নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৩ এপ্রিল, ২০১৮

রেমিট্যান্সের প্রবাহে জোয়ার

২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে বাংলাদেশে আসা রেমিট্যান্স কম ছিল। কিন্তু আবার রেমিট্যান্সের প্রবাহে এসেছে জোয়ার। গত মার্চ মাসে ১৩০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবাসী আয় বাবদ ১৭ শতাংশ বেশি বিদেশি মুদ্রা জমা পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে।

ওই ৯ মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১ হাজার ৭৬ কোটি ১৩ লাখ ডলার। রেমিট্যান্স বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও রয়েছে সন্তোষজনক অবস্থায়। সোমবার দিনের শুরুতে রিজার্ভে ছিল ৩২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থবছর শেষে এই পরিমাণ ১৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করছেন গভর্নর ফজলে কবির।

আর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মনে করছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি, স্থানীয় বাজারে ডলারের তেজিভাব এবং হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানামুখি পদক্ষেপের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহের এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে।

বিদেশে বাংলাদেশের জনশক্তির বড় অংশই আছে তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে। কয়েক বছর আগে জ্বালানি তেলের দর পড়ে যাওয়ার পর রেমিট্যান্স কমার পেছনে একে কারণ হিসেবে দেখাচ্ছিলেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল এখন ৬৫ থেকে ৭০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এই সময়ে এর দর ছিল ৪০ ডলারের কিছু বেশি।

অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ প্রবাসী আয় আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। তেলের মূল্য হ্রাস এবং অভিবাসী কর্মীদের বিষয়ে দেশগুলোর বিভিন্ন নীতিমালা পরিবর্তনের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ আশানুরূপ ছিল না। ‘পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উত্তরণ ঘটছে। তেলের দাম বাড়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হয়েছে। প্রবাসীরা এখন বেশি আয় করছে; যার ফলে বেশি অর্থ দেশে পাঠাতে পারছেন।’

বাংলাদেশের জিডিপিতে ১২ শতাংশ অবদান রাখে প্রবাসীদের পাঠানো এই বিদেশি মুদ্রা। দেশের রেমিট্যান্সের অর্ধেকের বেশি আসে মধ্যপ্রাচ্যের ছয় দেশÑ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত ও বাহরাইন থেকে।

জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধি এবং ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন মুহিত। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে জনশক্তি রফতানি বেড়েছে ২৫ শতাংশের বেশি।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেকর্ড ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ (১৫.৩১ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স বাংলাদেশে আসে। এরপর প্রতি বছরই রেমিট্যান্স কমেছে। এখন রেমিট্যান্স বাড়ার পেছনে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ারও ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, পণ্য আমদানি বাড়ায় বাজারে এখন ডলারের চাহিদা বেশি। সে কারণে ব্যাংকগুলো তাদের নিজেদের প্রয়োজনেই রেমিট্যান্স আনতে অতি বেশি উৎসাহী হয়েছে।

‘বেশি টাকা পাওয়ায় প্রবাসীরাও বৈধ পথে টাকা পাঠাচ্ছেন। কার্ব মার্কেট এবং ব্যাংকে ডলারের দাম এখন সমান। সে কারণেই কোনো ঝুঁকি নেই ভেবে হুন্ডির মাধ্যমে না পাঠিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।’

গত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের ১৫৬ কোটি ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছিল। গত কয়েক দিনে তা ফের ৩২ ডলার ছাড়িয়েছে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রেমিট্যান্স,বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ,বৈদেশিক মুদ্রা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist