নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

নির্বাচনের আগে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি

সরকারের প্রতি বিশ্বব্যাংকের আস্থার বহিঃপ্রকাশ : অর্থমন্ত্রী

নির্বাচনের আগে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের প্রতি বিশ্বব্যাংকের আস্থার বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, বিশ্বব্যাংক আমাদের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী। উচ্চ আর্থিক প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং অন্যান্য খাতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপে আস্থাশীল হয়েই বিশ্বব্যাংক এ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ একক সহায়তা।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার উপস্থিত ছিলেন। গত ১২ ডিসেম্বর রাতে বিশ্বব্যাংকের বোর্ডের বৈঠকে প্রথম ‘কর্মসংস্থান কর্মসূচি ভিত্তিক নীতিকৌশল উন্নয়ন ঋণসহায়তা’ শীর্ষক প্রকল্পের জন্য এ আর্থিক সহায়তা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক আমাদের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী। উচ্চ আর্থিক প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং অন্যান্য খাতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপে আস্থাশীল হয়েই বিশ্বব্যাংক এ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ একক সহায়তা। এর আগে একক কোন খাতে এত বেশি পরিমান আর্থিক সহায়তা দেয়নি। এ সহায়তা বর্তমান সরকারের প্রতি বিশ্বব্যাংকের আস্থার প্রতিফলন হিসেবে আমরা দেখছি।

মুহিত বলেন, আমাদের আর্থিক খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও সে তুলনায় কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি হয়নি। কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে গেছে। এ ছাড়াও আমাদের কর্মজীবীদের দক্ষতারও প্রচুর অভাব রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এ সহায়তা দক্ষ কর্মশক্তি তৈরি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির কাজে লাগানো হবে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, আগে আমাদের কর্মসংস্থান সুযোগ বাড়তো ২ দশমিক ৭ শতাংশ হারে। সেটি এখন কমে ১ দশমিক ৮ শতাংশ হারে বাড়ছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে টেকসই করতে হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিকল্প নেই। বিশ্বব্যাংকের দেওয়া ঋণ ৩০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। এ ঋণের গ্রেস পিরিয়ড থাকবে ৫ বছর আর সুদের হার হবে ২ শতাংশ।

সংবাদ সম্মেলনে অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিশ্বব্যাংকের দেওয়া অর্থ ব্যয় করা হবে। বিনিয়োগ বাড়লেই কর্মসংস্থান বাড়বে। আমাদের দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের বাধা রয়েছে। বিশেষ করে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় লেগে যায়। এসব সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে যে সব বাঁধা রয়েছে সেগুলো দূর করার চেষ্টা করা হবে। বিশ্বব্যাংক বেশ কিছু টার্গেট দিয়েছে, সেগুলো তাদের সঙ্গে বসে সমাধান করা হবে। এছাড়াও সংস্থাটি সুশাসন প্রতিষ্ঠার উপর জোর দিয়েছে। সরকার এসব বিষয়ে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে বলে জানান তিনি।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংকের এ সহায়তা নিয়ে অর্থ বিভাগ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা শাহেদুর রহমানের স্বাক্ষর করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরকার উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের গতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানী-রফতানী সহজীকরণ ও কর্ম পরিবেশ উন্নতকরণে আইনবিধি, নীতি-পদ্ধতি সংস্কার কাজে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে। দ্রুত দারিদ্র্য হ্রাস, আয় বৃদ্ধি ও চলমান জনমিতি লভ্যাংশকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়নে আরো গতি সঞ্চারের জন্য কর্মসংস্থানের যথাযথ প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন।

এতে বলা হয়েছে, আমরা উদ্বেগের সংগে লক্ষ্য করেছি যে, কর্মসংস্থানের সুযোগ অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির হারের চেয়ে কম হয়েছে। শিল্প খাতে কর্মসংস্থানের গতি ত্বরান্বিত ও বহুমুখী করার উদ্দেশ্যে শিল্প ও বাণিজ্য পরিবেশের আধুনিকায়ন, শ্রমিকের সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিক হারে কর্মে প্রবেশের উপযোগী নীতি-কর্মসূচি প্রনয়নের উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাংক ‘কর্মসংস্থান কর্মসূচিভিত্তিক নীতিকৌশল ঋণসহায়তা’ (ঔড়নং চৎড়মৎধসসধঃরপ উবাবষড়ঢ়সবহঃ চড়ষরপু ঈৎবফরঃ) প্রদানে সম্মত হয়েছে। আগামী ৩ বছর মেয়াদে (২০১৯-২০২২) আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা হতে বাংলাদেশ সর্বমোট ৭৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ঋণসহায়তা লাভ করবে যার প্রথম বৎসরের অংশ হিসেবে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ প্রস্তাব বিশ্বব্যাংকের বোর্ডসভায় গত ১২ ডিসেম্বর অনুমোদন লাভ করেছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংক থেকে প্রাপ্ত ঋণের মধ্যে এটি সর্ববৃহৎ একক ঋণ। বাজেট সহায়তা হিসাবে প্রাপ্ত উক্ত অর্থ সরকার যে কোন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে ব্যবহার করতে পারবে।

প্রসঙ্গত, গত প্রায় ১০ বছরে বাংলাদেশে এটি বিশ্বব্যাংকের প্রথম নীতি-কৌশল ঋণ সহায়তা। সরকার কল-কারখানা প্রতিষ্ঠা ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে পুরাতন আইন সংশোধন বা পরিবর্তন করে নুতন আইন, নীতি প্রণয়ন করেছে। ইতোমধ্যে সরকার ওয়ান স্টপ শপ আইন- ২০১৮, শ্রম আইন (সংশোধন)- ২০১৮, ওয়েজ আর্নারর্স ওয়েলফেয়ার বোর্ড আইন- ২০১৮ এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন- ২০১৮ প্রনয়ন করেছে। নতুন কাস্টমস আইন- ২০১৮ মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর জাতীয় সংসদে পেশ করা হয়েছে। শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র আইন- ২০১৮ এবং কোম্পানি আইন (সংশোধন)- ২০১৮ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। জাতীয় পরিবেশ নীতি- ২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে। সরকারি চাকরিজীবীদের পৃথক পেনশন অফিস প্রতিষ্ঠা করে সকল নাগরিকের জন্য একটি সার্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রস্তুতি চলছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিবেশ আধুনিকায়ন, শ্রমিকের অধিকতর সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও সকল শ্রেণির মানুষের কর্মে অধিকতর প্রবেশে বাংলাদেশ সরকার গৃহীত উপরোক্ত আইন, বিধি ও নীতিকৌশল সংস্কারের উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে তা বাস্তবায়নে এ ঋণ অনুমোদন বর্তমান সরকারের প্রতি বিশ্বব্যাংকের আস্থার বহি:প্রকাশ। এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক আরো গভীর হবে বলে সরকার মনে করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close