শেখ নজরুল ইসলাম

  ২৬ আগস্ট, ২০২১

মন্তব্য প্রতিবেদন

ভালোটা নিজেকেই বুঝতে হবে

কথায় বলে নিজের ভালো পাগলেও বোঝে। তবে সব সময় তার প্রতিফলন দেখা যায় না। তবে আমরা যারা পাগল নই, তাদের ব্যাপারে বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। সমাজের ভালো-মন্দ বোঝার পরও অনেক সময় নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করে থাকি। এর প্রমাণও আছে অনেক।

বিশ্বের সঙ্গে দেশেও সমানতালে চোখ রাঙিয়ে চলছে মহামারি করোনা। সরকারের পক্ষ থেকে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর লকডাউনের মতো ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। আবার দেশের মানুষের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি চিন্তা করে সেই লকডাউন উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। লকডাউন উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে মূলত মানুষের রুটি-রুজির জন্য, কিন্তু করোনার প্রকোপ এখনো কাটেনি। সবদিক বিবেচনায় রেখে মানুষের যে সাবধানতা নেওয়া দরকার ছিল, তা কিন্তু নেওয়া হয়নি।

সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ডেঙ্গু। স্বাস্থ্য খাতের হিসাব মতে, এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৮ হাজার ৮৫৩ জন। আর এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৪০ জনেরও বেশি। যার বেশির ভাগ শিশু। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। শুধু রাজধানীই নয়, ডেঙ্গুর থাবা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

বলা চলে, এ সময় আমাদের দেশে ডেঙ্গুর প্রভাব দেখা দেয়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর একটু আগেভাগেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে, পরিমাণ একটু বেশিই। থেমে থেমে নামছে বাদলধারা। ফলে যেখানে-সেখানে পানি জমছে। অন্যদিকে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এতে করে এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে না। তাই এসব স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন হচ্ছে। আর মশার প্রকোপে বাড়ছে ডেঙ্গু।

শুরু থেকেই তাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স দেখিয়ে আসছে। প্রায়শই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এডিস মশার বিস্তার রোধে নানা প্রচার-প্রচারণা চলছে। সাবধান করার সঙ্গে সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে করা হচ্ছে জরিমানাও। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, ছাদবাগান বা ফুলের টবে নিয়মিত পানি অপসারণ করতে। তা সম্ভব না হলে মশার কীটনাশক বা কেরোসিনের তেল ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সব কিছুর মূলে রয়েছে করোনা। ১৮ মাস ধরে দেশে করোনার থাবায় স্বাস্থ্য খাত অনেকটা ভারাক্রান্ত। তার ওপর নতুন করে ডেঙ্গুর প্রভাব এই খাতের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করেছে। করোনার কারণে হাসপাতালে এমনিতেই রোগীকে জায়গা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এরপর নতুন করে নতুন রোগ এবং রোগীর সংযোজন। তাই এ মুহূর্তে সাবধানতাই একমাত্র ভরসা।

নানা সীমাবদ্ধতার পরও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশন তাদের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে কে শোনে কার কথা! আমাদের ঘরবাড়ি ও তার চারপাশে যেসব উপকরণ মশা তৈরির জন্য সহায়ক, তা সরিয়ে ফেলতে না পারলে বিপদ বাড়বে। মনে রাখতে হবে, শুধু এই বর্ষাকালের তিন মাস বিশেষ সচেতনতার মাঝে পার করা। সে কাজে সচেষ্ট থাকতে হবে। তা না হলে এক দিন দেখতে পাব, নিজের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মেরে নিজেকে ধ্বংস করার কাজ সম্পন্ন করেছি।

প্রতিটি মৃত্যুই দুঃখজনক, ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এই রোগে যাতে আর কেউ মারা না যায়, সেটাই সবার কাম্য। মশক নিধনে এর আগে একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান কীটনাশক আমদানি করত, সেই ধারা ভেঙে কীটনাশক আমদানির জন্য এখন অনেকেই সুযোগ পাচ্ছেন। প্রয়োজনীয় স্থানে তা ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে সবার আগে প্রয়োজন সাবধানতার মার নেই। কেননা, সরকার যতই ব্যবস্থা নেক না কেন- এ বিষয়ে নিজেদের সাবধানতাই পারে সমাজকে বাঁচাতে। পরিবেশ ঠিক থাকলে সুস্থ থাকবে সমাজ। আর সেই সমাজের ওপর ভর করেই দাঁড়াবে রাষ্ট্র।

মনে রাখতে হবে, হাসপাতালের একটি সিটের জন্য ছোটাছুটি অনেক কষ্ট এবং সময়ক্ষেপণের ব্যাপার। তার পরও নিশ্চয়তা কম। চিকিৎসাও ব্যয়বহুল। তাই সময় থাকতেই নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদেরই নিশ্চিত করতে হবে- এটাই হোক আজকের শপথ।

লেখক : সম্পাদক, প্রতিদিনের সংবাদ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close