচন কেন্দ্র করে নির্বাচনী সহিংসতা বাড়ছে। সংঘাত চলছে মূলত নৌকা প্রতীকের সমর্থক ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে।

জানা যায়, শার্শা সদর, উলাশী, বাগআঁচড়া, কায়বা, গোগা, পুটখালী, লক্ষণপুর, ডিহি, নিজামপুর ও বাহাদুরপুর ইউনিয়নের মধ্যে উলাশী, পুটখালী ও গোগা ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এই তিনটি ইউনিয়নে প্রায় প্রতিদিনই হামলা, পাল্টা-হামলা, অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে।

নির্বাচনী সহিংসতায় এ পর্যন্ত দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। সর্বশেষ ২১ নভেম্বর বেনাপোলের পুটখালীতে নৌকার দুই সমর্থক হজরত আলী (২৯) ও মাহবুব হোসেন (৩০) নামে দুজনকে কুপিয়ে যখম করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এর আগে ২০ নভেম্বর শার্শার সাতমাইল এলাকার মোস্তাক ধাবক (৪০) ঢাকা

মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গত ১৬ নভেম্বর বেনাপোল পোর্ট থানার পুটখালী ইউনিয়নের মহিষাকুড়া গ্রাম থেকে ১০ বোমা ও বিস্ফোরকসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীর ৪ সমর্থককে আটক করে পুলিশ। তারা স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নাসির উদ্দিনের সমর্থক।

১৯ নভেম্বর উপজেলার গোগা ইউনিয়নের পাঁচ ভুলোট দাখিল মাদ্রাসার সামনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আবদুর রশিদ ও তবিবর রহমান সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলি চলে। এতে চারজন আহত হন এবং বেশ কিছু দোকানপাট ভাঙচুর হয়।

১৮ নভেম্বর সন্ধ্যার পর বেনাপোল পোর্ট থানার বৃত্তিআঁচড়া গ্রামে নৌকার সমর্থক মোক্তার মেম্বারকে লক্ষ্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা বোমা নিক্ষেপ করে। মোক্তার মেম্বার জানান, বোমা লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে তিনি বেঁচে যান। পুলিশ হামলাকারীদের দুটি মোটরসাইকেল জব্দ করে। ১৭ নভেম্বর রাতে উপজেলার উলাশী ইউনিয়নের স্বতন্ত্র পদপ্রার্থীর নির্বাচনী অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে সম্বন্ধকাঠি মোড়ের এক মেম্বার প্রার্থীর অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। ১৬ নভেম্বর উপজেলার ডিহি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প-িতপুর গ্রামে মেম্বার প্রার্থী খানজাহান আলীর সমর্থকরা ভোট চাইতে গেলে আরেক প্রার্থী কামরুজ্জামান জজ মিয়ার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে, এতে ২২ জন কর্মী-সমর্থক আহত হন। ১২ নভেম্বর উপজেলার সীমান্তবর্তী গোগা ইউনিয়নে আলী ফকির (৫২) নামের স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক সমর্থক মারা যান।

বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশের ওসি মামুন খান ও শার্শা থানার ওসি বদরুল আলম খান জানান, নির্বাচন নিয়ে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

ধুনট (বগুড়া) : বগুড়ার ধুনট উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রচারণা। গত সোমবার রাত ১টার দিকে গোপালনগর ইউনিয়নের মহিশুরা বাজারে রাস্তায় তোড়নের ওপর থাকা নৌকায় অগ্নিসংযোগ এবং নৌকার নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া গতকাল মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে গোপালনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের নৌকার কার্যালয়েও হামলার ঘটনা ঘটে। পৃথক দুটি হামলার ঘটনায় নৌকার কার্যালয়ে থাকা পোস্টার, কাপড়ের প্যান্ডেল ও চেয়ার ভাঙচুর করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আতিকুল করিম আপেলের বাড়ির সামনে বৈঠকখানায় হামলার ঘটনা ঘটে। দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর পোস্টার ছেঁড়া, কর্মীদের হুমকি-ধমকি ও সমর্থকদের গালাগাল করার অভিযোগ উঠেছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী বেলাল হোসেন বাবু অভিযোগ করেন, তার কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসন, ধুনট থানা-পুলিশ ও রিটার্নিং অফিসারকে মোবাইল ফোনে অবগত করেছেন। তবে তার অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেছেন নৌকার প্রার্থী আনোয়ার পারভেজ রুবন।

ধুনট থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, হামলার ঘটনাগুলোর সঠিক তদন্ত করা হচ্ছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, বগুড়ার ধুনট সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনুর আলম টগর। মঙ্গলবার দুপুরে ধুনট প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। শাহনুর আলম টগর যুবদল নেতা এবং সদরের মাঠপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ) : মুক্তাগাছা উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নে নৌকায় অগ্নিসংযোগ ও একাধিক নৌকার অফিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় চারজনকে আটক করেছে মুক্তাগাছা থানা-পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার গভীর রাতে কাশিমপুর ইউনিয়নের কয়েকটি নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্রে। মুক্তাগাছা থানার ওসি (তদন্ত) চাঁদ মিয়া সাংবাদিকদের জানান, নৌকায় অগ্নিসংযোগ ও অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে ও তাদের নামে মামলা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close