গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৫ নভেম্বর, ২০১৮

পদত্যাগ করেই প্রার্থী হতে পারবেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা

রাজনৈতিক দলগুলোকে শিগগিরই জানাবে ইসি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে নিজ নিজ পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিদের। এ তালিকায় রয়েছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের কাউন্সিলর বা সদস্যরা পদে থেকেই প্রার্থী হতে পারবেন।

গতকাল শনিবার কমিশন সভায় এ বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হলেও আজ রোববার তা স্পষ্ট করবে সাংবিধানিক সংস্থাটি। শিগগিরই এ বিষয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকেও জানিয়ে দেবে ইসি। একই তথ্য রিটার্নিং কর্মকর্তাকেও জানিয়ে দেওয়া হবে।

যদিও ইসির কর্মকর্তারা জানান, বিগত নির্বাচনগুলোয় কোথাও কোথাও ভিন্ন চিত্র ছিল। এ বিষয়ে স্পষ্ট করতে বিএনপিসহ কয়েকটি দল ইসিকে চিঠি দিয়েছিল। সেই চিঠির ফয়সালা করতে গিয়েই এ সিদ্ধান্তের কথা জানাল ইসি। বৈঠকে অংশ নেওয়া ইসির কয়েকজন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিরা কীভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন, তার ব্যাখ্যা আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে জানিয়ে দেব। আর নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে স্বপদে থেকে তারা সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তবে এটি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এ-সংক্রান্ত বিষয়ে উচ্চ আদালতের কোনো নির্দেশনা আছে কি না—সেটা স্পষ্ট হওয়ার পর আজ রোববার সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেব।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন যুগ্মসচিব বলেন, গতকাল শনিবার কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, স্থানীয় স্তরের প্রধান পদধারী জনপ্রতিনিধিরা স্বপদে থেকে এমপি পদে প্রার্থী হতে পারবেন না; এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ অফিস প্রফিট হিসেবে এসব জনপ্রতিনিধি লাভজনক পদের অধিকারী।

জানা গেছে, আগামী ২৮ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। ভোট হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র দাখিলের চার দিন আগে এ সিদ্ধান্ত নিল ইসি।

জানা যায়, স্থানীয় সরকারের পাঁচটি স্তরের মধ্যে শুধু সিটি মেয়রদের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে, এ স্তরের মেয়ররা স্বপদে থেকে প্রার্থী হতে পারেন না। অর্থাৎ এ পদধারীদের এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আগে পদত্যাগ করতে হয়। তবে, উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রদের বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। কিন্তু এ নিয়ে কমিশন পর্যায়ে আলোচনা না থাকায় উচ্চবাচ্যটিও ছিল না। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে সম্প্রতি একটি পত্র কমিশনকে দিয়ে এ বিষয়ে স্পষ্ট করার দাবি জানানো হয়। পরে ইসির সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভায় তারাও এ বিষয়ে কমিশনের কাছ থেকে নির্দেশনা চান। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার তোড়জোড় ছিল না। পরে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাতারাতি বিষয়টি নিয়ে বসে ফয়সালা করার উদ্যোগ নেয় ইসি। যার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শনিবার কমিশনের ৪০তম সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়রদের বিষয়ে কমিশন প্রাথমিক আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় এ পদটি লাভজনক। তাই সিটি মেয়রদের মতো উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানরাও স্বপদে থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। তবে, নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত রিটার্নিং কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়ে কমিশনের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। কারণ লিখিত কোনো নির্দেশনা দিয়ে নতুন করে বিতর্কে জড়াতে চাইছে না নির্বাচন কমিশন।

এদিকে, কমিশন সভার কার্যপত্রে বলা আছে, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২-এর সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ সংশোধনীর মাধ্যমে ধারা ১২(১)(সি) আরপিওতে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। ওই নির্বাচনে বাছাইয়ে ও আপিলে সিটি মেয়র, পৌর মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পদে থেকে মনোনয়নপত্র দাখিলকারীদের অযোগ্য করা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে একাধিক রিট ও মামলা হয় এবং ভিন্ন ভিন্ন আদেশ হয়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কয়েকজন প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যান পদে থেকে সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর আগের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। এই পরিস্থিতিতে জটিলতা এড়াতে কমিশন বিষয়টি খোলাসা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন স্বপদে থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এমপি হতে পারবেন না—এমন নির্দেশনা জারি করতে যাচ্ছে কমিশন।

উল্লেখ্য, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, স্থানীয় সরকারের প্রধান জনপ্রতিনিধি কাউকে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেবে না।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সংসদ নির্বাচন,ইসি,নির্বাচন কমিশন,জনপ্রতিনিধি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close