নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০১ জানুয়ারি, ২০২০

মনোনয়নপত্র জমার উৎসব

২ সিটিতে মেয়র পদে ১৪ জনসহ ১০৩৯ প্রার্থী

বিদ্রোহীরাও লড়াইয়ে

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন জমার শেষ দিন ছিল গতকাল মঙ্গলবার। উভয় সিটিতে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা উৎসবমুখর পরিবেশে জমা দেন মনোনয়নপত্র। ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটিতে মেয়র পদে একাধিক রাজনৈতিক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রতি ওয়ার্ডের বিপরীতে একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন।

দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ-বিএনপি মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনীত করে মনোনয়ন দিলেও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের বিবেচনায় যোগ্য ও পছন্দের প্রার্থী না হওয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থীর আভাস মিলেছে। আবার মেয়র এবং কাউন্সিলর পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন অনেকে। ফলে সিটি নির্বাচনে নৌকা-ধানের শীষের প্রার্থীদের দিকে জাতির নজর থাকলেও কাউন্সিলর প্রার্থীদের জয়পরাজয়ে নির্বাচনে উত্তাপ ছড়াতে পারে।

নির্বাচনে মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর– এই তিন পদে সব মিলিয়ে ১ হাজার ৩৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। তাদের মধ্যে মেয়র পদে ১৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। গত কয়েক দিনে দুই সিটিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন ২ হাজার ২৬০ জন।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, মেয়র পদে ৭ জনসহ ৪৭০ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৩৭৪ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৮৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মেয়র পদে যে সাতজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তারা হলেন আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম, বিএনপির তাবিথ আউয়াল, জাতীয় পার্টির জি এম কামরুল ইসলাম, পিডিপির শাহীন খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফজলে বারী মাসউদ, সিপিবির সাজেদুল হক ও এনপিপির আনিসুর রহমান দেওয়ান।

ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, মেয়র পদে ৭ জনসহ মোট ৫৬৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪৬০ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১০২ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মেয়র পদে যে সাতজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তারা হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস, বিএনপির ইশরাক হোসেন, জাতীয় পার্টির সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, ইসলামী আন্দোলনের মো. আবদুর রহমান, এনপিপির বাহরানে সুলতান বাহার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আকতার-উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লা ও গণফ্রন্টের আবদুস সামাদ সুজন।

এদিকে, আওয়ামী লীগের দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ঢাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানাই। তিনি বলেন, আগামী বছর (আজ বুধবার) থেকেই ঢাকা দক্ষিণে পরিবর্তনের সূচনা ঘটবে। এ নগরীতে অনেক কাজ বা নাগরিক পরিষেবা বাকি আছে। নির্বাচিত হলে নাগরিকদের মৌলিক সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে। ক্রমান্বয়ে নগরের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে একটি বাসযোগ্য শহর গড়ে তোলা হবে।

এ সিটির বিএনপির প্রার্থী প্রয়াত সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন বলেন, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে কী হয়েছে, তা আপনারা দেখেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে একজন প্রার্থী হিসেবে কমিশনের ওপর কতটুকু আস্থা থাকতে পারে? তিনি আরো বলেন, নির্বাচন কমিশনের ভুল সংশোধনের সময় এসেছে। আশা করি, তারা তা করবে।

আর ঢাকা উত্তর সিটিতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম আতিক বলেন, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে বলে তার আশা। নির্বাচনে হার-জিত আছে। কেউ যেন মাঝপথে নির্বাচন বর্জন না করেন।

আর বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, এবার নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত মাঠে থেকে লড়াই করব। আশা করি, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ভোট আয়োজন করে ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোটদানের ব্যবস্থা করবে।

ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩১ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২ জানুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৯ জানুয়ারি এবং প্রতীক বরাদ্দ হবে ১০ জানুয়ারি। ভোটগ্রহণ আগামী ৩০ জানুয়ারি।

দক্ষিণ সিটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৫৬০ প্রার্থী : দক্ষিণ সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইসির যুগ্ম সচিব মো. আবদুল বাতেন বলেন, সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে মনোনয়নপত্র দাখিলের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের স্বার্থে প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি।

এদিকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। দুই সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাননি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের বর্তমান ১৪ জন নারী কাউন্সিলর। দুই সিটিতে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া ২৭ জনই নতুন। ফলে পুরোনোদের অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার আভাস দিয়েছেন।

উত্তরের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে সমর্থন না পাওয়া মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান লিটন বলেন, আমার ওয়ার্ডে যাকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে তার পক্ষে নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলে আমি নির্বাচনে অংশ নেব। একইভাবে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থনপ্রত্যাশী তাজু দেওয়ান বলেন, দল সমর্থন না দিলেও আমি নির্বাচন করব। আমি মনে করি, আমার এলাকায় যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তার চেয়ে আমি যোগ্য প্রার্থী।

সমর্থন না পাওয়া কয়েকজন নারী কাউন্সিলরের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার আভাস : ঢাকা উত্তরের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকিয়া সুলতানা বলেন, মাত্র ১০ মাস হলো কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি। এলাকার জন্য তেমন কিছুই করতে পারিনি। এখন আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তবে এলাকার মানুষ চায় আমি নির্বাচন করি। প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে আমার। ঢাকা দক্ষিণের নারী কাউন্সিলর ফুলবানু পলি বলেন, আওয়ামী লীগ করার কারণে আমার স্বামী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আমিও দুঃসময়ে দলের প্রতিটি কর্মসূচিতে ছিলাম। কিন্তু আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ রয়েছে আমার।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঢাকা সিটি নির্বাচন,ঢাকা সিটি,মেয়র পদে নির্বাচন,কাউন্সিলর প্রার্থী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close