গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৭ আগস্ট, ২০১৮

বিশেষজ্ঞদের অভিমত

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংলাপ প্রয়োজন

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ‘রাজনৈতিক ঐক্যের’ জন্য কোনো ধরনের সংলাপে বসবে না বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে আগেভাগে কমিশনের এ ধরনের বক্তব্য সুষ্ঠু নির্বাচন বিঘ্নিত করতে পারে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত দলগুলোর সঙ্গে নানা ইস্যুতে সংলাপ হতেই পারে।

অপরদিকে ইসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হবে এবং কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার, সে সংক্রান্ত ইস্যুতে রাজনৈতিক দলসহ সুশীলদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সংলাপ হয়েছে। সেখানে তাদের দেওয়া সুপারিশ ও প্রস্তাবনাগুলো আমলে নিয়েছে ইসি। তাই নতুন করে দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার যৌক্তিকতা নেই। সব দলকে নিয়ে আগামী নির্বাচন আয়োজনে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন।

এদিকে, সব দলের অংশগ্রহণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে কি না এখনো সে সংশয় কাটেনি। বিএনপি রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছাতে সংলাপে বসার তাগিদ দিচ্ছে। আর আওয়ামী লীগ সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে। মূলত নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান কে হবেন—এ ইস্যুতে দুই মেরুতে দুই দল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান মানলে সংলাপে রাজি আওয়ামী। একইভাবে এ ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান বিপরীত মেরুতে; সঙ্গে যোগ হয়েছে দলীয় চেয়ারপারসনের নিঃশর্ত মুক্তি।

অপরদিকে, সব দলের অংশগ্রহণে সংসদ নির্বাচন দেখতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দাতা দেশ ও সহযোগী সংস্থা। এজন্য তারাও রাজনৈতিক সংলাপ চায়। তবে রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার আগে সংলাপে না বসার ইসির আগাম ঘোষণা রাজনীতিতে নতুন করে সংকট দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন করতে হবে। সেই হিসাবে দিন গণনা শুরু হবে ৩০ অক্টোবর থেকে।

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দীন আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক দল ইসির স্টেকহোল্ডার। ইসির সব কাজ এসব দলগুলোকে কেন্দ্র করে। কিন্তু সংসদ নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের আগে নানা প্রয়োজনে দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার দরকার হতে পারে। কিন্তু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সে পথ আগেভাগেই বন্ধ করে দেওয়ার অর্থ হলো সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে অন্তরায়। সাংবিধানিক সংস্থাটি কেন এত আগে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে প্রশ্নের সঠিক জবাব তারাই দিতে পারবেন, যোগ করেন এই সুশীল সমাজের প্রতিনিধি।

আর নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, সব দলকে নিয়ে নির্বাচন করতে হলে বারবার সংলাপ দরকার। এতে ইসি এবং দলগুলোর মধ্যে যে সংশয় ও সন্দেহ দূর হয়।

নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ইসির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয় তফসিল ঘোষণা থেকে নির্বাচন পরবর্তী ৪৫ দিন সময় পর্যন্ত। এর আগে তাদের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে দলগুলো না আমলে নিলে ইসির করার কিছু নেই।

নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, সংসদ নির্বাচনের শতকরা ৮০ ভাগ প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এ কারণে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নতুন করে কোনো সংলাপ হচ্ছে না। প্রস্তুতি প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এখন কমিশন থেকে এ নির্বাচন বিষয়ে সচিবালয়কে যে নির্দেশনা দেবে, তা বাস্তবায়ন করা হবে।

ইসি সচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন বলেছে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলাদা একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং সামনে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে; সেগুলোর চেকলিস্ট তৈরি করার নির্দেশনা দিয়েছে। তিনি বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সংসদ নির্বাচনের তফসিল এবং ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভোট হবে, এটা ধরে নিয়ে কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। বাকিটা কমিশন বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে আলোচনা হয়নি। অক্টোবরের শেষে অথবা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার সব প্রস্তুতি রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ডিসেম্বরের শেষার্ধ্বে অথবা জানুয়ারির প্রথম দিকে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ভোটার তালিকার কাজ শেষ হয়েছে। সারা দেশে ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা হয়েছিল। আরো পাঁচ হাজার কেন্দ্র বাড়তে পারে। এগুলোর খসড়া তালিকা জেলা-উপজেলায় প্রকাশ করা হয়েছে। যারা স্টেকহোল্ডার আছে তাদের যদি কোনো আপত্তি থাকে, সে বিষয়ে শুনানি গ্রহণ করা হবে, সেগুলো সরেজমিনে তদন্ত করে তারা নিষ্পত্তি করে ইসির কাছে গেজেট নোটিস পাঠাবে। এ ছাড়া নির্বাচনসামগ্রী কেনার যে বিষয়টি রয়েছে ইতিমধ্যে যারা টেন্ডার জমা দিয়েছে তাদের আমরা কার্যাদেশ দিয়েছি। তারা সহসাই আমাদের মালামালগুলো সরবরাহ করবে।

এবার ঢাকায় বসছে দক্ষিণ এশিয়ার সিইসিদের সম্মেলন

ইসি সচিব বলেন, সার্কভুক্ত ৮টি দেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনারদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ফেম্বোসা (ফোরাম অব ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডিজ অব সাউথ এশিয়া) সম্মেলন আগামী ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন করবেন। তফসিল ঘোষণার আগে এ সম্মেলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে হেলালুদ্দীন বলেন, ‘আয়োজক দেশ হিসেবে আমরা এ সম্মেলনকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছি। যেহেতু সার্কভুক্ত দেশগুলো এখানে অংশ নেবে ফলে আমরা তাদের অভিজ্ঞতাগুলো গ্রহণ করতে পারি। কোন দেশে কীভাবে নির্বাচন হচ্ছে, নির্বাচনের পদ্ধতিগুলো কী, জনগণকে সম্পৃক্ত করে রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করে কীভাবে নির্বাচন করা যায়, সে বিষয়গুলো নিয়ে এখানে আলোচনা হবে।’

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সংলাপ,সংসদ নির্বাচন,রাজনৈতিক ঐক্য,নির্বাচন কমিশন,ইসি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close