হাসান ইমন

  ২৪ নভেম্বর, ২০১৯

পর্ব-১

নতুন ড্যাপ : আবাসিকে নেই সুনসান নীরবতা

রাজধানী ঢাকাকে আধুনিক ও বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়ে তোলা হবে

রাজধানী ঢাকাকে একটি আধুনিক ও বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়ে তুলতে ২০ বছর (২০১৬-৩৫) মেয়াদি ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) প্রণয়ন করছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। মিশ্র ব্যবহারকে প্রাধান্য দিয়ে খাল, জলাশয় ও নদী উদ্ধার এবং জোনভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো নতুন ড্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে রাজধানী ঢাকা পরিকল্পিত, বাসযোগ্য ও আধুনিক নগরী হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজউকের পরিকল্পনা অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে নতুন ড্যাপ চূড়ান্ত করা হবে। এই ড্যাপে কোন কোন খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন তুলে ধরা হচ্ছে।

এবারের ড্যাপে আবাসিক এলাকার পাশাপাশি মিশ্র ব্যবহারের সুয়োগ বেশি রাখা হয়েছে। ড্যাপে ৩৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ এলাকাই ব্যবহার হবে আবাসিক-বাণিজ্যিক হিসেবে। এর ফলে গাছগাছালির ছায়াঘেরা মায়া ভরা সুনসান নীরব আবাসিক এলাকা আর মিলবে না। বরং আবাসিক এলাকায় থাকবে গুলশান-বনানীর মতো বাণিজ্যিক ভবন, শপিংমল প্রভৃতি। তবে নতুন ড্যাপে গুরুত্ব পেয়েছে কৃষি খাত। এখানে ২৯ দশমিক ২৫ শতাংশ এলাকা কৃষি বা চাষাবাদ হিসেবে দেখানো হয়েছে। শিল্প এলাকাও প্রধান্য পেয়েছে এ ড্যাপে। এখানে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ এলাকাকে দেখানো হয়েছে শিল্প এলাকা হিসেবে।

