নিজস্ব প্রতিবেদক
ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বারের সেমিনারে মাতলুব আহমাদ
রফতানির তুলনায় ভারত থেকে ১০ গুণ বেশি পণ্য আমদানি হয়
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এবং ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেছেন, আমাদের দেশ থেকে যে পরিমাণ পণ্য ভারতে রফতানি করা হয় তার চেয়ে ১০ গুণ পণ্য সেদেশ থেকে আমদানি করা হয়। এই সমস্যার সমাধান করতে আমাদের স্থলবন্দরগুলোর সেবার মান আরো উন্নত করতে হবে। কারণ বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি রফতানি করা হয়, তার মাত্র ২ শতাংশ স্থলবন্দর দিয়ে সম্পন্ন হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের চিত্র ভিন্ন। তাই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বাড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘এড্রেসিং ল্যান্ড পোর্ট ইস্যুজ ফর বেটার ইন্দো-বাংলা ট্রেড’ শীর্ষক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। চেম্বারের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের বাংলাদেশ নিযুক্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার আদর্শ সাইকা, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার তারিক করিম, চেম্বারের সহ- সভাপতি শোয়েব চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি দিনব্যাপী এই সেমিনারের আয়োজন করে।
মাতলুব আহমাদ বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি-রফতানি করা হয়, তার মাত্র ২ শতাংশ স্থলবন্দর দিয়ে সম্পন্ন হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের চিত্র ভিন্ন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যতগুলো স্থলবন্দর আছে মাত্র দুইটি স্থলবন্দর ছাড়া বেশিরভাগ স্থলবন্দরের মাল খালাস ব্যবস্থাপনা অনুন্নত বলে জানান তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো উন্নয়নে সরকার যথেষ্ট চেষ্টা করছে। বেনাপোল ও সোনামসজিদসহ দেশের অন্যান্য বন্দরগুলো উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি ভোমরা বন্দরের ব্যাপারে উল্লেখ করেন। ভোমরা বন্দর দ্রুত বেনাপোলের কাছাকাছি সুবিধা দিতে প্রস্তুত হবে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
তিনি আরো বলেন, ২০০৮-০৯ সালে ভারত থেকে বাংলাদেশের আয় ছিল ২৬ দশমিক ৮৬ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সেই আয় বৃদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়েছে ১১১ দশমিক ৭৪ কোটি টাকাতে। এতে বলা যায়, দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধি করার জন্য চেষ্টা চলছে।
শাজাহান খান বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে সব স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ ও আধুনিকীকরণের লক্ষ্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।
স্থল, নৌ ও সমুদ্র বন্দরগুলোর উন্নয়ন এবং গতিশীল করার মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০১ সালে ১২টি স্থল বন্দরের গেজেট করে। এর মধ্যে দুইটি সচল ছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১২টি থেকে ২৩টি স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯টি চালু করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে রফতানির ক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি করা সম্ভব হয়নি। কারণ তাদের চাহিদা কম। কিন্তু পূর্বাঞ্চলে বাংলাদেশি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ভবিষ্যতে ভারতে আরো বেশি পণ্য রফতানি করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।
তারিক করিম বলেন, বাণিজ্য খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তবে ভারতীয় বাজারে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের চাহিদা কম। তাদের প্রধান টার্গেট পশ্চিমা মার্কেট। কিন্তু এই চিন্তা বাদ দিয়ে ভারতের সঙ্গে ব্যবসা সৃষ্টি করলে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নত হবে। তিনি আরো বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন করলে চলবে না। এর সঙ্গে মানবসম্পদ ও ব্যান্ডউইথ উন্নয়নও জরুরি বলে জানান তিনি।
"