মতিউর রহমান মুন্না, গ্রিস থেকে

  ২৩ আগস্ট, ২০২২

গ্রিসে অনেক বাংলাদেশির কাছেই নেই পাসপোর্ট 

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

গ্রিসে পাসপোর্ট জটিলতায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে অনেক বাংলাদেশির ভবিষ্যৎ। রেমিট্যান্স যোদ্ধারা ইউরোপে বৈধ হতে পাসপোর্টের ভুল তথ্যের কারণে পড়ছেন নানা বিড়ম্বনায়। এমনকি অনেকেই অবৈধ পথে এনালগ পাসপোর্ট নিয়ে গ্রিসে প্রবেশ করেছেন কিন্তু তাদের কাছে বর্তমানে নেই কোনো পাসপোর্ট। নতুন করে পাসপোর্ট করার সুযোগও পাচ্ছেন না তারা। এমন সমস্যা প্রতিকারের আশায় দৌড়ঝাঁপ করে সদুত্তর না পেয়ে অনেকটা হতাশায় ভুগছেন।

গ্রিসে বর্তমানে ৩০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি বসবাস করেন। কিন্তু এদের মধ্যে সিংহভাগই অনিয়মিত। নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র। এমনকি অনেক প্রবাসীই আছেন যাদের ইউরোপে বৈধতা তো দূরের কথা, নেই নিজ দেশের পাসপোর্টও। কারণ, ৮ থেকে ১০ বছর আগে বিভিন্ন অবৈধপথে গ্রিসে প্রবেশ করেছেন- এমন বহু বাংলাদেশি রয়েছেন।

এদিকে নানা জল্পনা-কল্পনার পর বাংলাদেশ ও গ্রিসের সমঝোতা চুক্তিটি গ্রিক সংসদে অনুমোদন হয়েছে। এর ফলে প্রতি বছরে চার হাজার করে কর্মী মৌসুমি কর্মভিসা নেওয়ার পাশাপাশি গ্রিসে অবস্থানরত অবৈধ ১৫ হাজার অভিবাসীকেও বৈধতা দেওয়া হবে। অনিয়মিত বাংলাদেশিদের নিয়মিতকরণ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস এথেন্স কর্তৃক আরেকটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নিয়মিত হওয়ার জন্য দুই বছরের বেশি মেয়াদসম্পন্ন পাসপোর্ট ও দূতাবাস থেকে পাসপোর্টের সত্যায়িত কপি লাগবে। কিন্তু যাদের পাসপোর্ট নেই তারা এখন মহাবিপদে পড়েছেন। এ নিয়ে অনেকেই হতাশায় ভুগছেন।

এদেরই একজন গ্রিস প্রবাসী সিলেটের বাসিন্দা অজুদ মিয়া জানান, প্রায় ১০ বছর আগে ইরান-তুরস্ক হয়ে গ্রিসে প্রবেশ করেন। তখন বাংলাদেশে এনালগ পাসপোর্টের যুগ ছিল। সেই হাতের লেখা পাসপোর্ট নিয়েই বিদেশে পাড়ি জমান। তিনি গ্রিসে প্রবেশের সময় দালালের নির্দেশে সীমান্তে এনালগ পাসপোর্টটিও ফেলে দেন। শূন্য অবস্থায় প্রবেশ করেন গ্রিসে। দেশ থেকে ধার-দেনা করে গেছেন বিদেশে। সেগুলো পরিশোধ করার চাপও আছে। তাই তিনি গ্রিসে গিয়েই চলে যান কৃষি কাজের সুযোগের জায়গা মানলোদা নামক স্থানে। সেখানে কৃষি কাজ করে কিছু টাকা নিজের খরচের জন্য রেখে বাকি টাকা পাঠিয়ে দেন দেশে। এভাবেই অবৈধ অবস্থায় কেটে যায় কয়েক বছর। এরপর অজুদ মিয়া সেখানে বসবাসের অনুমতি নিতে চান। বৈধভাবে বসবাস করতে চান। কিন্তু তার পাসপোর্ট নেই। দূতাবাসে গেলে কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ থেকে নতুন পাসপোর্ট আবেদন গ্রহণের নির্দেশনা এলে আবেদন নেওয়া হবে। অবশেষে ২০২১ সালে আসে নতুন করে পাসপোর্ট তৈরি করার সুযোগ। তিনিও বারবার চেষ্টা করে দূতাবাসে গিয়ে নির্ধারিত ফি ও সব দলিলসহ আবেদন করেন। এরপর অপেক্ষার পালা। মাসের পর মাস চলে যাচ্ছে কিন্তু পাসপোর্ট মিলছে না। দূতাবাসে গেলে কর্মকর্তারা জানান পাসপোর্ট ঢাকায় আটক আছে তাদের কিছু করার নেই।

বর্তমানে বৈধ হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে কিন্তু পাসপোর্ট না পেলে এ সুযোগ হারানোর আশঙ্কায় আছেন অজুদ মিয়া। তিনি জানান, তার মতো অনেক মানুষ পাসপোর্ট নিয়ে সমস্যায় ভুগছেন।

তাদেরই আরেকজন মোহাম্মদ পাভেল। তিনি জানান, ‘দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর গত বছরের ডিসেম্বর মাসে তিনি দূতাবাসে গিয়ে আবেদন জমা করে আঙুলের ছাপ দিয়ে আসেন। তখন তাকে বলা হয়েছিল ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন। কিন্তু একে একে প্রায় ৯ মাস কেটে গেল কিন্তু পাসপোর্টের হদিস নেই। পাসপোর্ট না থাকার কারণে তিনি বৈধ হতে পারছেন না।’

এ ব্যাপারে গ্রিসে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ বলেন, ঢাকায় যাদের পাসপোর্ট আটকে আছে তা হয়ে গেলে সবাই বৈধ হতে পারবেন- এই মর্মে পাসপোর্ট অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। গ্রিস প্রবাসী বাংলাদেশিদের যাদের পাসপোর্টে বিভিন্ন সমস্যা সংশোধনের আবেদন করা হয়েছে শুধু তাদের এই আবেদনগুলো দেখার জন্য পাসপোর্ট অধিদপ্তরে যাতে একজন কর্মকর্তা নিযুক্ত করে দায়িত্ব দেয়া হয় সেই প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে গ্রিস দূতাবাস থেকে।

গ্রিসে অনিয়মিতভাবে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়মিতকরণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরতে গত ১৮ আগস্ট এক ব্রিফিং ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ দূতাবাস। এসময় অর্ধশতাধিক পাসপোর্ট সংক্রান্ত সমস্যার ভুক্তভোগী উপস্থিত হয়ে তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
গ্রিস,পাসপোর্ট
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close