নিজস্ব প্রতিবেদক
ধনী-দরিদ্রের ক্রমবর্ধমান বৈষম্য বড় দুর্ভাবনার বিষয় : বারকাত
১২ লাখ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব অর্থনীতি সমিতির
১২ লাখ ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। আসছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য এই বাজেট প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের প্রায় তিনগুণ। চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা।
বিশাল এই বাজেটের প্রস্তাব দিয়ে অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আবুল বারকাত বলেছেন, আমাদের প্রস্তাবিত বাজেট যুক্তিসঙ্গত এবং দেশের অন্তর্নিহিত অর্থনৈতিক শক্তির বিচারে যৌক্তিক। এছাড়া দেশে ধনী-দরিদ্রের ক্রমবর্ধমান বৈষম্যকে বড় দুর্ভাবনার বিষয় হিসেবে অবহিত করেছেন তিনি। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বাজেট প্রস্তাবনা ২০১৮-১৯’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রস্তাবনা তুলে ধরেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ। লিখিত বক্তব্যে আবুল বারকাত বলেন, প্রস্তাবিত ১২ লাখ ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বিকল্প বাজেটের অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় হবে ৫ লাখ ১৪ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন খাতে যাবে ৬ লাখ ৬৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব আয় থেকে আসবে ৯ লাখ ৯০ হাজার ৮২০ কোটি টাকা। অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আবুল বারকাত বলেন, দেশে ধনী-দরিদ্রের ক্রমবর্ধমান বৈষম্য বড় দুর্ভাবনার বিষয়। দরিদ্র মানুষের ৮২ শতাংশ গ্রামে বাস করে। গ্রামে ৬০ শতাংশ ভূমিহীন, ৪০ ভাগ খানায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, ৬০ ভাগ মানুষ সরাকারি স্বাস্থ্যসেবা থেকে কার্যত বঞ্চিত। ১০ শতাংশ ধনী মোট সম্পদের প্রায় ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রক।
এত বড় বাজেটের অর্থের উৎস হিসাবে অর্থ পাচার ও কালো টাকা থেকে অর্থ সংগ্রহের প্রস্তাব করে তিনি বলেন, দেশে এখন ৭০-৮০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ পাচার হচ্ছে। বাজেটে এ সমস্যা সমাধানে পদ্ধতিগত নির্দেশনা থাকতে হবে। আমরা অর্থ পাচার রোধ থেকে আগামী অর্থবছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের প্রস্তাব করছি।
তিনি আরো বলেন, দেশে পুঞ্জীভূত কালো টাকার আনুমানিক পরিমাণ হবে ৫ থেকে ৭ লাখ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতে, কালো টাকা দেশের মোট জিডিপির ৪২-৮০ শতাংশ। বিষয়টি বাস্তব সত্য। এটাকে কমানোর জন্য সরকার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে পারে। একটি কার্যকর কমিশন গঠন করতে পারে। আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে ২৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ কালো টাকা উদ্ধারের প্রস্তাব করছি। যদিও কি পদ্ধতিতে এই টাকা উদ্ধার করা হবে সেটা স্পষ্ট করেননি ড. বারকাত। এর বাইরে রাজস্ব আয়ের প্রধান খাত সম্পর্কে তিনি বলেন, খাতগুলো হবে আয় ও মুনাফার ওপর কর, মূল্য সংযোজন কর, লভ্যাংশ ও মুনাফা, জরিমানা-দ-, বাজেয়াপ্তকরণ, সম্পূরক কর, লভ্যাংশ ও মুনাফা, অর্থ পাচার রোধ থেকে প্রাপ্তি, কর ব্যতীত অন্যান্য রাজস্ব ও প্রাপ্তি, কালো টাকা উদ্ধার থেকে প্রাপ্তি, সম্পদ কর, যানবাহন কর, মাদক শুল্ক, ভূমি রাজস্ব।
বাজেটে বরাদ্দ খাতের বিষয়ে শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে সবচেয়ে বেশি ব্যয়, এরপর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, জনপ্রশাসন, পরিবহন ও যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ, কৃষি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, শিল্প ও অর্থনৈতিক সার্ভিস, গৃহায়ন কথা বলা হয়।
"