বদরুল আলম মজুমদার

  ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮

প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মুখে ঐক্যফ্রন্ট

যেকোনো মূল্যে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকতে চায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচনে থাকার এমন অভিপ্রায়ের সামনে আসছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ। প্রচারের প্রথম দিন থেকেই পুলিশ ও সরকারি দলের নেতাকর্মীদের প্রবল বাধার মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। এ ছাড়া উচ্চ আদালত থেকে এ পর্যন্ত ১৫ জন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। এর বাইরে মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা ১৬ প্রার্থী বিভিন্ন মামলায় কারাগারে আটক। এর বাইরে জামায়াতের ২২ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল বিষয়ে হাইকোর্ট যে নির্দেশনা নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছেন, সেটি যদি কমিশন আমলে নেয়, তাহলে বিএনপি জোটের প্রায় ৫৫টি আসনে টিকে থাকা জটিল হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।

এ অবস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বলেছেন, বিচার বিভাগ ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে’ বিএনপির প্রার্থীদের বাতিল করছেন। হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছেন, এই আদেশটা এখন আমরা কী বলব? এটাকে কি আইনসম্মত বলব? নাকি বেআইনি বলব? নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলব? তিনি বলেন, একই আদালতে একই কারণে একজনকে বৈধ আর আরেকজনকে অবৈধ বলা হয়েছে। মার্কা নিয়ে প্রার্থী চলে গেছেন, এরপর ট্রাইব্যুনালে যেতে পারবেন নির্বাচনের পরে, এর আগে নয়। বিএনপির ওপর হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। তার দাবি, যেসব আসনে বিএনপির প্রার্থীদের অবৈধ ও ‘বেআইনিভাবে’ শূন্য ঘোষণা এবং বাতিল করা হয়েছে, সেই আসনগুলোয় আমাদের প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক। অথবা সেই আসনগুলোতে নির্বাচন স্থগিত রাখা হোক।

জানা যায়, আগামী নির্বাচনে ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে বিএনপি জোট বা ঐক্যফ্রন্ট থেকে ২৯৮টি আসনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। গত কয়েক দিনে সেই আসনগুলোর মধ্যে অন্তত ১৫ জনের প্রার্থিতা বাতিল করেছেন উচ্চ আদালত। প্রার্থী বাতিল হওয়া ১৫ আসনের মধ্যে বিএনপি বা জোটের অন্য কোনো প্রার্থী নেই ৬টি আসনে। বাকি যে ৭টি আসনে মনোনয়ন বাতিল হয়েছে, সে আসনগুলোয় যেসব বিকল্প প্রার্থী রয়েছেন, তাদের দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া নিয়ে সংসয় রয়েছে খোদ জোটে। তার বাইরে নির্বাচনের মাঠে প্রভাব রাখতে পারেন, এমন ১৫ প্রার্থী কারাগারে থেকে নির্বাচন করছেন। সে আসনগুলোতেও বিএনপির পক্ষে ভালো ফল নিয়ে আসা কষ্টকর। এমন অবস্থায় ৩০টির মতো আসনে জিতে আসা বিএনপির পক্ষে প্রায় অসম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ কয়েক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, যেসব আসনে ঐক্যফ্রন্টের শরিক কোনো দলের প্রার্থী রয়েছেন, তাকে সমর্থন দেওয়া হবে। আর যেসব আসনে বিকল্প প্রার্থী নেই, সে ক্ষেত্রে সমমনা কোনো ব্যক্তিকে সমর্থন দেওয়া হবে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনের পথ আটকে যাওয়া ১৫ প্রার্থীর মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ না করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কারণে সাতজনের প্রার্থিতা বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। গত বৃহস্পতিবার পৃথক আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে সাত প্রার্থী হলেন জামালপুর-৪ আসনে ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম, বগুড়া-৩ আসনে আবদুল মুহিত তালুকদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে মোসলেম উদ্দিন, ময়মমনসিংহ-৮ আসনে মাহমুদ হোসেন, ঝিনাইদহ-২ আসনে আবদুল মজিদ, জয়পুরহাট-১ আসনে ফজলুর রহমান এবং রাজশাহী-৬ আসনে আবু সাইদ চাঁদ। এর আগে ১৭ ডিসেম্বর উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ না করায় ঢাকা-১ আসনে খন্দকার আবু আশফাক, বগুড়া-৭ আসনে মোরশেদ মিলটন, ঢাকা-২০ আসনে তমিজ উদ্দিন, বগুড়া-৩ আসনে আবদুল মুহিত তালুকদার, ঋণখেলাপি থাকার কারণে চাঁদপুর-৪ আসনে আবদুল হান্নান, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, দ-িত থাকার কারণে জামালপুর-১ আসনে এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত এবং সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর লুনার মনোনয়ন স্থগিত করা হয়। প্রার্থিতা স্থগিত হওয়া ১৫ আসনের মধ্যে ৬টি আসনে নেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলের কোনো প্রার্থী। যার কারণে শূন্যই থাকছে আসনগুলো। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীশূন্য আসনগুলো হলো ঢাকা-১, ঢাকা-২০, বগুড়া-৩, বগুড়া-৭, চাঁদপুর-৪ ও মনিকগঞ্জ-৩।

