জিয়াউদ্দিন রাজু

  ৩০ আগস্ট, ২০২১

মানহীন সুরক্ষাসামগ্রীতে বাজার সয়লাব

প্রায় দুই বছর ধরে মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকার দেশজুড়ে ধাপে ধাপে কয়েকবার লকডাউন দিয়েছে। বর্তমানে সংক্রমণ কিছুটা কমায় এবং দেশের মানুষের জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে লকডাউন তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে করোনা প্রতিরোধে টিকাদান ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এই মহামারি প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দিয়েছেন দেশি-বিদেশি প্রায় সব বিশেষজ্ঞ। ফলে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ফলে নিত্যব্যবহারের তালিকায় এখন জায়গা করে নিয়েছে মাস্ক। সেই সঙ্গে হাত পরিষ্কার রাখতে হ্যান্ড সেনিটাইজারের চাহিদা ব্যাপক। তবে এসব পণ্যের চাহিদা থাকায় সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। তাদের তৈরি মানহীন মাস্ক এবং অকার্যকর স্যানিটাইজারে বাজার এখন সয়লাব। যত্রতত্র এসব সামগ্রী বিক্রি বাড়লেও যেন দেখা কেউ নেই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীতে যত্রতত্র এসব সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। কেউ কেউ রাস্তার পাশে, কেউ ভ্যানে আবার কেউ ঝুড়িতে সার্জিক্যাল মাস্ক, নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভস, ফেস-শিল্ড, সার্জিক্যাল ক্যাপ, পিপিই, সাধারণ মাস্ক বিক্রি করছেন।

কারওয়ান বাজারে ভ্যানে করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, গ্লাভস, গগজ বিক্রি করেন মোশারফ নামে এক ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী। তিনি একটি বাসা থেকে এগুলো সংগ্রহ করেন। তবে ওই বাসার ঠিকানা বলতে নারাজ তিনি। তার কাছে থাকা স্যানিটাইজারগুলো পরিচিত ব্যান্ডের মতো দেখতে। মূল্য গায়ে লেখা থাকলেও দামাদামি করে বিক্রি করেন তিনি। কোনটি কোন কোম্পানির, কী দিয়ে তৈরি তা নিজেও জানেন না আলমগীর নামে আরেক ব্যবসায়ী।

শুধু কারওয়ান বাজারেই নয়, পুরান ঢাকার বাবুবাজার, নাজিরাবাজার, ফার্মগেট, ধানমণ্ডি এলাকায় দেখা যায়, মাস্ক, গ্লাভস, পিপিই ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। এসব পণ্য যে মানহীন, তা দেখলেই বোঝা যায়। একই অবস্থা মার্কেটসহ সব বিপণিবিতানে।

এদিকে, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব মানহীন সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করলে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না, বরং সংক্রমণ আরো বৃদ্ধি পেতে পাবে। কারণ নকল ও মানহীন সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করা, না করা একই বিষয়। বিক্রেতা বা ক্রেতা কেউই জানেন না স্বাস্থ্যসুরক্ষার এই পণ্যগুলো কী দিয়ে তৈরি। বাজারে থাকা মাস্কগুলো ধুলাবালি ও ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ থেকে মানুষকে সুরক্ষা দেবে, তবে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা পাওয়া যাবে না। অস্বাস্থ্যকর মাস্ক পরার কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট ছাড়াও মুখের ত্বক ঘেমে ক্ষত দেখা দিচ্ছে অনেকের। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনাভাইরাস সুরক্ষায় বাড়ির বাইরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করলেও মানসম্মত মাস্কের সংকট রয়েছে বাজারে। ফলে জনসাধারণ বাধ্য হয়ে এসব মানহীন মাস্ক কিনছেন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মতে, এসব পণ্য যথাসম্ভব লাইসেন্সপ্রাপ্ত ফার্মেসিতে বিক্রি হওয়া জরুরি। আর উৎপাদনে নিতে হয় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। কিন্তু স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী কারা বিক্রি করতে পারবেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট বিধিনিষেধ নেই। অসাধু ব্যবসায়ী চক্র এ সুযোগই কাজে লাগাচ্ছে। তাই জনসাধারণের সচেতনতার বিকল্প নেই।

এসব সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার কতটুকু মানসম্মত জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘সুরক্ষাসামগ্রী ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিতে পারে না, বরং এগুলো ব্যবহারে রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। মানসম্মত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ইথান দিয়ে তৈরি হয়। তবে ফুটপাতে যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে তার বেশির ভাগই মিথানল দিয়ে তৈরি হচ্ছে। ইথান স্যানিটাইজারে জীবাণু মরে, তবে মিথানল স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।’

মাস্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মাস্ক সাধারণত তিন স্তরের হলেই মানসম্মত হয়। তবে আমাদের ফুটপাতে খুবই নিম্নমানের মাস্ক জনসাধারণকে দেওয়া হচ্ছে। করোনার মধ্যে এসব মাস্ক ব্যবহার করা উচিত না।’

এই বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেন, ‘মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার অবশ্যই নিয়মকানুন মেনে তৈরি এবং লাইসেন্স করা স্থানে বিক্রি করা উচিত। না হলে জনজীবন ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।’

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
করোনাভাইরাস,সংক্রমণ,স্বাস্থ্য
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close