reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২২ জুলাই, ২০১৭

বারবার পাহাড় ধস কেন হয়?

দেশে পাহাড় ধসে প্রাণহানিকে আর্থসামাজিক, পরিবেশগত এবং রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করছেন একজন বিশেষজ্ঞ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল এবং পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম পাহাড় ধসের কারণ নির্ণয়বিষয়ক সম্প্রতি গঠিত কারিগরি কমিটির একজন সদস্য এবং এরআগে ২০০৭ সালেও একইধরনের একটি কমিটির হয়ে তিনি এ নিয়ে গবেষণা করেছিলেন।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার মাধ্যমেই এর সমাধান করতে হবে। গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি পাহাড় ধসের কারণ হিসেবে তিনটি বিষয় উল্লেখ করেন। বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়গুলো বালুময় পাহাড় এবং এসব পাহাড়ের ভেতরে অনেক ফাটল থাকায় অতিবৃষ্টির ফলে প্রাকৃতিকভাবেই পাহাড়ের ফাটলে পানি ঢুকে ধস হতে পারে।

দ্বিতীয় কারণটি মানবসৃষ্ট। অবৈধভাবে প্রচুর পরিমাণ পাহাড় কাটার ফলে পাহাড় ধস হচ্ছে এবং পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী অনেকে মারা যাচ্ছেন। সর্বশেষ শুক্রবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পাহাড় ধসে পড়ে তিন শিশুসহ ৫ জন নিহত হয়। টানা বর্ষণের ফলে দুর্গম বেশ দুর্গম একটি এলাকায় পাহাড় কেটে বানানো কয়েকটি টিনের তৈরি ঘরের ওপর মাটি ধসে পড়ে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। তবে যেসব জায়গায় বসতি নেই সেখানেও পাহাড় ধস হচ্ছে। গত ১৩ জুন আমরা দেখলাম, যেসব জায়গায় লোকবসতি নেই সেখানেও ভূমি ধস হচ্ছে। যদিও সেসব জায়গায় কেউ মারা যায়নি।

অধ্যাপক ইসলাম বলেন, পাহাড়ের বনে গাছ কেটে বন উজাড় করার কারণে এবং পাহাড়ের প্রচলিত কৃষি ব্যবস্থা জুম চাষের পরিবর্তে লাঙল-কোদালের চাষ করার ফলে ধস বাড়ছে। তিনি বলেন, ২০০৭ সালের বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদন এবং এর দশ বছর পর ২০১৭ সালেও পাহাড় ধসের পেছনে এসব কারণই উঠে এসেছে।

পার্বত্য জেলা রাঙামাটি এবং চট্টগ্রাম এলাকায় গত জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঘটে যাওয়া পাহাড়ধসে মারা গিয়েছিল দেড়শরও বেশি মানুষ। সেই ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকে এখনো রয়েছেন অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে। কিন্তু পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো থেকে মানুষকে সরানো যায় না কেন? অধ্যাপক ইসলামের মতে, এর পুরো কারণটিই আর্থসামাজিক।

ছিন্নমূল এসব মানুষদের কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় তারা কম খরচে এসব ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাতেই বসবাস করছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্থানীয় এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে এ ঘরগুলো তৈরি করেন। যেহেতু এটার সাথে একটি গভীর আর্থসামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রসেস জড়িত, সেজন্যে চাইলেও তাদের সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া যাচ্ছে না।

পার্বত্য জেলাগুলো, চট্টগ্রাম জেলা, এমনকি শহরেও পাহাড় ঘেষে তৈরি করা অনেক বসতি রয়েছে ঝুঁকিতে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান বলছেন, তারা ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদের কাজ শুরু করেছেন এবং তারা জরিপ চালিয়ে দেখেছেন এসব বসতির অধিকাংশই অবৈধ। তবে তিনিও বলেন, ঝুঁকির কারণে অনেকে সাময়িকভাবে এসব জায়গা থেকে সরে গেলেও ফিরে এসে আবার সেখানেই বসতি করেন।

এরআগেও অনেকবার পাহাড়ধসের ঘটনার পর উচ্ছেদসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এধরণের ঘটনা ঘটে চলছে প্রায় প্রতিবছর। একদিকে পাহাড় কেটে চলছে বসতি নির্মাণ এবং অপরদিকে পাহাড়ধসে মানুষের মৃত্যু। অধ্যাপক ইসলাম বলেন, বড় সংখ্যায় হতাহতের ঘটনা ঘটলেই নীতিনির্ধারণ পর্যায়ে নড়াচড়া হয়, কিন্তু পরে অনেকক্ষেত্রেই তা স্তিমিত হয়ে যায়।

২০০৭ সালে পাহাড় ধসে ১২৭ জনের মৃত্যুর পর এ নিয়ে সরকারিভাবে নানা উদ্যোগের কথা বলা হয়েছিল। এরপরের বছরগুলোতে পাহাড় ধস হয়েছে, কিন্তু মৃত্যুর পরিমাণ ছিল কম। ফলে বিষয়টিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় খুব একটা গুরুত্ব দেয়া হয়নি। পাহাড় রক্ষা এবং ঝুঁকিতে থাকা এসব মানুষদের বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে বর্তমান কমিটিটি কাজ করছে ত্রাণ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে ।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ বলেন, এই কমিটির বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদন চূড়ান্ত হবার পর স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী তিন ধাপে তারা এ নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা করেছেন। যার মধ্যে কিছু পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও থাকতে পারে।

পিডিএসও/হেলাল​

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পাহাড় ধস,ড. শহীদুল ইসলাম,পাহাড় কাটা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist