লালমনিরহাট প্রতিনিধি

  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

ঘুষের চালেও মেলেনি বিদ্যুৎ সংযোগ!

চাহিদামত ৫ হাজার টাকা ও ৩ কেজি চাল ঘুষ দিয়েও বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার(ইউএনও) কাছে অভিযোগ করেছেন গ্রামের ৩৫ পরিবার।

অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দীঘলটারী আজিজুলের পাড়া গ্রামে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়াসহ কৃষিকাজে সেচ সুবিধা বঞ্চিত এ গ্রামটির প্রায় অর্ধশত পরিবার। প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেয়া সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোনও উদ্যোগ ছিল না অবহেলিত এ গ্রামটিতে। গ্রামে রয়েছে শঠিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এমন কি ইউনিয়ন ভূমি অফিসটিও এই গ্রামে অবস্থিত।

গত দুই বছর আগে এ গ্রামের বাসিন্দা শাহানতুল্লার ছেলে তাহাজ্জল হোসেন গ্রামের সাধারণ মানুষকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নাম করে প্রতিটি মিটার প্রতি ৫ হাজার টাকা দাবি করেন। চাহিদামত টাকা দিলে দ্রুত বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে অন্ধকারে নিমজ্জিত এ গ্রামে। পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ পেতে গ্রামবাসী সকলেই ৫ হাজার টাকা করে তাহাজ্জলকে জমা দেন। এর কিছুদিন পর বিদ্যুতের খুঁটি ও তার পৌঁছে যায়। শুরু হয় বিদ্যুৎ সংযোগ কাজ।

বিদ্যুৎ খুঁটি বসানো ও তার সাঁটানোর শ্রমিকদের খাওয়ানোর জন্য মিটার/ পরিবার প্রতি তাহাজ্জল হোসেন আদায় করেন ৩ কেজি চাল ও ৫০ টাকা। এরই মাঝে খুঁটি ও তার সাঁটানো শেষ হলে নতুন করে বায়না ধরেন বিদ্যুৎ অফিসের দালাল তাহাজ্জল হোসেন। বিদ্যুৎ সংযোগ কাজ সমাপ্ত করতে প্রতি মিটারে আরো ৩হাজার টাকা দাবি করেন। এ দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সংযোগ দেয়া হবে না বলে হুমকি দেন তাহাজ্জল হোসেন।

গ্রামবাসী বিষয়টি নিয়ে বাহিরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে এত টাকা লাগে না। ফলে তারা নিরুপায় হয়ে তাহাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মতিয়ার রহমান ও দিনমজুর এন্তাজ আলী বলেন, জমিতে সেচ ও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে কষ্ট করে হলেও ৫ হাজার ৫০ টাকা ও ৩ কেজি চাল দিয়েছি। এখন মধ্যপথে এসে তাহাজ্জল আরও ৩হাজার টাকা দাবি করছেন। না দিলে সংযোগ না দিয়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও তার খুলে নেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। তারা উদ্ধতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

শুধু দীঘলটারী গ্রামে নয়। লালমনিরহাটের প্রতিটি বিদ্যুৎ সংযোগে ৪-৮ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছেন দালালরা। দালালদের দাবি টাকা ছাড়া মিটার পাস করা হয় না। এমনকি ঠিকাদার অতিরিক্ত টাকা না পেলে খুঁটি ও তার সাঁটানোর কাজ করেন না। তাই বাধ্য হয়ে তারা গ্রাহকদের কাছে টাকা আদায় করে ঠিকাদার ও অফিসকে ম্যানেজ করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার ব্যবস্থা করেন। দেশের সকল বিভাগের ঠিকাদার টাকা ঘুষ দিয়ে কাজ করেন। কিন্তু ব্যাতিক্রম শুধু বিদ্যুতের ঠিকাদারকে ঘুষ দিয়ে কাজ করে নিতে হয় বলে দাবি করেন তারা।

বিদ্যুত অফিসের দালাল তাহাজ্জল হোসেন বলেন, গ্রাহকরা যে টাকা দিয়েছেন তার কাজ করে দেয়া হয়েছে। কারো টাকা আমি আত্নসাৎ করিনি। বাকী কাজ করতে আরও টাকা লাগবে তাই চাওয়া হয়েছে। তবে টাকা কি কাজে লাগে তার কোনও সদুত্তর তিনি দেননি।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আদিতমারী উপজেলা সাব-স্টেশনের সহকারী জোনাল ম্যানেজার শফিউল আলম বলেেন, শতভাগ ফ্রিতে বিদ্যুতের খুঁটি ও তার পৌঁছানো হচ্ছে। এরপর সদস্য ভর্তি ফি ৫০ টাকা ও মিটার ফি ৪শত টাকায় বাড়িতে সংযোগ দেয়া হচ্ছে। এর অতিরিক্ত নেয়ার কোন ও নিয়ম নেই। অতিরিক্ত নেয়ার অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। দালাল ও প্রতারকদের বিষয়ে জনগনকে সচেতন করতে ইউপি চেয়ারম্যানদের পক্ষ থেকে মাইকিং করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

পিডিএসও/রি.মা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আদিতমারী,বিদ্যুৎ,ঘুষ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close