বাণিজ্য ডেস্ক

  ৩০ জানুয়ারি, ২০১৮

মোবারকগঞ্জ সুগার মিলে ঘন ঘন ব্রেকডাউন : লোকসানের আশঙ্কা

৫১ কর্মদিবসের মধ্যে উৎপাদন বন্ধ ছিল ১৫ দিন। কমেছে আখ মাড়াই-চিনি উৎপাদনের আনুপাতিক হারও। রয়েছে ৫০ কোটি টাকা লোকসানের আশঙ্কা। এই হলো চলতি আখ মাড়াই মৌসুমে ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের অবস্থা। চিনিকলটির এ করুণ দশার জন্য সংশ্লিষ্টরা মিল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি আর ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রাংশ সেটআপকেই দায়ী করছেন।

চলতি ২০১৭-১৮ আখ মাড়াই মৌসুমে (গেল বছরের ১ ডিসেম্বর শুরু) ৫১ কর্মদিবসের হিসাব অনুযায়ী, মোবারকগঞ্জ সুগার মিলে ৫০ হাজার ১৩৫ টন আখ মাড়াইয়ের মাধ্যমে চিনি উৎপাদন হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৫১ টন। অর্থাৎ সুস্থ আখ থেকে চিনি উৎপাদনের হার মাত্র ৪ শতাংশ। অথচ লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে এ পরিমাণ আখ মাড়াইয়ের মাধ্যমে চিনি উৎপাদনের কথা ৩ হাজার ৮৫১ টন।

শ্রমিক-কর্মচারীরা বলছেন, এখন সুগার মিলের ৫১তম মাড়াই মৌসুম চলছে। এবারই অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। ঘন ঘন ব্রেকডাউন আর চিনি উৎপাদন কম হওয়ায় এবার ৫০ কোটি টাকারও বেশি লোকসান হতে পারে। এর আগে মিলটির প্রায় ৩০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এ ছাড়া চিনি বিক্রি না হওয়ায় শ্রমিক-কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন ও আখচাষিদের প্রায় ১১ কোটি টাকা বাকি রয়েছে।

মিল সূত্র জানিয়েছে, সাধারণত ১০০ কেজি আখ মাড়াই করে ছয় থেকে সাত কেজি চিনি উৎপাদন করা হয়। এ বছর চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। যে পরিমাণ আখ সুগার মিলে মাড়াই হয়েছে, তাতে চিনি উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল ৩ হাজার ৮৫১ টন। চলতি মৌসুমে মোট ৭৮ কার্যদিবসে মিলটিতে প্রায় এক লাখ টন আখ মাড়াইয়ের কথা রয়েছে। তা থেকে প্রায় ৭ হাজার ৫০০ টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে।

মোবারকগঞ্জ সুগার মিলে চিনি উৎপাদনের হার কয়েক মৌসুম ধরেই কমছে। ২০১৪-১৫ মাড়াই মৌসুমে চিনি উৎপাদন হয়েছিল ৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ হারে। মোট উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৫২৬ টন। ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ মাড়াই মৌসুমে চিনি উৎপাদনের হার ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ ও ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এ দুই মৌসুমে মিলটিতে চিনি উৎপাদন হয় যথাক্রমে ৪ হাজার ১২৪ টন ও ৪ হাজার ৬৩৩ টন।

একে একে ৫০টি আখ মাড়াই মৌসুম পার করেছে মোবারকগঞ্জ সুগার মিল। গত ৫০টি মৌসুমে সুগার মিলটি লাভের মুখ দেখেছে মাত্র ১৬ বার। এ ১৬টি মৌসুমে মোট মুনাফার পরিমাণ মাত্র ৩৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে ৩৪টি আখ মাড়াই মৌসুমে লোকসান হয়েছে প্রায় ৩০১ কোটি টাকা। বর্তমানে সুগার মিলের গুদামে ৩ হাজার ৭৭০ টন চিনি অবিক্রীত পড়ে আছে। প্রতি টন চিনি ৬০ হাজার টাকা হিসাবে যার মোট মূল্য ২২ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

শ্রমিকদের গত বছরের নভেম্বর, ডিসেম্বর ও নতুন বছরের জানুয়ারির বেতন বাবদ বাকি রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। মিল কর্তৃপক্ষ চিনি বিক্রি না করতে পারায় ১ জানুয়ারি থেকে আখচাষিদের পাওনাও পরিশোধ করতে পারেনি। আখের মূল্য বাবদ কৃষকদের পাওনা প্রায় ৮ কোটি টাকা।

বেশ কয়েকজন শ্রমিক-কর্মচারী জানান, মিলে গত ৫১ কার্যদিবসের মধ্যে ১৫ দিন ব্রেকডাউন হয়েছে। এ সময় কৃষকদের কাছ থেকে কেনা আখ মাড়াইয়ের অভাবে শুকিয়ে গেছে। আবার মাড়াইকৃত আখের রস নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ফেলে দিতে হয়েছে। কর্তৃপক্ষের অদক্ষতা, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির কারণে মিলের এ করুণ অবস্থা বলে তাদের দাবি।

শ্রমিকদের অভিযোগÑকর্তৃপক্ষের ইচ্ছামতো যন্ত্রাংশ মেরামত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দক্ষ শ্রমিক বা কর্মীদের পরামর্শ নেওয়া হয়নি। কারখানার যন্ত্রাংশ ঠিকমতো সেটআপ না হওয়ায় বারবার ব্রেকডাউন হয়েছে। মিল হাউজের ড্রেন দিয়ে আখের রস বের হয়ে গেছে। এসব কারণে চিনি উৎপাদনের হার একেবারেই কম।

মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্জীব কুমার দত্ত জানান, চিনি উৎপাদনের হার এত কম হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। ঘন ঘন ব্রেকডাউনের কারণে এমনটি হতে পারে। তিনি বলেন, মিলের যন্ত্রাংশগুলো বেশ পুরনো। তবে যন্ত্রাংশ এবার একটু বেশিই নষ্ট হচ্ছে। চলতি মাড়াই মৌসুমে চিনি উৎপাদন হারের লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও পূরণ হবে না বলে তিনি স্বীকার করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist