প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৯

ফিরে দেখা ২০১৯ : দাবানলের বছর

২০১৯ সালে পৃথিবীর নানা প্রান্ত আক্রান্ত হয়েছে দাবানলে। কখনো তীব্র গরমে জ্বলেছে আগুন, কখনো অভিযোগ উঠেছে নাশকতার। কিন্তু কারণ যা-ই হোক, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য, ঘটেছে প্রাণহানি।

জ্বলেছে পৃথিবীর ফুসফুস : কয়েক সপ্তাহ ধরে আগুন জ্বলে বিশ্বের বৃহত্তম রেইনফরেস্ট আমাজনে। গ্রহের ২০ শতাংশ অক্সিজেন একাই উৎপাদন করে এ বন। ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ উপগ্রহ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে জানায়, চলতি বছর ব্রাজিলজুড়ে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৫ শতাংশ বেশি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। বেশির ভাগই ঘটেছে আমাজন অঞ্চলে। ফসল ফলানোর জন্য কৃষকরাই বন সাফ করছেন, এমন অভিযোগও উঠেছে।

হুমকিতে জীববৈচিত্র্য : ব্রাজিলে এ বছর শুধু আমাজনেই আগুন লাগেনি। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের কেরাডো তৃণভূমিতে আগুন লাগার ঘটনা আরো বেশি। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এ অঞ্চলটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকাতেও রয়েছে। তৃণভূমির অর্ধেকের বেশি সবুজ এলাকা এরই মধ্যে ধ্বংস হয়েছে।

ওরাংওটাং : ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা ও বোর্নিওতে ৪০ হাজার হেক্টরেরও বেশি এলাকাজুড়ে মাসখানেক ধরে আগুন জ্বলেছে। এরই মধ্যে অস্তিত্বের হুমকিতে থাকা অনেক ওরাংওটাং এসব দাবানলে প্রাণ হারিয়েছে। যারা প্রাণে বেঁচেছে, তারাও হারিয়েছে পর্যাপ্ত বাসস্থান। এসব এলাকায় মাটির নিচে গাছের শক্ত শেকড় থাকায় আগুন নেভানোও বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। গবেষকরা বলছেন, এই আগুনে ৭০ কোটি টন কার্বন-ডাইঅক্সাইড যুক্ত হয়েছে পরিবেশে।

পুড়ে শেষ ক্রান্তীয় জলাভূমি : বিশ্বের বৃহত্তম গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলাভূমি, প্যান্টানালও এ বছর দাবানলের শিকার হয়েছে। প্যান্টানাল জলাভূমির বেশির ভাগ অংশই ব্রাজিলে অবস্থিত। তবে বলিভিয়া এবং প্যারাগুয়েতেও এর কিছু অংশ রয়েছে। এই বছরের আগুনের ঘটনার সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। আট হাজার দাবানলের খবর মিলেছে এই এলাকায়। বলিভিয়াতেই ধ্বংস হয়েছে প্রায় ১২ লাখ হেক্টর বন। এ ঘটনাকে দেশটির ইতিহাসের বৃহত্তম জীববিপর্যয় বলে অভিহিত করেন বিজ্ঞানীরা।

ক্যালিফোর্নিয়ার বুশফায়ার : এ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যজুড়ে ছড়ায় বুশফায়ার। প্রচন্ড গরমে শুষ্ক আবহাওয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আগুন। মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা অগ্নিকুন্ডে পরিণত হয়, ধ্বংস হয় ঘরবাড়ি। আগুনে মারা যান তিনজন। কয়েক হাজার মানুষ এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন।

আর্কটিকেও আগুন : বরফে আচ্ছাদিত আর্কটিক সার্কেলেও এ বছর আগুন লেগেছে। সাইবেরিয়াতে তিন মাস ধরে শত শত দাবানলে ৪০ লাখ হেক্টর বনভূমি পুড়ে গেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে রাশিয়াকে সেনা মোতায়েন পর্যন্ত করতে হয়। আলাস্কাতে ৪০০-এরও বেশি আগুনের ঘটনা ঘটেছে। দাবানল ছড়িয়েছে ক্যানাডা এবং গ্রিনল্যান্ডেও।

বুশফায়ারে নিহত হাজারো কোয়ালা : অস্ট্রেলিয়ায় এ বছর নজিরবিহীন বুশফায়ারের ঘটনা ঘটে। খরা, শুকনো তাপমাত্রা এবং শুকনো বাতাসে ১০ লাখ হেক্টরের বেশি আলাকাজুড়ে আগুন জ্বলে। এতে চারজন মানুষের পাশাপাশি প্রাণহানি ঘটে অন্তত এক হাজার কোয়ালার। কোয়ালাকে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা একটি প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ বছর এমন ঝুঁকিতে থাকা প্রাণীগুলোই দাবানলের ঘটনায় আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সূত্র : ডয়েচে ভেলে

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
দাবানল,বিশ্বজুড়ে দাবানল,অ্যামাজন বন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close