নিজস্ব প্রতিবেদক
উন্নয়ন ফোরামের উদ্বোধন
বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অমিত সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। বিশ্বের বুকে একটি গতিশীল দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার ক্ষমতা আমাদের আছে। বাংলাদেশ আজ আর্থসামাজিক দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে।’ গতকাল বুধবার ঢাকার একটি পাঁচতারকা হোটেলে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় প্রথাগত আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থা যাতে দারিদ্র্যবিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ সার্বিক বৈশ্বিক উন্নয়নে আরো বেশি অবদান রাখতে পারে; সেদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো মনোযোগী হওয়ার তাগিদ দেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে চাই। এই উন্নয়ন পরিকল্পনার লক্ষ্য বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’ বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার উদাহরণ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘তিনটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চায় বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে সহযোগিতা চাই উন্নয়ন সহযোগীদেরও।’ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বড় চ্যালেঞ্জ অর্থ জোগান দেওয়া উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দারিদ্র্যের হার নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১৪ শতাংশে নামিয়ে আনতে কাজ করতে হবে।’ বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের উল্লেখ করে তিনি জানান, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৯ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৩ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহৃত হচ্ছে। আট কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। মাথাপিছু আয় উন্নীত হয়েছে। ১৬ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াটে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। এ বছরের মার্চের মধ্যেই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।
ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশের প্রস্তুতির কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘জাতীয় পর্যায়ে ব্যক্তিগত অংশগ্রহণ জরুরি মনে হওয়ায় সরকার বর্তমানে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। একই সঙ্গে জলবায়ুসহিষ্ণু খাদ্য উৎপাদনে গবেষণা করে সফল হয়েছি।’ এ সময় সপ্তম বার্ষিক পরিকল্পনায় নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি জোর দিয়ে উল্লেখ করেন।
উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় পাশে থাকা সহযোগীদের সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং কৌশলগত সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের আয়োজন। উন্নয়ন অংশীদারিত্ব শিরোনামে শুরু হওয়া দুই দিনের এ ফোরামে অংশ নিচ্ছেন দেশি-বিদেশি অর্থনীতিবিদ, শিক্ষক-গবেষক এবং উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিনিধিরা।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তার বক্তব্যে বাংলাদেশের ওপর রোহিঙ্গা সংকটের প্রভাব নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের সমাজ ও অর্থনীতির ওপর একটি বড় বোঝা। এটা আমাদের উন্নয়ন কর্মসূচিতে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করছে।’ রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে যেসব দেশ ও সংস্থা এগিয়ে এসেছে, তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে অর্থমন্ত্রী সবাইকে এ বিষয়ে আরো উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েন চাই ঝ্যাং তার বক্তব্যে ঢাকার যানজটের কথাও তুলে ধরেন।
তিনি জানান, গত মঙ্গলবার ঢাকা পৌঁছে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে তার হোটেলে পৌঁছাতে লেগেছে এক ঘণ্টা। এ সমস্যা মেটাতে এডিবি বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অন্যদের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যানেট ডিক্সন, জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমহাপরিচালক মিনরু মাসুজিমা এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের সিইও সুলাইমা জাসির আল-হেরবিশ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত দেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব কাজী শফিকুল আজম।
"