মাওলানা মাসউদুল কাদির

  ২৪ মার্চ, ২০২৪

পুণ্যময় সাহরি

আজ রমজানুল মোবারকের ১৩তম দিন। সাহরির সঙ্গে সুস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যকর খাবারের একটা সম্পর্ক আছে। সাহরি সামান্য কিছু খাবার দিয়ে করলেও হয়ে যায়। শরিয়তের পরিভাষায় সাওম পালনের উদ্দেশ্যে শেষ রাতে পানাহার করাকে সাহরি বলে। সাহরিতে রয়েছে অনন্ত বরকত। সাওম শুরুই হয় এ সাহরি খাওয়ার মাধ্যমে। প্রতিটি সাওমের জন্য আলাদা আলাদা নিয়ত করতে হয়।

চাঁদ দেখার পর রমজানের প্রথম কাজ এশার নামাজের সঙ্গে তারাবি পড়া। এরপরই রাতের প্রধানত আমল সাহরি খাওয়া। সাহরি খেতে হয় শেষ সময়ে। এরপরই আজান হয়ে যায়। শুরু মোমিনের উপবাসযাত্রা। না খেয়ে থাকার কষ্ট সহ্য করার সময়।

শেষ রাতের এ খাবারেও আল্লাহ তায়ালা রেখেছেন অনেক পুণ্য ও বরকত। মোমিন যেন সুন্দরভাবে দিন কাটাতে পারে, রোজায় যেন কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয়- এজন্যই সাহরি খাওয়ার প্রতি নবীজি মুহাম্মদ (সা.) উৎসাহ প্রকাশ করেছেন। নবী (সা.) এ বিষয়ে বলেন, ‘তাসাহহারু ফা ইন্না ফিসসুহুরি বারাকাতুন’ অর্থাৎ ‘তোমরা সাহরি খাও, কারণ সাহরিতে বরকত রয়েছে।’ (সহিহ বোখারি : ১৯২৩ ও সহিহ মুসলিম : ১০৯৫)।

সাহরি কী? এ প্রশ্ন সাহাবায়ে কেরাম নবীজিকে বারবার জিজ্ঞেস করেছেন। আল কামুসে ভোরের আগের খাবারকেই সাহরি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পারিভাষিক বর্ণনায় কেউ কেউ বলেছেন, রাতের প্রথমার্ধের পর থেকে ভোর পর্যন্ত যেকোনো সময়ের খাবারকে সাহরি বলে। কেউ কেউ রাতের শেষ ষষ্ঠমাংশের খাবারকে সাহরি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সাহরির বিশুদ্ধ অর্থ বর্ণনা করে কেউ কেউ বলেছেন, রোজা রাখার নিয়ত করে পুণ্যের আশায় শেষ রাতে খাবার গ্রহণ করাকে সাহরি বলে।

সাহরি খাওয়া মুস্তাহাব-সুন্নাত। সাহরি না খেলে রোজা হবে না এমন কিছু নয়। তবে সাহরি খাওয়া ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। সাহরি আহলে কিতাব তথা ইহুদি ও নাসারাদের সঙ্গে মুসলমানদের পার্থক্য সৃষ্টি করে। এ বিষয়ে নবী (সা.) বলেছেন, ‘আমাদের রোজা ও আহলে কিতাবের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া।’ (সহিহ মুসলিম)।

সাহরি খাওয়ার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে নবী (সা.) বলেছেন, ‘এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও তোমরা সাহরি করবে।’ কী দিয়ে মোমিন সাহরি করবে। রহমতের নবী সেটা পর্যন্ত বর্ণনা করে গেছেন। সাধারণ হালাল যেকোনো খাবার দিয়েই সাহরি খাওয়া যায়। যেমন পানি দিয়ে সাহরি খাওয়া যায়, আবার শুধু খেজুর দিয়েও সাহরি খাওয়া যায়। আবু দাউদের এক বর্ণনায় পাওয়া যায়, নি’মা সুহুরিল মুমিনি আত তামারু অর্থাৎ মোমিনের সাহরিতে উত্তম খাবার হলো খেজুর। (আবু দাউদ : ২৩৪৫)।

সাহরি-সংক্রান্ত সব বর্ণনা গবেষণা করলে এ কথা প্রতিভাত হয়- সাহরি শুধু বরকত নয়, রহমত নয়, বান্দা যেন সুন্দরভাবে রোজা রাখার মতো সহজ সক্ষমতা অর্জন করতে পারে, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। মোমিন বান্দার যেন কোনো কষ্টই না হয়। রোজার আমল পরিপালনে সাহরি সহায়ক হবে। এজন্যই সাহরি খাওয়ার প্রতি নবীজির আগ্রহ ও উৎসাহ ছিল অনেক। মুসনাদে আহমাদে আছে, নবীজির ভাষ্য হলো, তোমরা সাহরি খাওয়া বাদ দিও না। মহান আল্লাহ তায়ালা সুন্দরভাবে সাহরির আমল পালনের তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক : প্রিন্সিপাল, মাদরাসাতু ইকরা দারুল উলুম, হবিগঞ্জ [email protected]

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সাহরি,রমজান
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close