রাজশাহী ব্যুরো

  ০২ ডিসেম্বর, ২০১৮

রাজশাহীতে ছয় আসনে ২৩ জনের মনোনয়ন বাতিল

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীতে বিএনপির তিন হেভিওয়েট নেতাসহ ২৩ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। রোববার মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই শেষে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের তাদের প্রার্থীতা বাতিল ঘোষণা করেন।

রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনে এবার মোট ৬৮ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত দাখিল করেন ৫৩ জন। যাচাই বাছাই শেষে এখন ৩০ জন প্রার্থী বৈধ হিসেবে নির্বাচনের মাঠে থাকলেন। আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন।

মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া ২৩ প্রার্থীর মধ্যে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীরা হলেন, রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের ব্যারিস্টার আমিনুল হক, রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের নাদিম মোস্তফা ও রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের আবু সাঈদ চাঁদ। তাদের আসনে একাধিক নেতাকে বিএনপি দলীয় মনোনয়নের প্রত্যয়নপত্র দিলেও মূলত এই তিন নেতাই ‘চূড়ান্ত’ প্রার্থী হিসেবে মনোনীত ছিলেন।

এদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে। আমিনুলের আসনে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে তার স্ত্রী আভা হক রয়েছেন। তার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। মামলার কারণে নবম সংসদ নির্বাচনের সময় আত্মগোপনে ছিলেন তিনবারের সংসদ সদস্য আমিনুল হক। তাই তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। সেবার তার ভাই এনামুল হককে প্রার্থী করা হয়েছিল। তিনি পরাজিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে।

বিএনপির প্রভাবশালী নেতা নাদিম মোস্তফার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে মামলার তথ্য গোপন ও ঋণখেলাপির কারণে। আর চারঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে মন্ত্রণালয়ে চেয়ারম্যানের পদত্যাগপত্র গৃহিত না হবার কারণে। বর্তমানে কারাবন্দী বিএনপির প্রভাবশালী নেতা চাঁদ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।

রাজশাহীর দুটি আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন জামায়াতে ইসলামীর দুই নেতা। নির্বাচনি এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের জাল স্বাক্ষর দেয়ার অভিযোগে রিটার্নিং কর্মকর্তা তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন। এই দুই প্রার্থী হলেন, রাজশাহী-১ আসনের অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও রাজশাহী-৩ আসনের মাজেদুর রহমান। এদের মধ্যে মুজিবুর রহমান ওই আসনের সাবেক এমপি। তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির।

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করিয়ে তাদের সমর্থন পেতে চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন মিত্র দল জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত প্রার্থী শাহাবুদ্দিন বাচ্চু। ঋণ খেলাপির কারণে রিটার্নিং কর্মকর্তা মহানগর জাপার সভাপতি বাচ্চুর প্রার্থিতা বাতিল করেছেন। তবে রাজশাহী-৫ আসনে জাপার প্রার্থী সাবেক এমপি আবুল হোসেনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

আরও যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে তারা হলেন, রাজশাহী-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেন, বাসদের আলফাজ হোসেন, স্বতন্ত্র সুজা উদ্দিন, শহিদুল করিম শিবলী, সালাহ উদ্দিন বিশ্বাস ও সাইদুর রহমান; রাজশাহী-২ আসনে এনপিপির সাইফুল ইসলাম স্বপন ও স্বতন্ত্র মাসুদ রানা; রাজশাহী-৩ আসনে বিএনপির মতিউর রহমান মন্টু, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থী মেরাজ উদ্দিন মোল্লা ও স্বতন্ত্র আরেক প্রার্থী আতিকুর রহমান; রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে বিএনপির আবদুল গফুর ও যুক্তফ্রন্টের সরদার মোহাম্মদ সিরাজুল করিম; রাজশাহী-৫ আসনে বিএনপির আবু বকর সিদ্দিক, আওয়ামী লীগের ওবায়দুর রহমান ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রুহুল আমিন এবং রাজশাহী-৬ আসনের বাংলাদেশ মুসলিম লীগের প্রার্থী আবদুর রাজ্জাক।

এখন বৈধ প্রার্থী হিসেবে যারা থাকলেন তারা হলেন, রাজশাহী-১ আসনে আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি, বিএনপির আভা হক, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রফিকুল ইসলাম পিয়ারুল ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবদুল মান্নান; রাজশাহী-২ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, বিএনপির মিজানুর রহমান মিনু, সাহিদ হাসান, জাতীয় পার্টির খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফয়সাল হোসেন ও সিপিবির এনামুল হক; রাজশাহী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের আয়েন উদ্দিন এমপি, বিএনপির শফিকুল হক মিলন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফজলুর রাহমান, এলডিপির মনিরুজ্জামান ও সাম্যবাদী দলের সাজ্জাদ আলী।

রাজশাহী-৪ আসনে থাকলেন আওয়ামী লীগের ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এমপি, বিএনপির আবু হেনা ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের তাজুল ইসলাম। রাজশাহী-৫ আসনে রইলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নতুন প্রার্থী ডা. মনসুর রহমান, বিএনপির নজরুল ইসলাম, মাহামুদা হাবিবা, জাকের পার্টির শফিকুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির আবুল হোসেন, বিএনএফের মখলেসুর রহমান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আসনের সাবেক এমপি আওয়ামী লীগ নেতা তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক। আর রাজশাহী-৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বিএনপির বজলুর রহমান, নুরুজ্জামান খান, জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবদুস সালাম সুরুজ।

সকাল ৯টায় রিটার্নিং কর্মকর্তা তার দপ্তরে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শুরু করেন। প্রতিটি আসনের মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই শেষে বৈধ-অবৈধ প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন তিনি। রিটার্নিং কর্মকর্তা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী-১ থেকে ৪ এবং বেলা ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অন্য দুই আসনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই করেন। এ সময় বেশিরভাগ প্রার্থীই তার দপ্তরে উপস্থিত ছিলেন।

রাজশাহীর রিটার্নিং কর্মকর্তা এসএম আবদুল কাদের জানান, যাচাই বাছাইকালে যেসব প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে তারা সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত বিভাগীয় কমিশনারের কাছে এ ব্যাপারে আপীল করতে পারবেন। আগামী ১০ ডিসেম্বর বৈধ প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। প্রচার শুরু হবে ১১ ডিসেম্বর থেকে। আর ভোট গ্রহণ হবে ৩০ ডিসেম্বর।

পিডিএসও/অপূর্ব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাজশাহী,মনোনয়ন,বাতিল
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close