অন্যদিকে বিভিন্ন মামলায় কারাবন্দি রয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১৬ প্রার্থী। কারাগার থেকেই তারা অংশগ্রহণ করছেন নির্বাচনে। কারাবন্দি প্রার্থীরা হলেন ঠাকুরগাঁও-২ আসনে মাওলানা আবদুল হামিদ, রাজশাহী-৬ আসনে আবু সাঈদ চাঁদ, মাগুরা-১ আসনে মনোয়ার হোসেন, খুলনা-৬ আসনে আবুল কালাম আজাদ, সাতক্ষীরা-২ আসনে মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৪ আসনে গাজী নজরুল ইসলাম, টাঙ্গাইল-২ আসনে সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, গাজীপুর-৫ আসনে এ কে এম ফজলুল হক মিলন, নরসিংদী-১ আসনে খায়রুল কবীর খোকন, গোপালগঞ্জ-৩ আসনে এস এম জিলানী, কুমিল্লা-১০ আসনে মনিরুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৯ আসনে ডা. শাহাদাত চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে আ ন ম শামসুল ইসলাম ও কক্সবাজার-২ আসনে এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ ও যশোর-২ আসনের আবু সাঈদ মো. শাহাদাত হোসেইন।

সূত্র জানায়, এসব প্রার্থীর কারামুক্তির জন্য এক বা একাধিক মামলায় জামিন নেওয়া প্রয়োজন। তবে এর জন্য তাদের যে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে, তা কোনোভাবেই ভোটের আগে সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব আসামিকে একটি মামলায় প্রথমে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে, সেখানে বিফল হলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এবং সেখানেও না মিললে জামিনের আবেদন করতে হবে হাইকোর্টে। এ প্রক্রিয়া শেষ করে আপিল বিভাগের মুখোমুখি হওয়ারও প্রয়োজন হতে পারে। এ ছাড়া বেশ কয়েক প্রার্থী জামিন পাওয়ার পর অন্য মামলায় নতুন করে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তাই ৩০ ডিসেম্বরের আগে কারামুক্ত হয়ে তাদের নির্বাচন করার কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

এদিকে জামায়াতের ২২ প্রার্থীর বিরুদ্ধে আগামী ২৪ ডিসেম্বর সোমবারের মধ্যে হাইকোর্টের রুলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে গত বৃহস্পতিবার সকালে এ কথা জানান নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ। জামায়াতের বিষয়ে আগামী তিন দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে হাইকোর্টের একটি নির্দেশনা ছিল। এ বিষয়েও ইসি সচিব বলেন, হাইকোর্টের চিঠি আজ আমাদের কাছে পৌঁছেছে। আইন শাখায় বিষয়টি পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে, যাতে কমিশনে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়।

এ বিষয়ে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নজরুল ইসলাম খান বলেন, এ নিয়ে আর কী বলব, সবই দেখতে পাচ্ছেন। তার পরও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থেকে শেষ লড়াই করতে চাই আমরা। নির্বাচনী মাঠের বর্তমান পরিবেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, যা হচ্ছে তা দেশের ইতিহাসে নতুন নতুন অধ্যায় তৈরি হচ্ছে। স্বৈরাচারের কবলে পড়লে যা হয় সেটার প্রতিচ্ছবিই এখন দেশবাসী দেখতে পাচ্ছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট,নির্বাচন,ভোট,চ্যালেঞ্জ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close