হিমেল আহমেদ, শিক্ষার্থী

  ১৯ জুন, ২০১৯

আমি ও আমার স্কুল নিয়ে কিছু স্মৃতি

বাস থামতেই ঘুম ভেঙে গেলো। একি! আমি বাসে ঘুমুচ্ছিলাম। আর আমার পাশের সিটে বসা আমার বন্ধু রাশেদও ঘুমুচ্ছে, তাও আবার আমার কাঁধে ভর দিয়ে! ধাক্কা দিয়ে তার ঘুম ভেঙে দিলাম। ঘুম ভাঙতেই রাশেদ বলে উঠল- আমরা কি কক্সবাজার চলে এসেছি? আমি বললাম, আরে নাহ! কেবল হয়ত অর্ধেক রাস্তা এসেছি। কিন্তু সজোরে হটাৎ বাস থামল কেন ভাবছি। রাশেদ বলল, বাসে হয়ত কোনও সমস্যা হয়েছে তাই বাস থেমেছে। বাসে থাকা সব যাত্রীর একই সুর। বাস থামানো হলো কেন? পরে জানা গেল টায়ার পাংচার হয়েছে! ঘণ্টাখানেক তো সময় লাগবেই।

রাশেদ বলল, কোন জায়গায় আমরা এখন? প্রায় সবাই বাস থেকে নেমে হাঁটাহাঁটি করছে। আমরাও বাস থেকে নেমে পড়লাম। আশপাশে চোখ তাকাতেই অবাক হলাম। আমি বললাম, আমি এই জায়গাটা চিনি। খুব আপন লাগছে আমার কাছে এই এলাকাটা। রাশেদ ধমক দিয়ে বলল, কি যা তা বলছিস! তুই কি আগেও এখানে এসেছিস? বিশ্ব রোডের একপাশে বাস দাঁড় করানো আমাদের। বাস হেলপাররা বাস মেরামতের চেষ্টা করছে। বিশ্বরোডের পাশ দিয়ে একটা পাকা রাস্তা ঢুকে গেছে একটি গ্রামে। আমি রাশেদকে বললাম, চল এই গ্রামটা ঘুরে আসি। এটা নিশ্চয় আমার ছোটবেলার সেই গ্রাম। আমি এই গ্রামের স্কুলে ক্লাস থ্রি পর্যন্ত পড়েছি। আমি ১০০% সিওর এটা আমার সেই গ্রাম। রাশেদ প্রথমে বিশ্বাস করতে চাইল না। ভাবছে আমি হয়ত ঠাট্টা করছি। পরে রাশেদকে সাথে নিয়ে আমি গ্রামের ভিতর হাঁটতে লাগলাম। সব কিছু বদলে গেছে। বড় আম গাছটা নেই। যেখানে দোলনা ছিল। তবে বড় পুকুরটা এখনো আছে। ছোট বেলায় যেখানে গোসল করতাম। একটু দূরে যেতেই দেখলাম আমার স্কুলটাও আছে। তবে অনেক উন্নত হয়েছে। আমি সোজা স্কুলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। রাশেদকে আগেই স্কুলের নাম বলে দিয়েছিলাম তাই রাশেদও অবাক হল। অতীতে এটা আমাদের গ্রাম ছিল। আমি যখন মার কোলে তখনই দাদা-দাদি মারা যান। বাবা চাকরি পেয়ে সব বিক্রি করে অন্য জেলায় চলে আসেন। বাবার আত্মীয়-স্বজনরাও ক্রমান্বয়ে এই গ্রাম ছেড়ে যে যার মত বাসস্থান খুঁজে নিয়েছেন। তার পর আর কখনো এই পথে আসা হয়নি। আজ এভাবে আসব কখনো ভাবিনি। বিশেষ করে আমার ছোট বেলার স্কুল। যাকে আমি খুবই মিস করতাম।

সময় তখন সকাল ১১ টা। স্কুলে ক্লাস চলছে। আমি আর রাশেদ স্কুলের ভিতরে প্রবেশ করলাম। একজন শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন। ওই শিক্ষককে দেখে আমার চেনার বাকি রইল না যে তিনি আমার ছোটবেলার বন্ধু, খেলার সাথি তন্ময়! তন্ময় একটুকুও পাল্টায়নি! আমি বলেই ফেললাম তন্ময়! তন্ময় কিছুটা অবাক হয়ে ভাবল কিছুক্ষণ। তার পর ঠিকই চিনে নিল আমায়। দুই জন কোলাকুলি করলাম। আমাদের আনন্দে চোখে পানি চলে এল। এত বছর পর দুই জন পরস্পরকে দেখে অবাক হলাম। আবার খুশিও হলাম। অনেক স্মৃতি আছে আমাদের এই স্কুলকে ঘিরে। আমরা দুই বন্ধু এই স্কুলের ছাত্র ছিলাম। তন্ময় আজ নিজেই এই স্কুলের শিক্ষক। একসাথে স্কুলে আসা যাওয়া। স্কুলের পাশের মাঠে একসাথে খেলা, গাছ থেকে বড়ই পেরে খাওয়া, একসাথে পুকুরে গোসল করাসহ অসংখ্য স্মৃতি যেন টিভির পর্দার মত চোখের সামনে ভেসে উঠল। সত্যি কথা বলতে আমি চোখে অশ্রু থামাতে পারিনি। সে তার বাসায় যাওয়ার জন্য অনুরোধ করল। সময় কম হওয়ার কারণে যাওয়া হলো না। পরস্পর যোগাযোগ নাম্বার আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডি আদান প্রদান করলাম। আমরা কলেজ থেকে ট্যুরে কক্সবাজার যাচ্ছি। মধ্য রাস্তায় বাস নস্ট হওয়াটাও বুঝি বিধাতার ইচ্ছা ছিল। আমি যেন ফিরতে পারি আমার শৈশবে। দেখতে পারি আমার স্কুল আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তন্ময়কে। ইতোমধ্যে একজন ফোন করে জানিয়ে দিল বাস ঠিক হয়েছে। বাস পুনরায় রওনা দিবে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। তন্ময়ের কাছ থেকে বিদায় নিতে কষ্ট হচ্ছিল। ব্যস্ত এই জীবনে আবার কবে যে স্কুল দেখতে আসা হবে! তবে হ্যাঁ, অনেক গুলো ছবি তুলে নিয়েছি আমার মোবাইল ফোনে। যেগুলো আমার কাছে আমার জীবনের রিকালেক্সন হয়ে আজীবন থাকবে।

পিডিএসও/রি.মা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আমি,আমার স্কুল,স্মৃতি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close