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ড্যাপ ২০১০ এর আওতাধীন এলাকার আয়তন ছিল ১ হাজার ৪৩২ বর্গকিলোমিটার। নতুন ড্যাপে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার ৮৫ বর্গকিলোমিটার এবং ধামসোনা ইউনিয়নের ১১ বর্গকিলোমিটার এলাকাসহ মোট ৯৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন ড্যাপে পুরো মেট্রোপলিটন এলাকাকে বিভিন্ন ধরনের নিয়ামকের ওপর ভিত্তি করে মোট ১৩ ধরনের ভূমি ব্যবহার জোনে বিভক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো- আবাসিক এলাকা, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (আবাসিক প্রধান), মিশ্র ব্যবহার এলাকা (আবাসিক-বাণিজ্যিক), বাণিজ্যিক এলাকা, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (বাণিজ্যিক প্রধান), মিশ্র ব্যবহার এলাকা (শিল্পপ্রধান), প্রাতিষ্ঠানিক এলাকা, ভারী ও দূষণকারী শিল্প এলাকা, পরিবহন ও যোগাযোগ, কৃষি এলাকা, জলাশয়, বনাঞ্চল ও উন্মুক্ত স্থান হিসেবে প্রস্তাবনা করা হয়েছে। নতুন ড্যাপের পরিকল্পনায় মিশ্র ভূমি ব্যবহার জোনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তাবনা করা হয়েছে। সমগ্র মেট্রোপলিটন এলাকার ৯৩ হাজার ৪০৮ দশমিক ১৪ হেক্টর জমি এলাকা নগর এলাকা হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট পরিকল্পনা এলাকার ৬১ শতাংশ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার প্রস্তাবিত ভূমি ব্যবহার বিন্যাসে সবচেয়ে বেশি রাখা হয়েছে মিশ্র ভূমি ব্যবহার (আবাসিক প্রাধান্য)। এখানে মিশ্র ভূমি ব্যবহারের মধ্যে আবাসিক এলাকার সঙ্গে বাণিজ্যিক হিসেবেও ভূমি ব্যবহার করা হবে। সবচেয়ে বেশি ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৪৭ দশমিক ৪৭ একর ভূমি ব্যবহারের প্রস্তাবনায় রাখা হয়েছে এই স্তরে। যা সমগ্র বিন্যাসের ৩৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে রয়েছে কৃষি এলাকা। এখানে চাষাবাদ বা কৃষিজমি হিসেবে ব্যবহার করার রাখা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৩৫৩ দশমিক ১৫ একর; যা সমগ্র ভূমি ব্যবস্থাপনার ২৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। শিল্পকে প্রাধান্য দিয়ে আশুলিয়া, বাইপাইল, কোনাবাড়ী, মাধবপুর, টঙ্গীসহ আরো কিছু এলাকাকে প্রস্তাবনায় রাখা হয়েছে। যার আয়তন ১১ হাজার ৫৩৪ দশমিক ৯৮ হেক্টর; যা সমগ্র পরিকল্পনার ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। জলাশয় হিসেবে রাখা হয়েছে ১১ হাজার ৫৭ দশমিক ৫৪ একর এলাকা; যা সমগ্র ভূমির ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। এই ড্যাপে নতুন করে আবাসিক এলাকা বাড়ানো হয়নি। আবাসিক এলাকা হিসেবে নতুন ড্যাপের প্রস্তাবনায় রাখা হয়েছে ২০ হাজার ৯৮৭ দশমিক ৮৩ একর; যা সমগ্র ড্যাপের মাত্র ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থাপনার জন্য রাখা হয়েছে ১৯ হাজার ৪৯৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ; যা সমগ্র ড্যাপের ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক এলাকা হিসেবে নতুন ড্যাপের প্রস্তাবনায় রাখা হয়েছে ১৪ হাজার ২০১ দশমিক ৭৫ একর; যা ড্যাপের ৩ দশমিক ৭৬ ভাগ। ভারী ও দূষণকারী শিল্প এলাকা হিসেবে রূপসী, কাঁচপুর, হেমায়েতপুরসহ আরো কিছু এলাকাকে প্রস্তাবনায় রাখা হয়েছে। শিল্প এলাকা হিসেবে এর জন্য রাখা হয়েছে ৭ হাজার ৩৮০ দশমিক ৫৮ একর, যা সমগ্র ড্যাপের ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। বনাঞ্চলকে গুরুত্ব দিয়ে এ ড্যাপে ৫ হাজার ৩৭৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ; যা পুরো ড্যাপের ১ দশমিক ৪৩ ভাগ। মিশ্র ব্যবহার এলাকা (বাণিজ্যিক প্রধান) হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তাবনায় রাখা হয়েছে ৪ হাজার ১৪০ দশমিক ৩৬ একর, যা সমগ্র ড্যাপের ১ দশমিক ১০ ভাগ। এ ড্যাপে উন্মুক্ত স্থানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এখানে রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৩৫৯ দশমিক ৬০ একর, যা নতুন ড্যাপের দশমিক ৮৯ শতাংশ। মিশ্র ব্যবহার এলাকা (আবাসিক-বাণিজ্যিক) হিসেবে রাখা হয়েছে ১ হাজার ৮০৯ দশমিক ২৬ একর; যা এ ড্যাপের দশমকিক ৪৮ শতাংশ। সর্বশেষ বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে রাখা হয়েছে ১৪৬ দশমকি ২৬ একর, যা দশমিক ৪ শতাংশ।

এ বিষয়ে ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ঢাকা শহরে ২ কোটি মানুষ বসবাস করছে। এর মধ্যে কম সংখ্যক মানুষই চাকরি করেন। বাকিরা এ জাতীয় সাধারণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আমাদের এই মানুষগুলোর কথাও চিন্তা করতে হবে। যুগের প্রয়োজন এবং বাস্তবতার নিরিখে এসব বিষয় এখন প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। তাদের বিষয়টিও আমাদের দেখতে হচ্ছে। তারা হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করেছে। এই মানুষগুলো সমাজে কন্ট্রিবিউট করে যাচ্ছেন, অর্থনৈতিকভাবে অবদান রাখছেন। কিন্তু রাজউক বর্তমান প্রক্রিয়ায় তাদের অস্বীকার করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা পিওর রেসিডেন্সিয়াল কোথাও রাখব না। তবে বড় বড় শপিংমলের জন্য গাইডলাইন করে দিচ্ছি। এগুলো কত ফিট রাস্তার পাশে হবে, কোন জায়গায় হবে, তার আয়তন কতটুকু হবে সেই নির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত করে দেব। শুধু ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকা আলাদা করে দেব।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান,রাজউক,ড্যাপ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close