নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১১ জুন, ২০২১

দালালে অতিষ্ঠ রোগীরা

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

* র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ২৪ দালাল, এক মাসের সাজা * ধরা পড়ে না পৃষ্ঠপোষকরা

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংঘবদ্ধ দালালচক্রের হাতে এক রকম জিম্মি হয়ে পড়েছিল রোগীরা। কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দালালরা বিভিন্ন নামসর্বস্ব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্ড, স্লিপ প্যাড জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, ওটি, আইসিইউ, ওয়ার্ড এবং কেবিনের আশপাশে ঘুরে বেড়াত।

লক্ষ্য ছিল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা নিরীহ, দরিদ্র ও অসহায় যাদের বেশিরভাগ গ্রাম থেকে আসা রোগী ও তাদের স্বজন। তাদের সঙ্গে আপনজনের মতো ব্যবহার করে কম খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অস্ত্রোপচার করিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখাত। অনেক সময় জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগ থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যেত দালালরা। এমন খবর যায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) কাছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয় চক্রের ২৪ সদস্যকে। পরে তাদের প্রত্যেককে এক মাস করে কারাদ- দিয়েছে অভিযান পরিচালনাকারী র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালিত হয়। এই দালালরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসা নিরীহ রোগীদের সরকারি হাসপাতালের চেয়েও কম খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও খ্যাতনামা অধ্যাপকদের দিয়ে দ্রুত অস্ত্রোপচারের সুব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যেত। হাতেনাতে গ্রেপ্তারের পর তারা সবাই অভিযোগ স্বীকার করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতাল-১, ২ এবং বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটকে ঘিরে সংঘবদ্ধ দালালচক্র গড়ে উঠেছে।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা নিরীহ, দরিদ্র ও অসহায় যাদের বেশিরভাগ গ্রাম থেকে আসেন, চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানেন না তাদের টার্গেট করে আপনজনের মতো ব্যবহার করে কম খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অস্ত্রোপচার করিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। অনেক সময় জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগ থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যায় এসব দালালরা। ছবি পৃষ্ঠা : ১১ আবার তারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরেও রোগীদের টার্গেট করে। বিশেষ করে অস্ত্রোপচারের জন্য অপেক্ষমাণ রোগীদের কাছে গিয়ে অল্প টাকায় ভালো অধ্যাপক দিয়ে দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রলোভন দেখায়। অনেক সময় না বুঝে ফাঁদে পা দিয়ে তাদের সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে কম টাকা জমা দিয়ে ভর্তি হয়ে ফেঁসে যান। নানা উসিলায় রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয় বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এসব দালালরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে দ্রুত রিপোর্ট করিয়ে দেওয়ার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে থাকে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক ও নার্স জানান, এসব দালালের কারণে ঠিকমতো কাজও করা যায় না।

অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা এ দালালচক্রের পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষক। দালাল চক্রের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা নিয়ে হাসপাতালে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ করে দেন তারা।

অভিযানকে স্বাগত জানালেও কেউ কেউ বলছেন, দালাল চক্রের চুনোপুঁটিরা ধরা পড়েছে। এদের মূল পৃষ্ঠপোষক কেউ ধরা পড়েনি।

এদিকে বিকাল পৌনে ৩টার দিকে গ্রেপ্তার ২৪ দালালকে র‌্যাবের মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি অপসোনিনের একজন প্রতিনিধি জানান, তাদের এক সহকর্মীকে দালাল হিসেবে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, ছেলেটি নতুন জয়েন করেছে। অভিযানের সময় তাকে আটক করা হয়। তবে অভিযানে থাকা র‌্যাবের এক সদস্য জানান, ওই ব্যক্তি কোনো পরিচয়পত্র দেখাতে পারেননি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close