গাজী শাহনেওয়াজ

  ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮

নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত

মাঠ প্রশাসনে হস্তক্ষেপ নয়

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মাঠ প্রশাসনের আর কাউকে প্রত্যাহারের কথা ভাবছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কারণ শেষ মুহূর্তে এসে কমিশন নির্বাচনের যে ক্ষেত্র তৈরি করেছে তা তছনছ হতে পারে। তাছাড়া এই মুহূর্তে কাউকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নিলে মাঠ প্রশাসন ঠিক রাখাও চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়বে। তারা নির্বাচন নিয়ে যে পরিকল্পনা অনুযায়ী মাঠে নামাতে চাইছেন, সেখানে প্রত্যাহারের কারণে বিঘ্ন ঘটতে পারে। তাই নানাদিক বিবেচনা করে মাঠ প্রশাসনের আর কাউকে প্রত্যাহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন পরিচালনাকারী সাংবিধানিক এই সংস্থা।

এর আগে সব সময় নির্বাচনে দেখা গেছে, পুলিশসহ মাঠ প্রশাসনে বড় পরিবর্তন আসে। বিগত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এ চিত্রই সবাই দেখে এসেছেন। তবে ব্যতিক্রম ছিল বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দলের বর্জনে নির্বাচন হওয়া ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় নির্বাচনটি। এবার নিবন্ধিত সব দলের অংশগ্রহণে হচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রেকর্ডসংখ্যক স্বতন্ত্রও প্রার্থী লড়ছেন এ নির্বাচনে। এবারও নির্বাচন কমিশন (ইসি) রদবদলের কথা ভাবেনি। তবে ভোটের মাঠের চিত্র তফসিল ঘোষণার পর পাল্টে যেতে থাকে। শুরুতে সংক্ষুব্ধ সম্ভাব্য দু-একজন প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে (ইসি) অভিযোগ দিতে থাকেন। গত ১০ ডিসেম্বর প্রচার শুরুর আগ পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল সীমিত। কিন্তু চূড়ান্ত প্রতীক পেয়ে মাঠ সরগরম হয়ে উঠলে পক্ষে-বিপক্ষে অভিযোগ হঠাৎ বেড়ে যায়।

গত কয়েকদিনের অভিযোগের হিড়িক পড়ে যায়। অনেকটা নড়েচড়ে বসতে পরিস্থিতি ইসিকে আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যে ফেলে দেয়। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে এত দিন ঢালাও অভিযোগ আসছে—এমন কথা ইসির থেকে বলা হলেও দৃশ্যমান কয়েকটি ঘটনা নিয়ে বিএনপি হাজির হয় ইসিতে। এর মধ্যে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল, কেন্দ্রীয় নেতা মির্জা আববাস ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের ওপর হামলা ছিল অনেকটা দৃশ্যমান। এ ছাড়া বিএনপি, ঐক্যফ্রন্ট, স্বতন্ত্র ও জাতীয় পার্টি থেকে আসা প্রতিটি অভিযোগ দেখা যায়, পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের। তবে সরকারি দল থেকে আসা অভিযোগগুলো পুলিশ-প্রশাসন নয়; বেশির ভাগ বিএনপির প্রার্থীদের বিরুদ্ধে।

এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর প্রচারে সমান সুযোগ তৈরির ক্ষেত্র দৃশ্যমান করতে গুরুতর অভিযোগগুলো আমলে নেয় কমিশন। গত বুধবার গাইবান্ধার রিটার্নিং কর্মকর্তা, ফরিদুপরের এডিসি, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বিজয়নগর, ঢাকার রমনা থানা, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি ও ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসিকে প্রত্যাহার করে নেয় ইসি।

ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, সেবাস্টিন রেমা বিরুদ্ধে নির্বাচনী কাজে সক্রিয় না থাকার অভিযোগ ছিল। সাইফুল হাসানের বাবা আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এ ছাড়া মির্জা ফখরুলের ওপর হামলার ঘটনায় ওসি মোস্তাফিজুর রহমান, মির্জা আব্বাসের ওপর হামলার ঘটনায় মাইনুল ইসলাম, মাহবুব উদ্দিন খোকনের ওপর হামলার ঘটনায় আবদুল মজিদ এবং দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে কবির হোসেনকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে খুলনার বিভাগীয় পুলিশ কমিশনার ও মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থানার ওসিকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল কমিশন।

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনের অনিয়মের কারণে ইতোমধ্যে আটজনকে প্রত্যাহার করেছে। এ ধারাবাহিকতা ভোটের আগের দিন পর্যন্ত অব্যাহত রাখা সমীচীন হবে। নির্বাচনের মাঠ কমিশনের নিয়ন্ত্রণে রাখতে অপরাধের ধরন অনুযায়ী প্রত্যাহারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। এটা ভোটের দিন পর্যন্ত কঠিনভাবে মনিটরিং করতে হবে।

তবে প্রত্যাহারের খবরটি সারা দেশে মুহূর্তেই চাউর হয়ে যায়। ইসির এই কঠোর সিদ্ধান্তে অতি-উৎসাহী কর্মকর্তারা নিজেদের গুটিয়ে নিতে শুরু করেন। রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ পুলিশের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার কমিশনে উপস্থিত হন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী এবং ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) খান মো নুরুল হুদার সঙ্গে তার কার্যালয়ে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। বৈঠকে নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতিসহ নানাদিক নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় ভোটের আগে পুলিশ প্রশাসনের কাউকে নতুন করে প্রত্যাহার না করার ইস্যুটি।

সূত্র জানায়, সভায় আইজিপি সিইসিকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এই মুহূর্তে পুলিশকে নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নিলে মাঠ প্রশাসন ঠিক রাখা রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়বে। তারা নির্বাচনে পুলিশকে যে পরিকল্পনা অনুযায়ী মাঠে নামাতে চাইছেন, সেখানে প্রত্যাহারের কারণে বিঘ্ন ঘটতে পারে। তাই গুরুতর অনিয়ম না পেলে আপাতত কাউকে প্রত্যাহার না করতে অনুরোধ জানানো হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাদের বক্তব্য শুনে তাদের এই অনুরোধ বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।

ইসি সূত্র বলছে, পুলিশ প্রধানের অনুরোধকে উপেক্ষা করতে পারছে না ইসি। কারণ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ থাকে তাদের কাছে। পুলিশ ঘুরে দাঁড়ালে নির্বাচন প্রক্রিয়া ভন্ডুল হতে পারে। তাই নানাদিক খতিয়ে ইসি আপাতত কাউকে প্রত্যাহার করার কথা ভাবছে না।

উল্লেখ্য, তফসিল ঘোষণার পর গতকাল পর্যন্ত ৩০০ সংসদীয় আসন থেকে দুইশর অধিক অভিযোগ জমা পড়েছে ইসিতে। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া বেশির ভাগ অভিযোগই থাকছে লালফিতায় বন্দি।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নির্বাচন,নির্বাচন কমিশন,প্রশাসন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close